ভাল খেলেও জেতাতে পারলেন না হার্দিক পাণ্ড্য। চেন্নাইয়ে হেরে এক দিনের সিরিজ়ে হার ভারতের। —ফাইল চিত্র
পেন্ডুলামের মতো দুলছিল খেলা। এই ভারতের দিকে, তো কিছু ক্ষণ পরেই অস্ট্রেলিয়ার দিকে। ক্রিজে যত ক্ষণ বিরাট কোহলি ছিলেন, তত ক্ষণ পাল্লা ভারী ছিল ভারতেরই। কিন্তু তিনি আউট হতেই খেলা ধীরে ধীরে ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতলেন স্টিভ স্মিথরা। অনেক চেষ্টা করেও দলকে জেতাতে পারলেন না হার্দিক পাণ্ড্য। তাঁর সব লড়াই বিফলে গেল। টানা পাঁচটি সিরিজ় নির্ণায়ক ম্যাচে জয়ের পরে অবশেষে হারের মুখ দেখলেন রোহিত শর্মারা। ২-১ ব্যবধানে এক দিনের সিরিজ় দিতে নিল অস্ট্রেলিয়া।
চেন্নাইয়ে নামার আগে ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তাঁরা। তাই প্রতি ম্যাচেই দলে বদল হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন উঠছে দল নির্বাচন নিয়ে। পর পর ম্যাচে ব্যর্থ সূর্যকুমার যাদবকে তা হলে কেন খেলিয়ে গেলেন তিনি। প্রতি ম্যাচে এক জন কম ব্যাটার নিয়ে খেলল ভারত। তার খেসারত দিতে হল দলকে।
চেন্নাইয়ে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শুরুটাও খুব ভাল করেছিলেন দুই ওপেনার মিচেল মার্শ ও ট্রাভিস হেড। দ্রুত রান করছিলেন তাঁরা। বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল মার্শকে। বিশাখাপত্তনমে তিনি যেখানে শেষ করেছিলেন চেন্নাইয়ে সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন।
ভারতকে খেলায় ফেরালেন হার্দিক। বল করতে এসে প্রথম ওভারেই তাঁর বলে হেডের ক্যাচ ফেলেন শুভমন গিল। কিন্তু সেই ওভারেই ৩৩ রানের মাথায় হেডকে আউট করেন হার্দিক। পরের ওভারে তিনি ফেরান অসি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে। নিজের তৃতীয় ওভারে ভয়ঙ্কর দেখানো মার্শকে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে বড় ধাক্কা দেন হার্দিক। মার্শ ৪৭ রান করে আউট হন।
৩ উইকেট পড়ার পরে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্নাশ লাবুশেন। ওয়ার্নার ২৩ ও লাবুশেন ২৮ রান করেন। অ্যালেক্স ক্যারেও ৩৮ রান করে আউট হন। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়ছিল। হার্দিকের পরে বল হাতে চমক দেন কুলদীপ যাদব। অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারকে ফেরান তিনি। শেষ দিকে শন অ্যাবট ২৬ রান করেন। ৪৯ ওভারে ২৬৯ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে হার্দিক ও কুলদীপ ৩টি করে উইকেট নেন। মহম্মদ সিরাজ় ও অক্ষর পটেল নেন ২টি করে উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুব ভাল করেছিলেন রোহিত ও শুভমন। যে মিচেল স্টার্ক আগের দুই ম্যাচে নতুন বলে ভারতকে সমস্যায় ফেলেছিল সেই স্টার্কের বিরুদ্ধে আগ্রাসী শট খেলছিলেন তাঁরা। দেখে মনে হচ্ছিল দিনটা ভারতের। কিন্তু খেলার গতির বিপরীতে আউট হয়ে যান রোহিত। ১৭ বলে ৩০ রান করে অ্যাবটের বলে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। তার কিছু পরেই ৩৭ রান করে আউট হন শুভমন।
দুই উইকেট পড়ার পরে জুটি বাঁধেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল। বিরাট সাবলীল খেলছিলেন। রাহুল শুরুতে একটি ধীরে খেললেও পরের দিকে হাত খোলা শুরু করেন। ৬৯ রানের জুটি হয় তাঁদের মধ্যে। ৩২ রানের মাথায় বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন রাহুল। তার পরেই খেই হারায় ভারত। দ্রুত রান করার জন্য অক্ষরকে আগে নামালেও বিরাটের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ২ রানেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
রোহিতদের সব থেকে বড় ধাক্কা দেন অ্যাগার। পর পর দু’বলে বিরাট ও সূর্যকুমারকে আউট করেন তিনি। ৫২ রান করে আউট হন বিরাট। এই সিরিজ়ের তিনটি ম্যাচেই প্রথম বলে শূন্য রানে আউট হলেন সূর্য। ১৮৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে যায় ভারতের।
তখনই ক্রিজে ছিলেন হার্দিক ও জাডেজা। হার্দিককে ভাল দেখাচ্ছিল। চাপে পড়লেও সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন তিনি। এই জুটির উপরেই ভারতের জয় নির্ভর করছিল। কিন্তু ৪০ রানের মাথায় জাম্পার বলে আউট হন হার্দিক। জাডেজাকেও সাজঘরে পাঠান অসি স্পিনার। ৪ উইকেট নেন জাম্পা। সেখান থেকে আর ফেরার সম্ভাবনা ছিল না ভারতের। শেষ পর্যন্ত ২৪৮ রানে শেষ হয়ে যায় রোহিতদের ইনিংস। ২১ রানে ম্যাচ হারে ভারত।