ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ইতিহাস গড়লেন অজাজ পটেল। বিশ্বের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে এক ইনিংসে দশ উইকেট নিলেন তিনি।
জিম লেকার এবং অনিল কুম্বলের পর এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন অজাজ। ২২ বছর পর কেউ টেস্টে এক ইনিংসে দশ উইকেট নিলেন।
টেস্টের প্রথম দিন ৪ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় দিন বাকি ৬টি উইকেটও তুলে নেন অজাজ। কোনও ভারতীয় ব্যাটারই তাঁর বোলিংয়ের উত্তর খুঁজে পাননি।
যে শহরে এই নজির গড়লেন, সেই মুম্বইয়েই জন্ম অজাজের। ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম বার মুম্বইয়ে পা দিয়ে অতীতচারী হয়ে পড়েছিলেন।
মাত্র আট বছর বয়সে শহর ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিল তাঁর পরিবার। সেখানেই বড় হওয়া, ক্রিকেট শেখা এবং নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া।
অজাজের পরিবার আদতে গুজরাতি। ভারুচ জেলার তাঙ্করিয়া গ্রামে তাঁদের আদি বাড়ি। কিন্তু অনেক দিন আগেই মুম্বইয়ে চলে আসেন অজাজের বাবা ইউনুস। সেখানে রেফ্রিজারেটরের ব্যবসা চালাতেন। মা শেহনাজ ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা।
মুম্বইয়ে থাকাকালীন স্কুলে অল্পবিস্তর ক্রিকেট খেলেছিলেন অজাজ। কিন্তু খেলাটাকে নিয়ে কখনওই মনোযোগী ছিলেন না।
আট বছর বয়সে পরিবার চলে যায় অকল্যান্ডে। সেখানেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি অজাজের। তাঁর কাকা সঈদ পটেল ভাইপোকে ভর্তি করিয়ে দেন নিউ লিন ক্রিকেট ক্লাবে। ততদিনে টিভি দেখে সচিন তেন্ডুলকর এবং শেন ওয়ার্নের ভক্ত হয়ে গিয়েছেন অজাজ।
নিউ লিন থেকে অ্যাভনডেল কলেজে গিয়ে আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত জিত রাভালের সঙ্গে পরিচয় হয় অজাজের। দু’জনে একে অপরের প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠেন।
পাঁচ ফুট ছ’ইঞ্চি উচ্চতার অজাজ প্রথমে জোরে বোলার ছিলেন। সেখান থেকে স্পিন বোলার হয়ে ওঠা প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড স্পিনার দীপক পটেলের হাত ধরে। তখন দীপক নিউজিল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ না মেলায় দীপকই অজাজকে পরামর্শ দেন স্পিন বোলিং করার।
২০১৪ থেকে ২০১৭— টানা তিন বছর নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া লিগ প্লাঙ্কেট শিল্ডে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ছিলেন অজাজ। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে অভিষেক হয় অজাজের। অভিষেকেই ম্যাচের সেরা হন। তারপর থেকে ঘুরে তাকাতে হয়নি।
নিউজিল্যান্ডের জোরে বোলার মিচেল ম্যাকক্লেনাঘানের সুবাদে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেট বোলার হিসেবেও ছিলেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে কানপুরে প্রথম টেস্টে ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলেছেন।
এই টেস্টে নামার আগেই জানিয়েছিলেন, পরিবারের লোক এখনও তাঁর খেলা মাঠে বসে দেখেননি। নিজের মাতৃভূমিতেই সেই সুযোগ প্রথম বার আসতে চলেছে।
মুম্বইয়ে কোহলী, পুজারার মতো উইকেট তুলে নিয়েছেন অজাজ। এমনকী দেড়শো করা ময়াঙ্ক আগরওয়ালও অজাজের বোলিংয়ের সামনে ধরাশায়ী হন।