Rohit Sharma

কোহলি জমানার আগ্রাসী মেজাজ উধাও! রোহিতের ঠান্ডা মানসিকতা ক্ষতি করছে ভারতীয় ক্রিকেটের

বিরাট কোহলির আগ্রাসন নেই রোহিত শর্মার মধ্যে। মাঠে অনেক বেশি শান্ত তিনি। প্রতিপক্ষের ঘাড়ে চেপে খেলার মানসিকতা নেই। তার ফলেই কি বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ভারত!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ১৭:৫৫
Share:

রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র

ওভালের প্রেস বক্সে বসে রয়েছেন রোহিত শর্মা। একের পর এক প্রশ্ন ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে। তার কিছু ক্ষণ আগেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ২০৯ রানে হারতে হয়েছে ভারতকে। পর পর দু’বার ফাইনালে উঠেও হার। কেন হার? কোথায় সমস্যা হচ্ছে? রোহিতকে দেখা গেল, ঠান্ডা মাথায় জবাব দিচ্ছেন। হারের হতাশা হয়তো রয়েছে, কিন্তু তার জন্য কারও উপর দায় চাপানো নয়। উল্টে দলের ব্যাটার, বোলারদের বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন অবিরাম। রোহিতের এই ঠান্ডা মানসিকতা দেখা গিয়েছে মাঠেও। চোখে চোখ রেখে লড়াই, স্লেজ করলে পাল্টা জবাব উধাও। রোহিতের এই মানসিকতার খেসারতই কি দিতে হচ্ছে ভারতকে? বিরাট কোহলি পরবর্তী জমানায় কি আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতেই ভুলে গিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা? তার দায় কি রোহিতেরই?

Advertisement

বলা হয়, এক জন অধিনায়ক ততটাই ভাল, যতটা ভাল তাঁর দল। অর্থাৎ, ভাল দল না পেলে একা অধিনায়কের কিছু করার থাকে না। তিনি কী বলছেন, কী চাইছেন, সেটা যদি ক্রিকেটাররা মাঠে করে দেখাতে না পারেন তা হলে দল কী ভাবে জিতবে? কিন্তু শুধুই কি তাই! অধিনায়ক হলেন নেতা। তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁকেই তো অনুসরণ করবেন বাকিরা। এখানেই পিছিয়ে পড়ছেন রোহিত।

বিরাট অধিনায়ক হিসাবে আইসিসি ট্রফি জিততে না পারলেও তাঁর সময়ে টানা ৪২ মাস টেস্টে শীর্ষে ছিল ভারত। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরে একের পর এক কীর্তি গড়েছিল বিরাটের দল। পর পর দু’বার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট সিরিজ়ে হারানো তার মধ্যে অন্যতম। বিরাট নিজে বার বার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি হারতে পছন্দ করেন না। তাই মাঠে নামলে নিজে থেকেই একটি আগ্রাসন বেরিয়ে আসে তাঁর। সেটা বড্ড ছোঁয়াচে। কারণ, বিরাট জমানায় চেতেশ্বর পুজারা, অজিঙ্ক রাহানের মতো আপাত শান্ত ক্রিকেটারদেরও দেখা গিয়েছে প্রতিপক্ষকে জবাব দিতে। রবীন্দ্র জাডেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন বা মহম্মদ সিরাজ়দের কথা না হয় বাদই রাখা হল।

Advertisement

রোহিতের আমলে সে সবের দেখা নেই। কোচ হিসাবে রাহুল দ্রাবিড় থাকায় হয়তো দলের অন্দরের পরিবেশ আরও শান্ত। অনেকটা সুখী পরিবারের মতো। সবাই একসঙ্গে খেলছেন, মাঠে নেমে জেতার চেষ্টা করছেন, কিন্তু প্রতিপক্ষকে তাদের ভাষায় জবাব দেওয়া নেই। বিদেশের মাটিতে কলার তুলে ঘোরার মানসিকতা নেই। এই অভাবটাই বেশি করে দেখা যাচ্ছে। মাঠে নামার আগে থেকেই খানিকটা পিছিয়ে থাকছে ভারত।

