(বাঁ দিকে) স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল লাইন। হুড়োহুড়ির পর পড়ে রয়েছে প্রচুর জুতো (ডান দিকে)। ছবি: সমাজমাধ্যম।
১৩ বছর পর রঞ্জি খেলতে নেমেছেন বিরাট কোহলি। তাঁকে দেখতে ভিড় উপচে পড়েছে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে। মাঠে ঢোকার লাইনে হুড়োহুড়ি হয়। পদপিষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন বহু দর্শক। কুম্ভমেলায় প্রবল ভিড়ে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লির রঞ্জি ম্যাচেও যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত। খেলা চলাকালীন মাঠেও ঢুকে পড়েন এক যুবক।
কোহলির খেলা যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ দেখতে পারেন, সেই কারণে এই ম্যাচের কোনও টিকিট রাখেনি দিল্লি ক্রিকেট সংস্থা। ফলে সকাল ৮টা থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় জমতে শুরু করে। তিনটি গেট দিয়ে দর্শকদের মাঠে ঢোকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই কারণেই এক একটি গেটের বাইরে ভিড় অনেক বেশি ছিল। সকাল ৯টা নাগাদ গেট খোলা হয়। টিকিট না থাকায় সকলেই আগে মাঠে ঢুকে ভাল জায়গায় বসার চেষ্টা করছিলেন। সেই কারণেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অনেকে ঠেলাঠেলি করতে শুরু করেন। তার ফলে লাইনের সামনের দিকে থাকা দর্শকেরা সমস্যায় পড়েন। অনেকে আপত্তি জানান। তাতেও সমস্যা মেটেনি। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। তাতে অনেকে মাটিতে পড়ে যান। তাঁদের উপর দিয়ে কিছু দর্শক যাওয়ার চেষ্টা করেন। পদপিষ্ট হয়ে অনেকে আহত হন। অনেক দর্শকের কোলে বাচ্চা ছিল। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। বরাতজোরে বেঁচে যান সকলে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খান নিরাপত্তারক্ষীরা। এক জন নিরাপত্তারক্ষীও আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পরে ক্ষোভ দেখান অনেক দর্শক। পুলিশের কয়েকটি বাইকও ভাঙচুর হয়। ঘটনা শেষে দেখা যায়, ধাক্কাধাক্কি ও পদপিষ্টের প্রমাণ হিসাবে স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে অসংখ্য জুতো পড়ে রয়েছে। ভিড় সামলাতে বাধ্য হয়ে আরও একটি গেট খুলতে হয়। আহতদের উদ্ধার করে মাঠেই তাঁদের চিকিৎসা হয়। তাঁদের অনেককে বাড়িও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
ম্যাচ শুরু হওয়ার পরে দর্শকদের উন্মাদনা আরও বাড়ে। যত বার জায়ান্ট স্ক্রিনে কোহলিকে দেখানো হয়েছে, তত বার চিৎকার হয়েছে। দিল্লি প্রথমে বল করছে। সুতরাং মাঠেই রয়েছেন কোহলি। স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা কোহলিকে ছুঁতে মাঠে নেমে পড়েন এক যুবক। কোহলিকে প্রণাম করেন তিনি। তার পরে তাঁকে ধরে বাইরে নিয়ে যান নিরাপত্তারক্ষীরা। এই ঘটনার পরে দেখা যায়, বাউন্ডারির বাইরে পায়চারি করছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কোনও ভাবেই যাতে দ্বিতীয় বার এই ঘটনা না ঘটে তার জন্য সতর্ক রয়েছেন তাঁরা।
প্রয়াগরাজে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে। মৌনী অমাবস্যায় ‘শাহি স্নান’ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুণ্যার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভের মেলাপ্রাঙ্গণে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ভিড়ও। রাত ১২টার পর থেকেই ভিড়ের ছবিটা বদলাতে শুরু করে। রাত ২টো নাগাদ পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। প্রশাসন ভেবেছিল, পুণ্যার্থীরা আসবেন, তার পর স্নান সেরে আবার ফিরে যাবেন। কিন্তু স্নানের পরেও বহু পুণ্যার্থী সঙ্গমস্থলের আশপাশেই ছিলেন। অনেকে আবার প্লাস্টিক পেতে মাটিতে শুয়েও ছিলেন। রাত ২টোর পর বহু পুণ্যার্থী ব্যারিকেড টপকে, ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন। অনেকে ব্যারিকেড টপকে হুড়মুড়িয়ে গিয়ে পড়েন ঘুমন্ত পুণ্যার্থীদের গায়ে। তার জেরেই দুর্ঘটনা। এই ঘটনায় সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে। যদিও অন্য সূত্রে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। সেই পরিস্থিতি হতে পারত দিল্লিতেও। কোনও রকমে পরিস্থিতি সামলেছে প্রশাসন।