হর্ষিত রানা। —ফাইল চিত্র।
শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য ভারতীয় দল ঘোষিত হয়েছে। পাঁচটি টেস্টের জন্য ১৮ জনের দল ঘোষণা করা হয়েছে। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলতি সিরিজ়ে ভারতীয় দলের ভরাডুবির পর এ বারের নির্বাচনী বৈঠকে কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচকেরা না চাইতেও দলে কেকেআরের হর্ষিত
দলে সবচেয়ে বড় চমক হর্ষিত রানা। এখনও পর্যন্ত ভারতীয় জার্সিতে অভিষেক হয়নি তাঁর। বাকি যে ১৭ জন দলে রয়েছেন তাঁদের মধ্যে ১৬ জন দেশের জার্সিতে খেলেছেন। হর্ষিত ছাড়া একমাত্র অভিমন্যু ঈশ্বরণের অভিষেক হয়নি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভারত এ দলে নিয়মিত মুখ তিনি। দলীপ ট্রফিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই দিক থেকে চমক একমাত্র হর্ষিত। কিন্তু তাঁকে নেওয়ার কথা প্রথমে ভাবেননি নির্বাচকেরা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, কোচ গৌতম গম্ভীরের জোরাজুরিতেই অজিত আগরকরের নেতৃত্বাধীন কমিটি নিতে বাধ্য হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পেসারকে।
কেন বাদ মহম্মদ শামি
অস্ট্রেলিয়া সফরে যশপ্রীত বুমরা ও মহম্মদ সিরাজ বাদে তৃতীয় পেসার হিসাবে উঠে আসছিল মহম্মদ শামির নাম। তাঁকে নেওয়া হয়নি। গত বছর দেশের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপের পর থেকে আর শামি খেলেননি। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। শামি তার পর থেকে বার বার জানিয়েছেন, জাতীয় দলে ফিরবেন। নিজের অনুশীলনে ফেরার ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। রঞ্জিতেও বাংলার হয়ে নামবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাঠে ফিরতে পারেননি তিনি। জানা গিয়েছে, বোর্ডের কাছ থেকে ফিটনেসের শংসাপত্র এখনও পাননি শামি। এত দিন ধরে মাঠের বাইরে থাকা কোনও বোলারকে সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে নামিয়ে দিতে চাইছে না বোর্ড। শামিকে নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না তারা। সেই কারণেই তাঁকে নেওয়া হয়নি।
শামির পরিবর্ত হিসাবে তিন জন পেসারের নাম উঠে এসেছিল। নবদীপ সাইনি ও মুকেশ কুমারের পাশাপাশি উঠেছিল হর্ষিতের নাম। নবদীপ অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছেন। মুকেশও সাদা জার্সিতে ভারতের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু তাঁদের বদলে হর্ষিতকে নেওয়া হয়েছে। বাকি দু’জনকে রিজার্ভে রাখা হয়েছে। গম্ভীরের কারণেই দলে জায়গা পেয়েছেন হর্ষিত। কেকেআরের পেসারকে আগে থেকেই গম্ভীর চেনেন। তিনি দিল্লির ছেলে। আইপিএলে গম্ভীরের অধীনে খেলেছেন। হর্ষিতের পক্ষে যুক্তি হিসাবে দু’টি কারণ দেখিয়েছেন গম্ভীর। এক, হর্যিতের বলের গতি মুকেশ ও নবদীপের থেকে বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর বলের গতি কাজে লাগতে পারে। দুই, নবদীপ ও মুকেশের তুলনায় হর্ষিত অপরিচিত। তাই প্রয়োজনে তুরুপের তাস হিসাবে তাঁকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
হর্ষিতকে নিয়ে গম্ভীরের এই জোরাজুরি আজকের নয়। কেকেআরে এসে তাঁকে প্রতিটি ম্যাচে খেলিয়েছেন। হর্ষিত অবশ্য তাঁর মান রেখেছেন। আইপিএলে ধারাবাহিক ভাবে ভাল বল করেছেন। ১১টি ম্যাচে ১৯টি উইকেট নিয়েছেন। বেগনি টুপির তালিকায় পাঁচ নম্বরে ছিলেন তিনি। দলীপেও নজর কেড়েছেন এই ডানহাতি পেসার। ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পরে তাঁর প্রথম শ্রীলঙ্কা সফরেই হর্ষিতকে দলে রেখেছিলেন গম্ভীর। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে দলের ভারসাম্যের কারণে প্রথম একাদশে জায়গা পাননি হর্ষিত। এ বার অস্ট্রেলিয়া সফরে জায়গা পেলেন তিনি।
টেস্টে হার্দিকের জায়গা পাওয়া কঠিন
অস্ট্রেলিয়া সফরে অলরাউন্ডার হিসাবে হার্দিক পাণ্ড্য ও শিবম দুবের নামও উঠে এসেছিল। কিন্তু নির্বাচকেরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে হার্দিককে তাঁরা শুধুমাত্র সাদা বলের জন্যই ভাবছেন। লাল বলের ক্রিকেটে তাঁকে আর ভাবা হচ্ছে না। শিবমের বলের গতিও খুব কম। তাঁকে দিয়ে কতটা বল করানো যাবে তা নিয়েও সন্দেহ ছিল নির্বাচকদের। সেই কারণেই দু’জনকেই নেওয়া হয়নি।
দলে কেন নীতীশ
তাঁদের পরিবর্তে অলরাউন্ডার হিসাবে দলে নেওয়া হয়েছে নীতীশ কুমার রেড্ডিকে। আইপিএলে ভাল খেলেছেন নীতীশ। সেই কারণেই ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে তাঁর। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে সেরার পুরস্কারও পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিকল্প স্পিনার হিসাবে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি কোনও কারণে চার জন পেসার খেলাতে হয় তা হলে বুমরা, সিরাজ ও আকাশ দীপের পাশাপাশি নীতীশের কথা ভাবছে দল। কারণ, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই দলের ভারসাম্য থাকবে। নীতীশ বলের পাশাপাশি ব্যাটটাও ভাল করেন। সেখানেই বাকি পেসারদের টেক্কা দিতে পারেন তিনি। পাশাপাশি নীতীশও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অপরিচিত। ফলে হর্ষিতের মতো তিনিও গম্ভীরের তুরুপের তাস হতে পারেন।