জেমস অ্যান্ডারসন। —ফাইল চিত্র।
লর্ডস টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে আড়াই দিনে ইনিংস এবং ১১৪ রানে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ড। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন জেমস অ্যান্ডারসন। জীবনের শেষ টেস্টে ৪ উইকেট নিয়ে ৪১ বছরের বোলার বুঝিয়ে দিলেন, আরও কিছু দিন খেলতে পারতেন। শেষ টেস্টেও একটি মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। বেন স্টোকসেরা আগামী দিনে অ্যান্ডারসনের অভাব অনুভব করতে পারেন।
প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ১২১ রান করে। জবাবে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের রান ৩৭১। ২৫০ রানে পিছিয়ে থাকা সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হল ১৩৬ রানে। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের দ্বিতীয় ইনিংসের রান ছিল ৬ উইকেটে ৭৯। খাদের কিনারায় থাকা ক্রেগ ব্রেথওয়েটরা হার ঠেকাতে পারলেন না। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের সামনে সফরকারী ব্যাটারদের বেশ অসহায় দেখিয়েছে গোটা ম্যাচেই। ৪১ বছরের অ্যান্ডারসনের বল সামলাতেও সমস্যা পড়েছেন তাঁরা। বলের গতি আগের মতো না থাকলেও, অভিজ্ঞতা দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ব্যাটারদের পরীক্ষা নিয়েছেন অ্যান্ডারসন। ৭০৪টি টেস্ট উইকেট নিয়ে ক্রিকেটজীবন শেষ করা অ্যান্ডারসন বিশ্বের প্রথম জোরে বোলার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০ হাজার বল করার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন লর্ডসে।
ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ় প্রথম টেস্ট শুরুতেই ছিল অ্যান্ডারসনময়। আগেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল, এই ম্যাচ খেলেই ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন প্রবীণ ক্রিকেটার। তাই তাঁর দিকে ক্রিকেটপ্রেমীদের আলাদা নজর ছিল। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট পেলেও বেমানান দেখায়নি অ্যান্ডারসনকে। ১০.৪ ওভার বল করে ২৬ রান দিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য ক্রিকেটপ্রেমীদের মন ভরেনি। তাঁরা শেষ টেস্টে প্রিয় জিমির কাছে আরও আগ্রাসী বোলিং আশা করেছিলেন। ভক্তদের আক্ষেপ দ্বিতীয় ইনিংসে মিটিয়ে দিয়েছেন অ্যান্ডারসন। ৩০ রান খরচ করে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কিছুটা আবেগপ্রবণ দেখিয়েছে অ্যান্ডারসনকে। চোখের কোণ চিক্চিক্ করেছে তাঁর। গত দু’দশক ধরে বিশ্বের তাবড় ব্যাটারদের রাতের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়া অ্যান্ডারসন নিজেকে সংযত রেখেছেন। বার বার তাঁর চোখ গিয়েছে লর্ডসের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হাউসে থাকা পরিবারের দিকে। তাকিয়েছেন গ্যালারির দিকে। এই গ্যালারিই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তাঁর অবসরে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের একটা যুগের অবসান ঘটল।
দল আড়াই দিনে জয় পেলেও আফসোস নিয়েই ক্রিকেটজীবন শেষ করলেন অ্যান্ডারসন। ম্যাচের পর বললেনও সে কথা। নিজের বলে গুদাকেশ মৈতির ক্যাচ ধরতে পারেননি। ক্যাচ ধরতে পারলে আরও আগে শেষ হয়ে যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ইনিংস। কারণ, তখন ৯ উইকেট পড়ে গিয়েছিল সফরকারীদের। এ নিয়ে অ্যান্ডারসন ম্যাচের পর বলেছেন, ‘‘ক্যাচটা ফেলে দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে শেষ সপ্তাহটা ভালই কাটল। সতীর্থদের সঙ্গে উপভোগ করলাম। বহু মানুষ আমাকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সত্যিই আমি মুগ্ধ। অভিভূত। ক্রিকেটজীবন নিয়ে আমি তৃপ্ত। এক জন জোরে বোলার হিসাবে ২০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সহজ নয়। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা আমার কাছে বিশ্বের সেরা কাজ। অসংখ্য স্মৃতি আমার সঙ্গী। পরিবারের সকলকে, সব সতীর্থ-কোচদের এবং সংশ্লিষ্টদের সাহায্য ছাড়া এত দূর আসা সম্ভব ছিল না। তাই সকলকে ধন্যবাদ। আমি ভাগ্যবান, দুর্দান্ত কিছু ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি।’’
অ্যান্ডারসনের জন্য লর্ডস টেস্টের বাকি সব কিছুই যেন খানিকটা গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে। নিয়মরক্ষার হয়ে গিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের কোনও ক্রিকেটারই ব্যাট বা বল হাতে তেমন পারফর্ম করেননি, যা অ্যান্ডেরসনের অবসরের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য হতে পারে। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারেরা অবশ্য সিনিয়র সতীর্থকে শেষ টেস্টে স্মরণীয় জয় উপহার দিতে চেষ্টার খামতি রাখেননি। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে ৭ উইকেট নেওয়া অভিষেক হওয়া গ্যাস অ্যাটকিনসন দ্বিতীয় ইনিংসে ৬১ রানে ৫ উইকেট নিলেন। ম্যাচে তাঁর ১২টি উইকেট। এ ছাড়া স্টোকস ২৫ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের পক্ষে সর্বোচ্চ রান মৈতির অপরাজিত ৩১। বলার মতো ইনিংস কেউই খেলতে পারেননি। জেসন হোল্ডার করেছেন ২০। অ্যালিক আথানেজ়ের ব্যাট থেকে এসেছে ২২ রানের ইনিংস। ইনিংসে হার বাঁচানোর জন্য যে রকম লড়াই প্রয়োজন ছিল, তা করতে পারেননি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারেরা। তাদের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল ৪১.৪ ওভারে। আর দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়েছে ৪৭ ওভারে। অর্থাৎ, দু’ইনিংস মিলিয়েও ৯০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়।