রোহিত শর্মাদের চিন্তা কিছুটা কমালেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। —ফাইল চিত্র
সকাল থেকে উইকেটের খোঁজে হাহুতাশ করলেন মহম্মদ শামিরা। ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে কোনও উইকেটই নিতে পারলেন না তাঁরা। অনায়াসে রান করে গেলেন উসমান খোয়াজা এবং ক্যামেরন গ্রিন। দিনের শেষ অস্ট্রেলিয়া থামল ৪৮০ রানে। ব্যাট করতে নেমে ভারত কোনও উইকেট না হারিয়ে তুলল ৩৬ রান।
বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে ভারত ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। আমদাবাদে এই ম্যাচ জিতলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যেতে পারবে ভারত। এমন অবস্থায় টেস্টের প্রথম দিনে টস জিতে দাপট দেখান খোয়াজারা। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার শতরান করেছিলেন প্রথম দিনে। দ্বিতীয় দিনে তিনি থামলেন ১৮০ রানে। প্রথম দিনের শেষে বলেছিলেন যে, তিনি স্পিন খেলতে পারেন না বলে ভারতের মাটিতে খেলতে নেওয়া হত না তাঁকে। জল বইতে হত। টানা দু’দিন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেলদের সামলে ১৮০ রানের ইনিংস খেলার পর সেই দুর্নাম তিনি অবশ্যই মুছে দিয়েছেন। অবশ্য উইকেট দিলেন সেই এক স্পিনারকেই। অক্ষরের বলে পা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাটটা নামাতে দেরি করেন। দীর্ঘ সময় ব্যাট করার ক্লান্তির কারণেই হয়তো এমনটা হল। আলসেমির জন্য উইকেট দিলেন তিনি। ভারতের মাটিতে ২০০ রানের গণ্ডিটা টপকানো হল না খোয়াজার।
৪২২ বল খেলে ১৮০ রান করা খোয়াজাকে সঙ্গ দিলেন ক্যামেরন গ্রিন। ১৭০ বলে ১১৪ রান করেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চির গ্রিনও আমদাবাদের পিচে স্পিন সামলালেন। প্রথম সেশনে কোনও রকম ভাবেই খোয়াজাদের ঘাড়ে চাপতে পারলেন না শামিরা। দ্বিতীয় সেশনে ভারতকে প্রথম আশার আলো দেখান অভিজ্ঞ অশ্বিন। এ দিন তিনি ভারতীয়দের মধ্যে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে সব থেকে বেশি উইকেটের মালিক হলেন। দ্বিতীয় সেশনে এক ওভারে গ্রিন এবং অ্যালেক্স ক্যারিকে ফিরিয়ে দেন অশ্বিন। যদিও সেই উইকেটগুলিতে বোলারের কৃতিত্বের থেকে বেশি দোষ ব্যাটারের। গ্রিন লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে গ্লাভসে বল লাগিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটরক্ষক শ্রীকর ভরতকে। ক্যারি হঠাৎ নেমেই ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেট দেন।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের লেজ তখন ভারতের নাগালের মধ্যে। কিন্তু সেই লেজকে ফেরাতেও খরচ হয়ে গেল অনেকগুলি রান। শেষ চার উইকেটে ১০২ রান তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। নাথান লায়ন করেন ৩৪ এবং টড মারফি করেন ৪১ রান। তাঁদের দু’জনকেই ফেরান অশ্বিন। প্রথম দিনে ট্রেভিস হেডের উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় দিনে নিলেন আরও পাঁচ উইকেট।
নাগপুর, দিল্লি এবং ইনদওরের থেকে আমদাবাদের পিচ অনেকটাই আলাদা। প্রথম দিন থেকে বল ঘোরেনি। ব্যাটারদের কাছে অনেকটা সহজ এই পিচে খেলা। নিজেরা ভুল না করলে উইকেট হারানো কঠিন হচ্ছে। এমন পিচেও অশ্বিনের ৬ উইকেট নেওয়ার প্রশংসা করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথম তিন টেস্টে এত কম রানে খেলা হয়েছে যে, ৪৮০ রানকে অনেকটাই বড় মনে হচ্ছে। কিন্তু রোহিত, বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পুজারা সমৃদ্ধ ভারতীয় ব্যাটিং যদি নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারে তা হলে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের কপালে দুঃখ রয়েছে।
গোটা সিরিজ়ে একটি জায়গায় চিন্তা রয়েই গেল ভারতের। সেই চিন্তা উইকেটরক্ষক ভরতকে নিয়ে। ঋষভ পন্থ না থাকায় তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এই সিরিজ়ে। বসিয়ে রাখা হয়েছে সাদা বলের ক্রিকেটে দাপট দেখানো ঈশান কিশনকে। কিন্তু একের পর এক ম্যাচে ভরত নিয়ম করে ক্যাচ ফেললেন। সহজ থেকে সহজতম ক্যাচ পড়ল তাঁর হাত থেকে। অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেটটির ক্ষেত্রেও তিনি ক্যাচ ফসকেছিলেন। ভাগ্যিস তাঁর পায়ে লেগে বলটি উঠেছিল, তাই পিছনে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট সেই ক্যাচ ধরে ফেলেন। ব্যাট হাতেও ভরত সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। আগামী দিনে তাঁকে আর সুযোগ দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।