ঋষভ পন্থ। — ফাইল চিত্র।
বছর দুয়েক আগে বিরাট প্রতারণা করেছিলেন ঋষভ পন্থের সঙ্গে। ঘড়ি বিক্রি করার নামে ভারতের উইকেটকিপারের থেকে হাতিয়ে নিয়েছিলেন ১.৬ কোটি টাকা। মৃণাঙ্ক সিংহ নামে ২৫ বছরের প্রাক্তন সেই ক্রিকেটার অবশেষে দিল্লি পুলিশের জালে ধরা পড়লেন। পন্থের সঙ্গে প্রতারণা করা ছাড়াও, বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে থেকে সেখানকার বিল দেননি। তার মধ্যে রয়েছে তাজ প্যালেসের মতো হোটেলও।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, অতীতে ক্রিকেট খেললেও তা ছেড়ে দিয়ে ছদ্মবেশে প্রতারণার খেলায় মেতেন ওঠেন মৃণাঙ্ক। বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে ভালবাসতেন। নামীদামি হোটেলে গিয়ে থেকে মডেলদের সঙ্গে পার্টি করতেন এবং সেই ছবি নিজের সমাজমাধ্যমে দিয়ে নতুনদের আকৃষ্ট করতেন। বান্ধবীদের নিয়ে বিদেশ ভ্রমণও ছিল নিয়মিত। সে ভাবেই দিল্লি থেকে হংকংয়ের বিমান ধরার সময় তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
২০২১ সালে পন্থের মতো ক্রিকেটারও বোকা বনেছিলেন মৃণাঙ্কের কাছে। পুলিশের দাবি, ভারতের উইকেটকিপারের সামনে মৃণাঙ্ক বলেছিলেন যে তিনি দামী ঘড়ি এবং গয়না বেচাকেনা করেন। তাঁকে বিশ্বাস করে পন্থ নিজের একটি দামী ঘড়ি বিক্রি করে দেন। পন্থকে ১.৬ কোটি টাকার চেক দিলেও তা ‘বাউন্স’ করে। সে সময় পন্থ পুলিশে অভিযোগ জানালেও অপরাধের কিনারা করা যায়নি।
কিন্তু মৃণাঙ্কের ‘কীর্তি’ সেখানেই থামেনি। দিল্লি পুলিশের অতিরিক্ত ডিসিপি রবিকান্ত কুমার বলেছেন, “২০২২ সালে তাজ প্যালেস হোটেলে গিয়ে মৃণাঙ্ক বলেছিল ও একজন নামী ক্রিকেটার এবং আইপিএল খেলেছে। সেখানে এক সপ্তাহ থেকেছিল এবং ৫.৬ লক্ষ টাকার বিল হয়েছিল। হোটেল ছাড়ার সময় ও জানিয়েছিলেন ওর স্পনসর আমেরিকার একটি সংস্থা বিল মিটিয়ে দেবে। নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং কার্ডের তথ্যও দিয়েছিল সে। কিন্তু পুরোটাই ভুয়ো।”
পুলিশ এবং হোটেলের তরফে পরে মৃণাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, গাড়িচালকের মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেবেন। সেটাও অসত্য ছিল। এর পরেই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। জানা যায়, আরও কিছু বিলাসবহুল হোটেলে এ ভাবেই অসত্য কথা বলে থেকেছেন মৃণাঙ্ক। তবে ক্রিকেটার নয়, সেখানে তিনি নিজের পরিচয় দিতেন কর্ণাটকের এক আইপিএস অফিসার হিসাবে। সমাজমাধ্যমে খুবই সক্রিয় ছিলেন।
গত বছর পুলিশের তরফে মৃণাঙ্কের কাছে একাধিক নোটিস পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি। তাঁর বাবা পুলিশের কাছে হাজিরা দিয়ে জানান, পরিবারের তরফে তাঁকে ত্যাজ্য করা হয়েছে। মৃণাঙ্ককে অনেক দিন ধরেই ধরার চেষ্টা করছিল পুলিশ। কিন্তু বার বার নিজের অবস্থান পাল্টে পুলিশকে বোকা বানাচ্ছিলেন তিনি। পরিবারের লোকজনকে দিয়ে বলিয়ে পুলিশকে বিশ্বাস করান যে তিনি দুবাইয়ে চলে গিয়েছেন। এর পরে পুলিশ আদালতে যায় এবং জামিনঅযোগ্য ধারায় ওয়ারেন্ট বার করে। জারি করা হয় লুকআউট নোটিসও।
সোমবার মৃণাঙ্ক হংকংয়ের বিমান ধরতে যাওয়ার সময় তাঁকে ধরেন অভিবাসন দফতরের আধিকারিকেরা। তখনও নিজেকে আইপিএস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন মৃণাঙ্ক। কিন্তু কোনও জারিজুরিই আর কাজে লাগেনি।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন মৃণাঙ্ক। এর পর রাজস্থানের একটি কলেজ থেকে এমবিএ করেন। হরিয়ানার হয়ে ২০২১ সালে রঞ্জি ট্রফি খেলেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের সদস্য ছিলেন।