দিল্লি থেকে দুপুর ৩.৪০ নাগাদ রওনা দেয় ভারতীয় দলের বিমান। মুম্বই বিমানবন্দরে নামে ৫.৩৩ মিনিটে। হুডখোলা বাসে প্যারেড শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধ ঘণ্টা পরে। তখনই বোঝা গিয়েছিল নির্ধারিত সময়ে সব অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না।
রোহিতেরা মুম্বইয়ে আসার অনেক আগে থেকেই মেরিন ড্রাইভে সমর্থকেরা জড়ো হতে শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে সেখানে তিলধারণের জায়গা ছিল না। চার্চগেট এবং আশেপাশের ট্রেন স্টেশন থেকে পিল পিল করে লোক জড়ো হতে থাকেন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের সামনে।
বোর্ডের অনুষ্ঠানের জন্য ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল দুপুর ৪টে থেকে। গেট খোলামাত্র জনস্রোত ঢুকতে শুরু করে ভেতরে। পুলিশ কোনও ভাবেই সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। বৃষ্টির মাঝেই দৌড়ে স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন সবাই। ভেঙে পড়ে ব্যারিকেড। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে।
শুধু তাই নয়, স্টেডিয়ামের ভেতরেও ছিল অব্যবস্থা। স্টেডিয়ামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পানীয় জলের জায়গা ছিল না বলেই খবর। শৌচালয়ও বন্ধ বলে অভিযোগ উঠেছে।
মুম্বইয়ে নামার প্রায় এক ঘণ্টা পর বিমানবন্দর থেকে বেরোন ক্রিকেটারেরা। কালো রোদচশমা পরে ট্রফি হাতে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় হার্দিককে। বিমানবন্দরেও প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের মাঝখানে পুলিশ এবং নিরাপত্তারক্ষীরা কর্ডন করে ক্রিকেটারদের বার করে আনেন। ধীর গতিতে প্রত্যেকে নির্ধারিত বাসে উঠে যান।
তবে নরিম্যান পয়েন্ট থেকে যে হুডখোলা বাসে করে রোহিতদের ওয়াংখেড়ে আসার কথা ছিল, তা আটকে পড়ে মাঝরাস্তায়। লোকের ভিড়ে যাওয়ার কোনও রাস্তাই ছিল না। তখনও বিমানবন্দর থেকে রওনা দেয়নি দল। রওনার খবর মিলতেই পুলিশ রাস্তা ফাঁকা করতে শুরু করে। তার পরে হুডখোলা বাস নরিম্যান পয়েন্টের দিকে রওনা দেয়।
বিমানবন্দর থেকে বেরনোর পর রোহিতদের দু’টি বাস পুলিশ কনভয় করে নরিম্যান পয়েন্টের দিকে নিয়ে যায়। সেই বাসের পিছনে ছিল সংবাদমাধ্যম, সাধারণ মানুষের গাড়ি এবং বাইক। একটি জায়গার পর বাকি সব গাড়িগুলি আটকে দু’টি বাসকে জায়গা করে দেওয়া হয়।
ঠিক ৭.৩৬ মিনিটে হুডখোলা বাসে চেপে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের দিকে রওনা দেন ভারতীয় ক্রিকেটার। সেই সময় নরিম্যান পয়েন্টে তুমুল ভিড়। একটু এগিয়েই থেমে যায় ভারতের বাস। তখনই তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। সামনের প্রচুর পুলিশকর্মী ভিড় ঠেলে বাসকে এগোনোর জায়গা করে দেন। ধীরে ধীরে এগোতে থাকে বাস।
রোহিত, কোহলিদের দেখার জন্য বাড়ির ছাদে, গাছের ডালে উঠে পড়েছিলেন সমর্থকরা। তাঁদের অভিবাদন গ্রহণ করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকেন কোহলিরা। বাসের ছাদে জাতীয় পতাকা গায়ে ছবি তোলেন ক্রিকেটারেরা। রোহিতকে ডেকে নিয়ে কোহলি একসঙ্গে ট্রফি তোলেন।
রাত ৮.৫৫ মিনিটে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঢোকেন রোহিতেরা। গোটা স্টেডিয়ামের ঠাসা সমর্থক এত ক্ষণ অধীর আগ্রহে বসেছিলেন। রোহিতেরা মাঠে ঢুকতেই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম। মাঠের মাঝখানে একটি মঞ্চ করা ছিল, যেখানে লেখা ছিল ‘চ্যাম্পিয়ন্স’। তার থেকে কিছুটা দূরে বাকি ক্রিকেটার এবং কর্তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
মঞ্চে ছিলেন সঞ্চালক গৌরব কপূর। তিনি রোহিতকে ডেকে নেন। বিশ্বজয়ের বিভিন্ন মুহূর্ত নিয়ে কথা বলেন রোহিত। হার্দিকের নাম নিতেই আবার স্টেডিয়াম উত্তাল হয়ে ওঠে ‘হার্দিক, হার্দিক’ চিৎকারে। হার্দিক উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এর পরে কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে ডেকে নেন সঞ্চালক। সেখানেও বিশ্বজয়ের বিভিন্ন মুহূর্তের কথা উঠে আসে। ধীরে ধীরে কথা বলেন বিরাট কোহলি, যশপ্রীত বুমরাও।
সবার শেষে জয় শাহ প্রতিশ্রুতিমতো ১২৫ কোটি টাকার চেক তুলে দেন গোটা দলের হাতে। তার পর গোটা দল ট্রফি নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করে। টেনিস বলে সই করে দর্শকদের দিকে ছুড়ে দিতে থাকেন ক্রিকেটারেরা।