ব্যাট হাতে রোহিতের পারফরম্যান্সও তাঁর মানসিকতায় কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। ২০২৩ সালে পাঁচটি টেস্ট খেলেছেন রোহিত। ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাগপুরে ১২০ রান করেছিলেন। তার পর থেকে সাতটি ইনিংসে ভারত অধিনায়কের রান যথাক্রমে ৩২, ৩১, ১২, ১২, ৩৫, ১৫ ও ৪৩। একটি অর্ধশতরানের ইনিংসও খেলতে পারেননি রোহিত। লাগাতার ব্যর্থতা প্রভাব ফেলেছে তাঁর অধিনায়কত্বেও। মাঠে অল্পেই হতাশ হয়ে পড়ছেন। মেজাজ হারাচ্ছেন। কিন্তু আগ্রাসন দেখাতে পারছেন না।

কোহলির নিজের পারফরম্যান্স খারাপ হলেও অধিনায়কত্বে বিশেষ প্রভাব পড়ত না। কারণ, তিনি মাঠে সব সময় একই রকম মেজাজে থাকতেন। বিপক্ষের প্রতিটি উইকেট পড়ার পরে বোলারের থেকেও বেশি উল্লাস করতেন। সতীর্থ দর্শনীয় শট মারলে মাঠেই হাততালি দিতেন। টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনালেও সেটা দেখা গিয়েছে। মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছিল, স্লিপে দাঁড়িয়ে বিরাটই হয়তো ম্যাচ পরিচালনা করছেন। বোলারের সঙ্গে কথা বলছেন। ফিল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা সারছেন। আর কভার বা মিড অনে দাঁড়িয়ে চুপ রোহিত। সেই উদ্যম, সেই মেজাজ না থাকলে অস্ট্রেলিয়ার মতো দল তো মাথায় চেপে বসবেই। সেটাই হচ্ছে।

দল নির্বাচন নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে তর্ক হত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের। পরবর্তীতে বিরাটও সেই পথেই হেঁটেছেন। ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাটে রান না থাকলেও একের পর এক টেস্টে তাঁকে খেলিয়েছেন তিনি। কারণ, বিরাট জানতেন, ঋদ্ধির থেকে ভাল উইকেটরক্ষক বিশ্বে নেই। স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে বা পেসারদের বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে উইকেটের পিছনে তাঁকে দরকার। কিন্তু রোহিত সেই পথে হাঁটেন না। দলের স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। কোচ দ্রাবিড় ও নির্বাচকদের হ্যাঁ-য়ে হ্যাঁ মেলাচ্ছেন। তার ফলও পাচ্ছেন। টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনালের দল নির্বাচনেই বিষয়টি স্পষ্ট। নইলে কি কেউ বিশ্বের সেরা বোলার অশ্বিনকে দলের বাইরে রেখে খেলতে নামে! আকাশে মেঘ থাকলেই যে বেশি পেসার খেলাতে হবে সেই মাথার দিব্যি তো কেউ রোহিতকে দেননি। কিন্তু কোচের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যেতে পারেননি তিনি। এখানেই পিছিয়ে পড়ছেন রোহিত।

টেস্ট বিশ্বকাপে হেরে সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য একটি আশার কথা শুনিয়েছেন রোহিত। তিনি বলেছেন, “দলগঠন নিয়ে কথা হবে। ভাল, খারাপ দেখা হবে। আমরা টেস্ট কী মানসিকতা নিয়ে খেলব সেটাও ঠিক করতে হবে। সেই অনুযায়ী দল বাছতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেকে ভাল খেলছে। তাদের খুঁজে এনে সুযোগ দিতে হবে। সময় দিতে হবে যাতে তারাও দলের অংশ হয়ে উঠতে পারে।” তবে এই কথা শুধু মুখের কথা হয়ে থাকলে হবে না। কার্যকরী ক্রিকেটারদের নিয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে। চলতি বছর দেশের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপ। সমর্থকদের চাপ অনেক বেশি থাকবে। তাই সেখানে সাফল্য না এলে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ব্যর্থ অধিনায়ক হিসাবেই নাম থেকে যাবে রোহিতের। সময় খুব কম। কাজ কিন্তু অনেক বেশি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement