IPL 2024

বৃহস্পতির প্রাতরাশ, পরে একটা ফোন! চেন্নাই দল জেনে যায় ধোনির নেতৃত্ব ছাড়ার কথা

৫০ বছর আগে এক গায়কোয়াড় মহারাষ্ট্র থেকে চেন্নাই এসেছিলেন হৃদয় জিতে নিতে। শিবাজি রাও গায়কোয়াড়, সকলে তাঁকে রজনীকান্ত বলে চেনে। এ বারে আরও এক গায়কোয়াড় (রুতুরাজ) চেন্নাইয়ের হৃদয় জিততে এসেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ ১০:৫৬
Share:

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে রুতুরাজ গায়কোয়াড়। —ফাইল চিত্র।

বৃহস্পতিবারের সকাল। দলের সকলে একসঙ্গে প্রাতরাশ করতে বসেছেন। হঠাৎ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি জানালেন, তিনি এ বারের আইপিএলে নেতৃত্ব দেবেন না। সেই সঙ্গে পরামর্শ, রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক করা হোক। এর পর ফোন করে ধোনি নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন ম্যানেজমেন্টকেও। তার আগে কেউই জানতে পারেননি তাঁর মাথায় কী চলছে।

Advertisement

ধোনি তো এমনই। তাঁর সিদ্ধান্ত একমাত্র তিনিই জানেন। সে টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়া হোক বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া। এর আগেও এক বার আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন ধোনি। সে বার অধিনায়ক করা হয়েছিল রবীন্দ্র জাডেজাকে। আইপিএল শুরুর ঠিক আগে হঠাৎ নেতৃত্ব থেকে সরে গিয়েছিলেন। তবে অধিনায়ক জাডেজা সাফল্য পাননি। বাধ্য হয়ে ধোনিকে আবার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। এ বারেও তেমনই হল।

বৃহস্পতিবার আইপিএলের সব অধিনায়ক ছবি তোলার সময় দেখা গেল চেন্নাইয়ের হয়ে ধোনি নন, অধিনায়ক রুতুরাজ। চমক লাগে তখনই। জানা যায় ধোনি নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। গোটা ক্রিকেট বিশ্ব অবাক। চেন্নাই দলও জেনেছিল সকালে। তবে কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং অতটাও অবাক নন। তিনি বলেন, “আগের বার যখন ধোনি নেতৃত্ব ছেড়েছিল, আমরা সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। ভাবতে বসেছিলাম কাকে অধিনায়ক করা হবে। তবে এ বারে সেটা হয়নি। এত দিন ধরে আমরা প্রস্তুত হচ্ছিলাম। পরিকল্পনা করছিলাম। এই ভাবনার বীজ বুনতে শুরু করে দিয়েছিলাম গত বার ধোনি নেতৃত্ব ছাড়ার পরেই। এ বারে তাই খুব বড় ধাক্কা লাগেনি। গত বারের ভুল এ বারে হয়নি।”

Advertisement

চেন্নাই দলে বহু তারকা ক্রিকেটার রয়েছেন। অনেক বিদেশি তারকাও রয়েছেন। কিন্তু অধিনায়ক করা হয়েছে রুতুরাজকে। চেন্নাই এই ভাবেই ভাবতে পছন্দ করে। রুতুরাজের মাথা খুব ঠান্ডা। খুব চাপের মধ্যেও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে। ২০১৯ সালে চেন্নাই দলে যোগ দিয়েছিলেন রুতুরাজ। ২৭ বছরের এই ব্যাটারকে ২০ লক্ষ টাকায় পেয়েছিল চেন্নাই। ২০২২ সালে আইপিএলে সব থেকে বেশি রান করেছিলেন তিনি। রুতুরাজকে চেন্নাই ধরে রেখেছিল ৬ কোটি টাকায়। তিনিই এ বারের আইপিএলের সব থেকে কম দামি অধিনায়ক। তবে দলের ভরসার অধিনায়ক।

