বিধ্বংসী: (বাঁ দিকে) তিরাশি বিশ্বকাপে জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে কপিলের সেই ১৭৫ নট আউটের স্মৃতি ফেরালেন ম্যাক্সওয়েল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
এক দিনের ক্রিকেটে রান তাড়া করতে নেমে তিনি শুধু অস্ট্রেলিয়াকে জয়ই এনে দিলেন না। তারই সঙ্গে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দ্বিশত রানও করলেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অকল্পনীয় ইনিংস নিয়ে উত্তাল ক্রিকেটবিশ্ব।
অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এটাই কি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ইনিংস? তুলনায় চলে আসছে ১৯৮৩ বিশ্বকাপে টানব্রিজ ওয়েলসে জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে কপিল দেবের অপরাজিত ১৭৫ রানর ইনিংস। ১৭ রানের মধ্যে ভারত পাঁচ উইকেট হারানোর পরে কপিল একাই শেষ করে দিয়েছিলেন জ়িম্বাবোয়েকে। তবে সেই ম্যাচে ভারত আগে ব্যাট করেছিল। এ দিন রান তাড়া করে অবিশ্বাস্য অপরাজিত দ্বিশত রান করে ম্যাক্সওয়েল উপহার দিলেন দুর্দান্ত জয়।
সম্প্রচারকারী চ্যানেলে তিনি বলে যান, ‘‘আমরা যখন ফিল্ডিং করছিলাম তখন খুব গরম ছিল। এই ধরনের গরমে ভাল কিছু করা সত্যি খুব কঠিন। আমরা একটা পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলাম যে, শেষ পর্যন্ত ক্রিজ়ে থাকব এবং এক দিক থেকে কোনও উইকেট হারাব না। তার সঙ্গে খারাপ বলগুলো থেকে রান তুলে নেব। সেটাই হয়েছে।’’
তিনি আরও বলেছেন, ‘‘সকলেই নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, নৈশালোকে বল অনেক বেশি সুইং করছে। তাই শুরুর দিকে বেশ কিছু উইকেট দ্রুত হারিয়ে ফেলি। কামিন্সের সঙ্গে আমি আলোচনা করি যে, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে শেষ পর্যন্ত খেলে যেতে হবে।’’ আরও বলেন, ‘‘ঠিক যে বলে আমার বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউ-এর আবেদন হয়, তার পরের বল থেকেই জেতার অদম্য ইচ্ছা আমাদের মধ্যে জাগে। ঠিক করি, এ বার থেকে বড় শট খেলব।’’ ম্যাক্সওয়েল আরও বলে যান, ‘‘এর আগেও বেশ কিছু ম্যাচে আমার ক্যাচ পড়েছে। কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার আগে করতে পারিনি। আজ সেই কাজটা করতে পেরে অনেক বেশি তৃপ্তি অনুভব করছি।’’
অকল্পনীয় জয়ের পরে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জানিয়েছেন, উইকেটের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে বিধ্বংসী ম্যাক্সওয়েলকে দেখে তিনি বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কখনও মনে হচ্ছে এর চেয়ে বড় হাস্যকর ঘটনা আর কিছুই হতে পারে না। জানা না, ম্যাক্সির এই ইনিংসকে কী ভাষায় বর্ণনা করব।’’ যোগ করেন, ‘‘চোখ বুজে বলে দিতে পারি, এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা ক্রিকেটে আগে কখনও হয়নি। এগুলো হল সেই দিনগুলোর মধ্যে একটা, যেখানে মাঠে উপস্থিত দর্শকরা একবাক্যে বলে উঠবেন, এর জন্যই খেলা দেখি।’’
সেখানেই না থেমে কামিন্স আরও বলে যান, ‘‘ম্যাক্সি শুরু থেকে একটা পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে নেমেছিল। যখন দল দুশো রানে পিছিয়ে ছিল, তখনও ম্যাক্সওয়েল বিশ্বাস করছিল যে, এই জায়গা থেকেও ম্যাচ জেতা সম্ভব। সত্যিই এই দিনটা কোনওদিন ভুলতে পারব না। উইকেটের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি শুধু একরাশ বিস্ময় নিয়ে ওকে দেখে গিয়েছি।’’
ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস দেখে স্তম্ভিত সচিন তেন্ডুলকর টুইট করেছেন, ‘‘এক দিনের ক্রিকেটে এমন ইনিংস আগে কখনও দেখিনি। এটাই আমার দেখা এক দিনের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ইনিংস। আফগানিস্তান কিন্তু শুরুর দিকে ভাল লড়াই করেছিল। কিন্তু ওই শেষের ২৫ ওভারই ম্যাক্সওয়েলের কাছে ম্যাচের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট ছিল।’’
শোয়েব আখতার বলেছেন, ‘‘আমরা একটা অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থাকলাম। পা কাজ না করলেও যে এমন ইনিংস খেলা সম্ভব, সেটা ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতাম না। এর চেয়ে বড় দেশাত্ববোধের উদাহরণ আর কিছু হতে পারে না।’’ এবি ডিভিলিয়ার্সের টুইট, ‘‘আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কী দুর্ধর্ষ ভাবেই না জিতল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস আমাদের হতবাক করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দলকে অনেক অভিনন্দন।’’