বল বিকৃতির ঘটনায় অনুতপ্ত টিম পেন। —ফাইল চিত্র
চার বছর আগে বল বিকৃতির অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট। বল বিকৃতির অভিযোগে নির্বাসিত হয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ, ক্যামেরন ব্যাঙ্করফ্ট ও ডেভিড ওয়ার্নার। সেই ঘটনা নিয়ে এত দিন পরে মুখ খুললেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক টিম পেন। তাঁর অভিযোগ, পরের টেস্টেই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররাও বল বিকৃত করেছিল। কিন্তু সেই বিষয়ে কোনও জলঘোলা হয়নি। কেউ শাস্তিও পায়নি। একই অভিযোগে কেন তাদের দলের ক্রিকেটারদেরই শাস্তি দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন পেন।
আত্মজীবনীতে তিনি জানিয়েছেন, কেপটাউনে বল বিকৃতির ঘটনার পরের টেস্টেও একই ঘটনা ঘটেছিল। লিখেছেন, ‘‘আমি নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে ছিলাম। হঠাৎ একটা বল আমার সামনে আসে। দেখি, বলের এক প্রান্ত পুরো বিকৃত। টেলিভিশনেও সেটা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আমরা যখন অভিযোগ করেছিলাম তখন আম্পায়াররা তাতে গুরুত্ব দেননি। পরে শুনেছিলাম, টেলিভিশন ফুটেজও হারিয়ে গিয়েছে। এর থেকে কী প্রমাণিত হয়?’’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করলেও তাঁরা দোষ করেছিলেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন পেন। জানিয়েছেন, বল বিকৃত করার কোনও পরিকল্পনা তাঁদের ছিল না। ব্যাঙ্করফ্ট যে স্যান্ডপেপার লুকিয়ে রেখেছিলেন, সেটাও তিনি জানতেন না। পেন লিখেছেন, ‘‘আম্পায়াররা যখন ব্যাঙ্করফ্টের পকেটে স্যান্ডপেপার পেল তখন আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম। ওটা কী ভাবে ওর কাছে গেল সেটাই বুঝতে পারছিলাম না।’’
পেনের অভিযোগ, গোটা সিরিজ ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা তাঁদের উত্তেজিত করছিল। বিশেষ করে ওয়ার্নারকে নিশানা করা হয়েছিল। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত বলে জানিয়েছেন তিনি। আত্মজীবনীতে পেন লিখেছেন, ‘‘ব্যাট করার সময় ওয়ার্নারের স্ত্রীকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছিল ডি’কক। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারত। আমি সামলেছিলাম। ওয়ার্নারও মাথা ঠান্ডা রেখেছিল।’’
তবে পেনের পাল্টা অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি। তাঁর অভিযোগ, প্রথম টেস্ট থেকেই বল বিকৃত করছিল অস্ট্রেলিয়া। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘‘স্টার্কের বল যে ভাবে সুইং করছিল তাতে আমাদের সন্দেহ হচ্ছিল বলের সঙ্গে কিছু করা হয়েছে। আমাদের সাজঘর থেকে দূরবিন দিয়ে ব্যাপারটা বোঝা যায়। আমরা দেখি, বার বার ওয়ার্নার ও ব্যাঙ্করফ্টের কাছে বল যাচ্ছে। ওরা পকেট থেকে কিছু বার করছে। তার পরে আমরা আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ করি।’’
শুধু বল বিকৃতি নয়, তাঁর অধিনায়কত্ব যাওয়া নিয়েও আত্মজীবনীতে লিখেছেন পেন। জানিয়েছেন, জোর করে তাঁর অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তিনি লিখেছেন, ‘‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যে আমাকে অধিনায়ক রাখতে চাইছে না সেটা পরিষ্কার ছিল। কিন্তু ওরা নিজের মুখে সেটা আমাকে বলতে পারেনি। তার জন্য এক জনকে নিয়োগ করেছিল। ওরা আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে আমাকে অধিনায়কত্ব ছাড়তে বাধ্য করেছে। ওরা আমার পাশে না থাকায় আমার কিছু করার ছিল না।’’
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এক মহিলাকর্মী পেনের বিরুদ্ধে যৌন উদ্দীপক মেসেজ পাঠানোর অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগে অধিনায়কত্ব যায় তাঁর। পেনের অভিযোগ, সেই সময় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও নিক হকলে তাঁর সমর্থনে একটি কথাও বলেননি। তিনি সম্পূর্ণ চুপ করে ছিলেন। তখনই তিনি বুঝে যান, তাঁকে অধিনায়ক হিসাবে চাইছে না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তাই তিনি সরে যান।