এ বারের আইপিএল খেলার জন্য রুতুরাজ যখন দলে যোগ দিচ্ছেন, তখনও তিনি জানেন না যে এ বারেই অধিনায়ক হবেন। অনেকেই ভেবেছিলেন যে, ধোনি এ বারের আইপিএল খেলে অবসর নিলে রুতুরাজকে অধিনায়ক করা হবে। কিন্তু ধোনি অবসর নেওয়ার আগেই অনুজকে তৈরি করে দিয়ে যেতে চান। এ বারের আইপিএলে ধোনি উইকেটরক্ষক হিসাবে খেলবেন। উইকেটের পিছন থেকে দেখবেন কী ভাবে দলকে পরিচালনা করছেন রুতুরাজ।

দলের কেউ তো নয়ই, ধোনির নেতৃত্ব ছাড়ার কথা জানতেন না দলের সিইও কাশী বিশ্বনাথনও। তিনি বলেছেন, “আমি আগে থেকে জানতাম না। অধিনায়কদের ফোটোশুটের আগে জানতে পারি। কোচের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সেই সময় আমি জানতে পারি যে, ধোনি আর নেতৃত্ব দেবে না। এই ধরনের ক্রিকেটীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দলের মালিক ধোনির উপরেই দিয়ে রেখেছে। আমরা বিশ্বাস করি দলের জন্য যেটা ভাল হবে, ধোনি সেই সিদ্ধান্তই নেবে। গত দু’বছর ধরে রুতুরাজকে তৈরি করেছে ও। ধোনি মনে করেছে, এটাই সেরা সময় রুতুরাজের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার।” কোচ ফ্লেমিং বলেন, “ভবিষ্যতের কথা ভেবে ধোনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব ভাল সময়ে এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছে। রুতুরাজ এবং আরও কয়েক জনকে অধিনায়ক হিসাবে তৈরি করা হচ্ছিল। কারণ এমন একটা দিন তো আসতই। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সেরা ব্যক্তি ধোনিই। ও যেটা ভাল মনে করেছে সেটাই করেছে।”

দু’বছর আগেই রুতুরাজ জানতেন যে, ধোনির পর তিনিই চেন্নাই দলের অধিনায়ক হবেন। জাডেজাকে অধিনায়ক করার সিদ্ধান্ত ব্যর্থ হওয়ার পরই ধোনি দ্বিতীয় ব্যক্তি খুঁজতে শুরু করেছিলেন। রুতুরাজকেই পছন্দ ছিল তাঁর। তবে বেন স্টোকসকে নিলামে কেনার পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে, ধোনি হয়তো নেতৃত্ব ছাড়বেন স্টোকসের হাতে। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় পছন্দ ছিলেন। ২০২২-২৩ সালে বিজয় হজারে ট্রফির সময় মহারাষ্ট্র তাদের লিগের ম্যাচগুলি রাঁচীতে খেলছিল। সেই সময় রুতুরাজ প্রতি দিন সন্ধ্যায় ধোনির বাড়ি যেতেন। তখনই রুতুরাজকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, চেন্নাই সুপার কিংস আগামী দিনে তাঁকে অধিনায়ক হিসাবে ভাবছে।

মহারাষ্ট্রের হয়ে খেলা রুতুরাজের সতীর্থ আজিম কাজি বলেন, “ওই বছর আমরা এক অন্য রুতুরাজকে দেখেছিলাম। যে ভাবে ম্যাচের পরিকল্পনা করত ও, যে ভাবে দলের অনুশীলন ঠিক করত, সেগুলোর মাধ্যমে আমরা এক নতুন রুতুরাজকে দেখেছিলাম। ও দলকে চালনা করত। আমরা কাউকে এর আগে ওই ভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেখিনি। এই বছর যখন চেন্নাইয়ের হয়ে খেলার জন্য রুতুরাজ যাচ্ছিল, আমরা জানতাম এক দিন ও অধিনায়ক হবে। কিন্তু সেটা যে এ বারেই হবে, তা বুঝতে পারিনি।”

৫০ বছর আগে এক গায়কোয়াড় মহারাষ্ট্র থেকে চেন্নাই এসেছিলেন হৃদয় জিতে নিতে। শিবাজি রাও গায়কোয়াড়, সকলে তাঁকে রজনীকান্ত বলে চেনে। এ বারে আরও এক গায়কোয়াড় (রুতুরাজ) চেন্নাইয়ের হৃদয় জিততে এসেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement