অ্যালান বর্ডার। —ফাইল চিত্র।
গুরুতর অসুস্থ অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যালান বর্ডার। ৬৮ বছরের প্রাক্তন ক্রিকেটার ২০১৬ সাল থেকে পার্কিনসন্সে আক্রান্ত। নিজের অসুস্থতা নিয়ে বর্ডার বলেছেন, তিনি পরিণতি নিয়ে ভীত নন। তবে ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হওয়া নিয়ে চিন্তিত।
অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দিন-রাতের টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা দেখতে এসেছিলেন বর্ডার। চা বিরতিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আমার শরীর এমনিতে বেশ ভালই আছে। পার্কিনসন্স ছাড়া কোনও সমস্যা নেই শরীরে। আমি এখনও গল্ফ খেলি। এখনও সকালে হাঁটতে যাই। সাধারণ ভাবে নিজের সব কাজও করতে পারি। তবে এখন আর আমি ম্যারাথনে দৌড়তে পারব না। বাকি সব কিছু ভাল ভাবেই চলছে।’’ ডাকাবুকো ক্রিকেটার হিসাবে পরিচিত বর্ডারকে অবশ্য অসুস্থতা ভয় পাওয়াতে পারেনি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি খুব একটা ভীত নই। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির অবনতি হওয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তিত আমি। আমার মনে হয়, অসুস্থতাটা নিয়ে যত কম জানব, আমার জন্য তত ভাল হবে। আমার স্ত্রী জেন সব কিছু জানে।’’
অসুস্থতা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘এটা একটা স্নায়বিক সমস্যা। মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে একটা জিনিসের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে পেশি এবং স্নায়ুতন্ত্র প্রভাবিত হয়। এর বেশি কিছু আমি জানি না পার্কিনসন্স নিয়ে। আমার শুধু মনে হয়ে এ রকম অসুস্থতা নিয়ে মহম্মদ আলি কী ভাবে অলিম্পিক্সের মশাল জ্বালিয়েছিলেন! অবিশ্বাস্য!’’
বর্ডার বলেছেন, অসুস্থতা তাঁর মধ্যে এক রকম অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করেছে। তিনি বলেছেন, ‘‘বাড়িতেও একটা অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আমার স্ত্রী জেন সব সময় আমার সঙ্গে থাকত।’’ বর্ডার বলেছেন, স্ত্রীর যত্নের পাশাপাশি কয়েক জন ভাল চিকিৎসককে পেয়েছেন। তাই তিনি অনেকটাই স্বস্তিতে থাকতে পারেন।
দেশ-বিদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রয়েছে বর্ডারের। অনেকেই নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। তেমনই এক জন ওয়াসিম আক্রম। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ককে পাঠানো একটা বার্তার কথাও ওঠে। বর্ডার বলেন, ‘‘আক্রমকে অনেক দিন আগে এক বার বলেছিলাম, পুনর্জন্ম থাকলে আগামী জন্মে তোমার মতো হতে চাই। এক জন ভয়ঙ্কর বাঁহাতি জোরে বোলার হতে চাই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমার জীবন খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। খুব একটা বদলেছি বলেও মনে হয় না। এখনও প্রচুর শুভেচ্ছাবার্তা পাই। একটু অস্বস্তিকর হলেও ভাল লাগে। জানি না মানুষের সঙ্গে এখন কিছুটা নরম ভাবে কথা বলি কি না।’’
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে নিজের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা বলেছিলেন বর্ডার। সে বার অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘‘আমার বয়স এখন ৬৮। ৮০ বছর পর্যন্ত বাঁচলে অবিশ্বাস্য ব্যাপার হবে। আমার এক বন্ধু আছেন। তিনি চিকিৎসক। তাঁকেও ঠিক এই কথাটাই বলেছিলাম এক বার। সে-ও মেনে নিয়েছে ৮০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকলে সেটা অলৌকিক হবে।’’ বর্ডার জানেন, জীবনের খুব বেশি দিন হয়তো বাকি নেই তাঁর। বাকিটুকুও উপভোগ করতে চান। নিজেকে যতটা সম্ভব সচল রাখতে চান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৫৬টি টেস্ট খেলেছেন বর্ডার। ৯৩টি টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্বের প্রথম ব্যাটার হিসাবে টেস্টে ১১ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছেছিলেন। দেশের হয়ে ২৭৩টি এক দিনের ম্যাচও খেলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালে প্রথম বার এক দিনের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।