আলোচনা: ভারতের অনুশীলনের ফাঁকে কোচ রবি শাস্ত্রী, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা। দুবাইয়ে। ছবি পিটিআই।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে অতীতকে ভুলে যেতে চান বাবর আজ়ম। ভুলে যেতে চান বিশ্বকাপের রেকর্ড বইয়ে দু’দেশের দ্বৈরথ নিয়ে এত দিন কী লেখা হয়েছে। শনিবার ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক বৈঠকে এসে পাক অধিনায়ক বলে গেলেন, ‘‘আগে কী হয়েছে, আমরা ভাবছি না। প্রতিটা ম্যাচে নতুন লড়াই। আর ভারতের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে নামার আগে দলের সবাই আত্মবিশ্বাসী।’’
অথচ এই অতীতই এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান দলের কাছে। পাক বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পরেই রামিজ় রাজা মোটামুটি একটা স্লোগান চালু করে দিয়েছিলেন— ‘ফিরিয়ে আনো সেই বিরানব্বই।’ শুধু বলাই নয়, জানা গিয়েছে, রামিজ় দায়িত্বে এসে শুরুতেই নিয়ে এসেছিলেন ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী দুই তারকাকে— উইকেটকিপার মইন খান এবং পেসার আকিব জাভেদ। যাঁরা কিছুটা তাতাতে পারবেন বাবরদের। এবং, পাক দল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি রওনা দেওয়ার আগে ক্রিকেটারদের উদ্বুদ্ধ করেন স্বয়ং ইমরান খান।
দেশ ছাড়ার আগে আপনাদের কী বলেছিলেন ইমরান? সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের জবাবে বাবর বলেন, ‘‘ইমরান খান আমাদের সঙ্গে সেই ’৯২ সালের অভিজ্ঞতাটা ভাগ করে নিয়েছিলেন। দলের কী রকম মানসিকতা ছিল, কী রকম শরীরী ভাষা ছিল, সে সব বলেছেন।’’
পাক ক্রিকেট মহলে খোঁজ নিয়ে আর একটু বিশদ ভাবে জানা গেল, বাবরের দলের প্রতি কী বার্তা ছিল বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের। ইমরান বলেছিলেন, ‘মাঠে যখন ঢুকবে, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকবে। শুধু একটা কথাই মাথায় রাখবে। জিতে মাঠ ছাড়ব।’ বার্তা দিয়েছেন রামিজ়ও। ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ৪৮ ঘণ্টা আগে মরুশহরে থাকা দলকে ভিডিয়ো বার্তায় ’৯২ সালের বিশ্বজয়ী দলের ওপেনার এবং বর্তমানে পাক বোর্ড প্রধান বলেছেন, ‘‘বাইরে কী চলছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। সে সব আলোচনা দলের অন্দরমহলে আসতে দেবে না। একটা ব্যাপার মাথায় রাখবে। মাঠে নেমে একশো ভাগ দেবে।’’
এখনও পর্যন্ত আইসিসি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও ম্যাচ জিততে পারেনি পাকিস্তান। ভারতের বিরুদ্ধে এই রকম একটা উত্তেজক ম্যাচের আগে কি রাতে ঘুম হচ্ছে আপনার? প্রশ্নের জবাবে বাবর বলেছেন, ‘‘আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে খেলে জিতেছি। এই ম্যাচের আগে আমরা শান্ত থাকতে চাই। তা হলেই মাঠে নেমে সেরাটা দিতে পারব।’’
ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার একদিন আাগেই দলের ১২ ক্রিকেটারের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে পাকিস্তান। এই দলে আছেন বাবর, মহম্মদ রিজ়ওয়ান, ফখর জ়মান, মহম্মদ হাফিজ়, শোয়েব মালিক, আসিফ আলি, হায়দার আলি, ইমদ ওয়াসিম, শাদাব খান, হাসান আলি, শাহিন শাহ আফ্রিদি এবং হ্যারিস রউফ। খবর হচ্ছে, এর মধ্যে ব্যাটার হায়দার আলিকেই এগারো জনের বাইরে থাকতে হবে।
এই ম্যাচে পাকিস্তান ১২ জনের দলে রাখেনি প্রাক্তন অধিনায়ক সরফরাজ় আহমেদকে। যিনি স্পিন খেলার ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শী। এই নিয়ে হাল্কা করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পাক ক্রিকেটে। পাকিস্তানের এক সাংবাদিক যেমন প্রশ্ন করেই বসলেন, স্পিন খেলার ব্যাপারে সরফরাজ়ের সুনাম আছে, তা হলে তাঁকে কেন ভারতের বিরুদ্ধে ১২ জনে রাখা হল না? বাবরের ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের হাতে শোয়েব মালিক আছে। মালিকও কিন্তু স্পিনের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী ব্যাট করে। সরফরাজ়কে দরকার হলেই দলে নেওয়া হবে।’’
রাতে দলের অনুশীলনে সতীর্থদের বাবর বলেছেন, ‘‘ম্যাচটা উপভোগ করো। আর কিছু মাথায় রেখো না।’’ সুখের স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই এখন যন্ত্রণার অতীতকে মুছে ফেলতে মরিয়া বাবর আজ়মের দল।