শঙ্কা: শাদাবের ঘূর্ণি সমস্যা তৈরি করতে পারে ভারতের। টুইটার
বিশ্বকাপে ভারত-পাক দ্বৈরথের জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন দু’দেশের ক্রিকেট সমর্থকেরা। রাজনৈতিক মতোবিরোধের কারণে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপেই দেখা হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের। ক্রিকেটজীবনে এক বারই ভারত-পাক দ্বৈরথের অন্যতম সদস্য ছিলাম আমি। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায়।
ভারত-পাক ম্যাচের আগে ড্রেসিংরুমের পরিবেশে কোনও পরিবর্তন দেখা যায় না। তবে মাঠের বাইরের উত্তেজনা ও দু’দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস কিছুটা হলেও প্রভাবিত করে ক্রিকেটারদের। এখনও মনে আছে জাতীয় সঙ্গীতের সময় রীতিমতো গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। অন্য কোনও দলের বিরুদ্ধে এই রকম অনুভূতি হয়তো হবে না। কিন্তু পাক ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলানোর অভিজ্ঞতা সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।
বিশ্বকাপে এত বছরের ইতিহাসে ভারতকে এখনও হারাতে পারেনি পাকিস্তান। তার মূল কারণ, চাপের মুখে ভারত আক্রমণ করতে শুরু করে। তাই ভেঙে পড়ে পাকিস্তান। বর্তমান ভারতীয় দল সবচেয়ে পরিণত। ওপেনিং বিভাগে কে এল রাহুলের মতো ব্যাটার আছে। তাকে সঙ্গ দেবে বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার রোহিত শর্মা।
ভারতীয় ওপেনারদের সবচেয়ে বড় সুবিধে, এত দিন আইপিএলে একই ধরনের পিচে তারা নতুন বল সামলেছে। কোন পিচে কতটা বাউন্স আছে, কোন পিচ মন্থর, তা ওদের নখদর্পণে। ভারতীয় ব্যাটিং বিভাগে ওপেনারেরাই মূল শক্তি। রাহুল আইপিএলের ১৩ ম্যাচে ৬২৬ রান করেছে। রোহিত সে ভাবে আইপিএলে সফল হতে না পারলেও প্রস্তুতি ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করেছে। তাই প্রথম ম্যাচের আগে নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে ভাল জায়গায় থাকবে ওরা।
বিরাট কোহালি তিন নম্বরে কী ভাবে মানিয়ে নেয় তা দেখার জন্যও মুখিয়ে থাকব। তবে সব চেয়ে আকর্ষণীয় বোলিং বিভাগ নিয়ে এ বার নামছে ভারত। যশপ্রীত বুমরা এই ফর্ম্যাটের শ্রেষ্ঠ পেসার। তার সঙ্গেই ভারতের বাজি হতে পারে সি ভি বরুণ। ভারতীয় বিস্ময় স্পিনারের বিরুদ্ধে এখনও পরীক্ষা দিতে হয়নি বাবর আজ়মদের। ওর সাত রকমের ডেলিভারির নাগাল ওরা পায় কি না, তা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকব।
ভারতের আরও একটি সুবিধে অবশ্যই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো মেন্টরকে পাশে পাওয়া। ধোনির মতো শীতল মস্তিষ্কের ক্রিকেটার বিরাটদের চাপ হাল্কা করতে সাহায্য করে কি না, সেটাও দেখার।
ভারত যতই শক্তিশালী হোক, এই পাকিস্তানও কিন্তু ভয়ঙ্কর। বাবরদের মরিয়া হয়ে ওঠার প্রথম কারণ কিন্তু ঘরের মাঠে পরপর দু’টি সিরিজ় বাতিল হয়ে যাওয়া। নিউজ়িল্যান্ড তাদের দেশ থেকে ফিরে এসেছে। ইংল্যান্ডও সফর বাতিল করে দিয়েছে। পাক বোর্ড প্রধান রামিজ় রাজা বলেই দিয়েছেন, বিশ্বকাপে তাঁর দেশ ভাল কিছু করে দেখানোর জন্য মরিয়া হয়ে থাকবে। প্রত্যেককে প্রমাণ করতে চাইবে, তাঁদের দেশের ক্রিকেটীয় মান কতটা উন্নত। অঙ্ক পাল্টে ফেলার অস্ত্রও আছে বাবরদের দলে।
পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখবে তাদের দলের বাঁ-হাতি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম সেরা। রোহিত, রাহুল ও বিরাট বরাবরই বাঁ-হাতি পেসারের বিরুদ্ধে সমস্যায় পড়েছে। শাহিনের হাতে অফকাটার ও ইয়র্কারও আছে। সেই সঙ্গেই শাদাব খানের মতো লেগস্পিনার সমস্যায় ফেলতে পারে বিরাটদের। ভারত অধিনায়ক কখনওই লেগস্পিনারের বিরুদ্ধে সাবলীলভাবে ব্যাট করতে পারে না। শাহিন ও শাদাবই চাপে রাখতে পারে ভারতকে।
বিশ্বকাপের অঙ্ক পাল্টে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে পাকিস্তান। তরুণ প্রতিভা দিয়ে দল গড়া হলেও শোয়েব মালিক ও মহম্মদ হাফিজ়়ের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারেরা আছে। মন চাইছে ভারত জিতুক। কিন্তু পাকিস্তানকেও অঙ্ক থেকে দূরে রাখা যাচ্ছে না।