রোহিত শর্মা এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। —ফাইল চিত্র।
আইপিএলের সেরা নেতা কি রোহিত শর্মাই? তাঁর লড়াই হতে পারে শুধু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে। তাঁদের দু’জনের আইপিএলে যা সাফল্য, তা আর কোনও ক্রিকেটারের নেই। কিন্তু ভাল জিনিসের একটা শেষ থাকে। অধিনায়ক রোহিতের দৌড় শেষ হয়ে গেল। আগামী বছর আইপিএলে রোহিত খেলবেন ক্রিকেটার হিসাবে। অধিনায়ক ধোনি এখনও খেলবেন। হয়তো আর এক বার। তাঁরও কি এটাই শেষ বার?
রোহিত আইপিএল জিতেছেন ছ’বার। ডেকান চার্জার্সের হয়ে প্রথম বার জিতেছিলেন ক্রিকেটার হিসাবে। অধিনায়ক হিসাবে পাঁচ বার। ধোনিও পাঁচ বার আইপিএল জিতেছেন। আইপিএলের ইতিহাসে দুই সেরা অধিনায়ক। এখনও পর্যন্ত ১৬ বার আইপিএল হয়েছে। তার মধ্যে ১০ বারই জিতেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং চেন্নাই সুপার কিংস। এর মধ্যে শেষ ১০টি আইপিএলের মধ্যে সাত বার জিতেছে এই দু’টি দল। অর্থাৎ লড়াইটা ছিল রোহিত বনাম ধোনিই। সমর্থকদের কাছে এই দুই দলের লড়াইটাই ছিল আইপিএলের সব থেকে বড় ম্যাচ।
আইপিএলের প্রথম পাঁচ বছরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর এবং রিকি পন্টিং। কিন্তু সাফল্য পায়নি মুকেশ অম্বানিদের দল। প্রথম দু’বারে পঞ্চম এবং সপ্তম স্থানে শেষ করেছিল মুম্বই। তৃতীয় আইপিএলে ফাইনালে উঠলেও জিততে পারেনি। চেন্নাই ২০১০ এবং ২০১১ সালে পর পর জিতে আইপিএলে নিজেদের জায়গা তৈরি করতে শুরু করেছে। কলকাতা নাইট রাইডার্স জেতে ২০১২ সালে।
রোহিত মুম্বইয়ে যোগ দেন ২০১১ সালে। ২০১৩ সালের আইপিএলের মাঝপথে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন পন্টিং। সেই জায়গায় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন রোহিত। সে বারেই আইপিএল জিতে নেয় মুম্বই। জয়যাত্রার ওই শুরু। পরের ১০ বছরে আরও চার বার ট্রফি জেতে মুম্বই। চেন্নাই ছাড়া তারাই একমাত্র দল যারা পর পর দু’বার আইপিএল জিতেছে।
অধিনায়ক হিসাবে আইপিএলের ফাইনালে কখনও হারেননি রোহিত। তিনি কখনও ধোনির বিরুদ্ধে আইপিএল ফাইনাল হারেননি। আইপিএলে তাঁদের মগজাস্ত্রের লড়াই চলতেই থাকে। বলা হয় রোহিত নাকি তথ্যের উপর নির্ভর করে দল চালান। ব্যাটার, বোলারদের সব তথ্য সঙ্গে রাখেন রোহিত। সেটাই মুম্বইকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
রোহিতের নেতৃত্বে মুম্বই যদি প্রথম কয়েকটা ম্যাচ হেরে যায়, তার পরেও আইপিএল থেকে মুম্বইকে বাতিল করা যায় না। কারণ টানা ৬-৭ ম্যাচ হারের পরেও আইপিএল জেতার ক্ষমতা রাখেন রোহিতেরা। এক সাক্ষাৎকারে রোহিত বলেছিলেন, “পরিসংখ্যান আমাকে মাঠের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। প্ল্যান বি এবং সি তৈরি রাখতে পারি। আমার কাজ সহজ হয়ে যায়।”
সে দিক থেকে ধোনির নেতৃত্ব একেবারেই আলাদা। তিনি দলে খুব বেশি বৈঠক করেন না। ব্যক্তিগত ভাবে ক্রিকেটারদের বোঝার চেষ্টা করেন ধোনি। রোহিত এবং ধোনির নেতৃত্বে ভারতের হয়ে খেলা রবিচন্দ্রন অশ্বিন বলেছিলেন, “ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা অধিনায়ক কে জিজ্ঞেস করলে উত্তর হবে ধোনি। তবে রোহিত দুর্দান্ত মানুষ। প্রতিটা ক্রিকেটারকে ও চেনে। তাদের বোঝার চেষ্টা করে।”
রোহিত-ধোনির এই লড়াইয়ে ইতি। মুম্বইয়ের দায়িত্ব এ বার হার্দিক পাণ্ড্যের হাতে। ধোনি এ বারের আইপিএলের পর যদি আবার বলেন, ‘আমি ফিরে আসব’, তা হলে আলাদা কথা। না হলে ধোনিরও হয়তো এটাই শেষ আইপিএল। আইপিএলের স্বর্ণযুগের শেষের শুরু হয়ে গেল।