ক্যারিবিয়ান শিবিরের প্র্যাক্টিস শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দেখা যায় ইডেনের বাইশ গজ থেকে ঘাস ওড়ানো হচ্ছে। শোনা যায়, ভারতীয় শিবির ঘাস চায়নি উইকেটে।
পর্যবেক্ষণ: বাইশ গজে কড়া নজর কোচ দ্রাবিড়ের। নিজস্ব চিত্র।
ইডেনে টি-টোয়েন্টি সিরিজ় শুরু হওয়ার আগের দিন যত নাটক পিচকে কেন্দ্র করে। শোনা যাচ্ছে, উইকেট নিয়ে চাপা অসন্তোষ দুই শিবিরে।
ম্যাচের ৪৮ ঘণ্টা আগে পিচে সবুজ ঘাস দেখা গিয়েছিল। যা নাকি খুব একটা খুশি করেনি ভারতীয় দলকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির আবার ক্ষুব্ধ প্র্যাক্টিস পিচের অসমান বাউন্স নিয়ে। মঙ্গলবার দুপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনুশীলন চলাকালীন ইডেনের বাঁ-প্রান্তের প্রথম প্র্যাক্টিস পিচে ব্যাট করার সময় তলপেটে বল আছড়ে পড়ে ফাবিয়েন অ্যালেনের। ঠিক তখনই নেট থেকে বেরিয়ে আসেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। সেই নেটেই প্রবেশ করেন জেসন হোল্ডার। থ্রো-ডাউন বিশেষজ্ঞের ছোড়া বলে আঘাত পান হোল্ডারও। কোচ ফিল সিমন্সের কাঁধে ভর দিয়ে নেট থেকে বেরিয়ে আসেন তিনিও। তার পর থেকে কোনও ব্যাটসম্যানই সেই পিচে জোরে বোলারের বিরুদ্ধে ব্যাট করতে চাইছিলেন না। একটি বল কাঁধের কাছে উঠছে তো অন্যটি নিচু হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে থ্রো-ডাউন বিশেষজ্ঞ গতি কমিয়ে অনুশীলন করাতে শুরু
করেন পোলার্ডদের।
ক্যারিবিয়ান শিবিরের প্র্যাক্টিস শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দেখা যায় ইডেনের বাইশ গজ থেকে ঘাস ওড়ানো হচ্ছে। শোনা যায়, ভারতীয় শিবির ঘাস চায়নি উইকেটে। এই ভারতীয় দলে ১৪৫-১৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় ক্রমাগত বল করে যাওয়ার মতো পেসার সে ভাবে নেই। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা খেলছেন না। যুজ়বেন্দ্র চহালদের স্পিনই এই সিরিজে রোহিত শর্মাদের প্রধান অস্ত্র। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয় বোলিং আক্রমণ ঘাসহীন পিচেই বেশি মানানসই।
ঘাস সরিয়ে নেওয়ার সেই দৃশ্য দেখে কায়রন পোলার্ড ও ফিল সিমন্স কথা বলতে যান ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ইডেনের আপার টিয়ার থেকে দেখা গেল, দু’তরফের মধ্যে কথোপকথন চলে কিছু সময় ধরে। বিকেলের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্র্যাক্টিস পিচ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। পিচ প্রস্তুতকারকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্র্যাক্টিস পিচে আগে কোনও দল অনুশীলন করেছে কি না। যখন তাঁরা জানতে পারেন, সেখানে এই মরসুমে কোনও দল অনুশীলন করেনি, তখন নাকি পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, তাঁদের প্রস্তুতির জন্য নতুন পিচ দেওয়া হল কেন? এমন পিচ দেওয়া হবে কেন যেখানে ম্যাচের আগের দিন চোট পাওয়ার আশঙ্কা থাকে? পরিস্থিতি সামলাতে ডেকে পাঠানো হয় বোর্ডের পিচ প্রস্তুতকারকে। তিনি এসেই নাকি পরিস্থিতি সামলান। মঙ্গলবার ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে এসে বাইশ গজ নিয়ে পোলার্ড বলেন, ‘‘স্পোর্টিং উইকেটই করা হয়েছে। ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলারদের জন্যও পিচে কিছু আছে। তবে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতেই পারে।’’
সোমবার ভারতীয় দল যখন অনুশীলনের পরে হোটেলে ফিরে যায়, তখনও পিচে ঘাস ছিল। মঙ্গলবার রোহিত, চহাল, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও শার্দূল ঠাকুর অনুশীলনে না এলেও কোচ রাহুল দ্রাবিড় ছিলেন। ভারতীয় দলের কোচ মাঠে এসেই চলে যান ইডেনের বাইশ গজে। পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে আলোচনার পরেই দেখা যায় মাঠকর্মীরা এসে পিচে জল দিচ্ছেন। তার কিছুক্ষণ পরেই ছোট রোলার চালানো হয় পিচের উপরে। পিচের চরিত্র এই অল্প সময়ে কতটা বদলাবে, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন থাকছে। তবে এতটাই ঘাস ছেঁটে ফেলা হয়েছে যে, দূর থেকে দেখে সবুজের কোনও আভাই পাওয়া যাচ্ছে না। পিচের সঙ্গে প্রশ্ন থাকছে শিশির নিয়েও। তবে দুই অধিনায়ক— রোহিত বা পোলার্ড, কেউই শিশির নিয়ে বেশি চিন্তা করতে রাজি নন।
ভারতীয় দলের অনুশীলন শেষে মাঠে আসেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়াকেও আসতে দেখা যায়। সৌরভকে দেখা যায় দূরত্ব মেনে দ্রাবিড়ের সঙ্গে কথা বলছেন। পিচ প্রস্তুতকারদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। নিজে পিচে গিয়ে হাত দিয়ে দেখেন কী অবস্থা।
তাতে কী ফল হল, বুধবার ম্যাচেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।