মার্লিন গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকেত মোহতার সঙ্গে যুবরাজ সিংহ। নিজস্ব চিত্র।
বড় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে হলে মানসিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের। যুবরাজ সিংহ সেন্টার্স অফ এক্সসেলেন্স এবং মার্লিন গ্রুপস হাই-পারফরম্যান্স সেন্টারের উদ্বোধন করতে কলকাতায় এসে বললেন যুবরাজ সিংহ। ভারতের প্রাক্তন অলরাউন্ডারের মতে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের দক্ষতার খামতি নেই। মানসিক সমস্যা রয়েছে। সেটা কাটিয়ে উঠতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়ে যুবরাজ বলেছেন, ‘‘ভারতীয় দলে দক্ষতার অভাব নেই। বড় ম্যাচে পারফর্ম করার ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা রয়েছে। আমিও ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে ছিলাম। অনেক বছর ধরে আমরা বড় প্রতিযোগিতার ফাইনালে জিততে পারছি না। এটা অবশ্য চিন্তার। টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চই ভাবছে। আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। এই একটা পার্থক্যের জন্য অস্ট্রেলিয়া ছ’বার বিশ্বকাপ জিতেছে। আর আমরা দু’বার।’’ ভবিষ্যতে পেশাদার কোচিংয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন যুবরাজ।
দেড় বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে কোহলি, রোহিতের ফেরার মধ্যে বিশেষ কিছু দেখছেন না যুবরাজ। নিউটাউনের এর বিলাসবহুল হোটেলে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওরা কেউ অবসর নেয়নি। টানা তিন ধরনের ক্রিকেট খেলা সহজ নয়। ক্রিকেটারেরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কোহলি, রোহিত জানে কী করে ফিটনেস ধরে রাখতে হয়। তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ কোহলি, রোহিত টি-টোয়েন্টি দলে ফেরায় তরুণ ক্রিকেটারেরা বঞ্চিত হবেন বলেন সমালোচনা হচ্ছে। এর জবাবে গান ধরেন যুবরাজ, ‘‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে। লোগো কা কাম হ্যায় কহেনা।’’
আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় দলের সূচিতে ২০ ওভারের ক্রিকেট তেমন না থাকা নিয়েও চিন্তিত নন যুবরাজ। তিনি বলেন, ‘‘আইপিএল আছে। সেখানে যথেষ্ট প্রস্তুতির সুযোগ পাবে ক্রিকেটারেরা। আন্তর্জাতিক সূচি না থাকলেও সমস্যা হওয়া উচিত নয়। সবাই পেশাদার ক্রিকেটার।’’ প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকা নিয়ে রোহিতের উদ্বেগের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে যুবরাজ বলেন, ‘‘রোহিত অধিনায়ক। ওর মতামতকে সম্মান করি। সিনিয়রদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। জুনিয়রদের হয়তো কিছুটা হতে পারে।’’
যুবরাজ সিংহ সেন্টার্স অফ এক্সসেলেন্সে ক্রিকেট শিক্ষার্থীদের সেরা সুযোগ দিতে চান যুবরাজ। রাজারহাটের অ্যাকাডেমিতে থাকবে ইন্ডোর এবং আউটডোর অনুশীলনের ব্যবস্থা, বোলিং মেশিন, জিম, পুল, ভাল পিচ সব থাকবে। থাকবে থাকার ব্যবস্থাও। তাঁর পাশে বসে মার্লিন গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকেত মোহতা বলেন, ‘‘আমাদের অ্যাকাডেমিতে এখন ১০০ জন মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। আশা করছি আগামী দিনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। যুবরাজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সেরা সুযোগ-সুবিধা দেব। সেরা কোচেরা প্রশিক্ষণ দেবেন।’’
যুবরাজকে ফেরানো হয় আইপিএলে। রোহিতকে সরিয়ে হার্দিক পাণ্ড্যকে অধিনায়ক করায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না। যুবরাজের বক্তব্য, ‘‘ওদের মধ্যে কোনও সমস্যা আছে বলে জানি না। কিছু থাকলেও নিজেরাই মিটিয়ে নিতে পারবে। ওরা পরিণত এবং পেশাদার ক্রিকেটার।’’
ভারতের হয়ে দীর্ঘ দিন খেলেও নেতৃত্ব দিতে পারেননি। কোনও আক্ষেপ আছে? যুবরাজ বলেছেন, ‘‘না আমার আক্ষেপ নেই। অধিনায়কত্ব বড় সম্মান। পেলে অবশ্যই ভাল লাগত। কিন্তু দাদা (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) এবং মাহির (মহেন্দ্র সিংহ ধোনি) মতো পর পর দু’জন দুর্দান্ত অধিনায়ক পেয়েছি আমরা। আর পেশাদার খেলোয়াড়দের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়। আক্ষেপ একটা আছে। ৪০টা টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছি। আরও কিছু টেস্ট খেলতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু আমার সময় তো মিডল অর্ডারে সুযোগই ছিল না। সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণ... কোথায় খেলতাম?’’
শোনা যাচ্ছে আপনার ক্রিকেটজীবন, ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই সব কিছু নিয়ে জীবনকাহিনি তৈরি হবে। কাকে দেখতে চান নিজের চরিত্রে? কোন অভিনেতাকে আপনার পছন্দ? যুবরাজ বলেন, ‘‘অনেক ভাল অভিনেতা রয়েছে। এটা তো পরিচালকের সিদ্ধান্ত। তিনি যাকে বাছবেন, সে অভিনয় করবে। কয়েক দিন আগে অ্যানিম্যাল দেখেছি। রণবীর কপুর দুরন্ত। অসাধারণ অভিনয় করেছে। আমি চাইব আমার চরিত্রটা রণবীর করুক। তবে আবার বলছি, সিদ্ধান্ত নেবেন পরিচালক। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমার বায়োপিক আসবে। আপনারা সুখবর পাবেন।’’
বেশ কিছু দিন পর কলকাতায় এলেন যুবরাজ অ্যাকাডেমি তৈরি করছেন, দেশের ক্রিকেটকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা থেকে। তবে এখনই পেশাদার কোচিংয়ে আসতে চান না। তাঁর সন্তানেরা বড় হচ্ছে লন্ডনে। পরিবারের সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতে চাইছেন। ছেলে-মেয়ে স্কুল যেতে শুরু করলে কোচিং করাতে চান। সুযোগ পেলে আইপিএলের কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির সঙ্গে যুক্ত হতে চান। নিজের রাজ্যের জুনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করতে ভালবাসেন বলে জানিয়েছেন যুবরাজ।