আপ্লুত: বিশ্বকাপ জয়ের পরে অ্যামব্রোজের সঙ্গে রবি। ইনস্টাগ্রাম
টেস্টে ৪০৫টি উইকেটের মালিক। ১৭৬ ওয়ান ডে ম্যাচে উইকেটসংখ্যা ২২৫। তাঁর গতি ও বাউন্স রীতিমতো রাতের ঘুম কেড়ে নিত বিপক্ষ ব্যাটারদের। ওয়ান ডে ক্রিকেটে তাঁর মতো বিধ্বংসী বোলিং আর দেখা যায় না। কিন্তু কোনও তরুণ পেসারকে উঠে আসতে দেখলে এখনও উত্তেজনা চেপে রাখতে পারেন না কার্টলি অ্যামব্রোজ। নির্দ্বিধায় সেই তরুণ পেসারকে পরামর্শ দেন। ঠিক যেমনটা ঘটেছে ভারতের দুই অনূর্ধ্ব-১৯ পেসার রবি কুমার এবং রাজ বাওয়ার সঙ্গে।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চলাকালীন কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান পেসারের সঙ্গে এক বার দেখা হয়েছিল রবির। তখনও ফাইনালে পৌঁছয়নি ভারত। ‘রবি’ নাম জনপ্রিয় হয়নি তখনও। ফাইনালে চার উইকেট পাওয়া রবির বোলিং অবশ্য মাঠে বসে দেখেন অ্যামব্রোজ।
যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে ভারতীয় দূতাবাসে নৈশভোজের আমন্ত্রণ ছিল ভারতীয় দলের। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অ্যামব্রোজও। বাংলার পেসার সাহস করে এগিয়ে যান তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য। অ্যামব্রোজ ফিরিয়ে দেননি।
এ বারের যুব বিশ্বকাপে দশ উইকেটের মালিককে কী বললেন কিংবদন্তি? আমস্টারডাম বিমানবন্দর থেকে আনন্দবাজারকে ফোনে রবি বললেন, ‘‘শুরুতে কথা বলতে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম। রাজ আমাকে বলল, আমরা দু’জনে ফাইনালে ভাল বল করেছি। উনি নিশ্চয়ই দেখেছেন। চল, নিজেরা গিয়েই কথা বলি।’’ যোগ করেন, ‘‘সাহস করে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আমাদের দেখেই চিনতে পারেন অ্যামব্রোজ স্যর। অভিনন্দনও জানালেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।’’
রবি বলে চলেন, ‘‘আমি ও রাজ যে বল সুইং করাতে পারি, সেই তথ্য আগেই তাঁর কাছে ছিল। বলছিলেন, আমার হাতে ভাল সুইং আছে। রাজকে দেখেও বলে দিলেন, তোমার হাতে ভাল বৈচিত্র আছে। দু’জনকেই এ বার গতি বাড়ানোর কাজ করতে বললেন।’’ তরুণ বাঁ-হাতি পেসার আরও বললেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকার জন্য ফিটনেস কতটা জরুরি, তা-ও আমাদের বুঝিয়েছেন অ্যামব্রোজ স্যর। আমরা কথা বলার সময় হাঙ্গারগেকর, ভাসু বৎসরাও এসে দাঁড়ায়। অ্যামব্রোজ স্যর সবাইকেই বলছিলেন, ব্যাটারকে এমন লেংথে বল করতে হবে যাতে তারা প্রভাবিত হয়ে শট খেলতে চলে যায়। গতি বাড়াতে গিয়ে সুইংয়ের সঙ্গে আপস করলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, গতির সঙ্গে সুইংয়ের মিশেলই ব্যাটারকে পরাস্ত হতে বাধ্য করে।’’
কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলারের পরামর্শ পেয়ে রবি আপ্লুত। বলছিলেন, ‘‘ওঁর মতো এত বড় এক জন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আসলে জড়তা হচ্ছিল। যদি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারতাম, আর একটু সাহসী হতে পারতাম, তা হলে হয়তো আরও অনেক কথা জানতে চাইতাম। তবুও যতটা তাঁর মুখ থেকে শুনেছি, অমূল্য পরামর্শ হয়ে থাকবে। এমনিতেই আমার লক্ষ্য গতি কিছুটা বাড়ানো। অ্যামব্রোজ স্যার বলে দেওয়ায় সাহসটা বাড়ল।’’
আজ, মঙ্গলবার রাতে আমদাবাদ পৌঁছবেন রবিরা। বুধবার তাঁদের সংবর্ধনা দেবে ভারতীয় বোর্ড। সেখান থেকে রবির ইচ্ছে রয়েছে আলিগড়ে ঘুরে আসা। কিন্তু বিশেষ সূত্রের খবর আজ, মঙ্গলবার বাংলার রঞ্জি ট্রফির দল ঘোষণা রয়েছে। যে তালিকায় রাখা হচ্ছে রবিকে। সে ক্ষেত্রে বাড়ি ঘুরে আসার সময় পান কি না, দেখার।
বাংলার আরও এক ক্রিকেটারকেও উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিশ্বকাপের মাঝে। তিনি অভিষেক পোড়েল। বাঁ-হাতি উইকেটকিপার-ব্যাটারের সঙ্গে বিমানবন্দরে দেখা হয়ে যায় কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার। অ্যান্টিগা থেকে তিনিও বার্বেডোজ যাচ্ছিলেন। ভারতীয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যকে দেখে লারা অভিনন্দন জানান। অভিষেক বলছিলেন, ‘‘আমাকে উনি বললেন, ভাল করে ব্যাট করতে হবে। সামনে অনেক বড় রাস্তা পড়ে রয়েছে। অনেক বাধা আসবে। মানসিক ভাবে যেন আমি ভেঙে না পড়ি।’’
লারার মতো কিংবদন্তির পরামর্শ পাওয়ার পরে টগবগে হয়ে গিয়েছেন অভিষেক। বলছিলেন, ‘‘লারার মতো কিংবদন্তিকে সামনে থেকে দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কী কথা বলব বুঝতে পারছিলাম না। গিয়ে বলেছিলাম, স্যর একটা সেলফি নেব? তখন ব্রায়ান স্যর নিজেই আমাকে বিশ্বকাপ জেতার জন্য অভিনন্দন জানান। আর সেই সঙ্গে দিয়ে গেলেন অমূল্য ওই পরামর্শ।’’ অভিষেক যোগ করলেন, ‘‘ছবিটা তোলার পরে আমি ভাবছিলাম, সত্যি আমার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটল? যাঁর খেলা এখনও ইউটিউবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি, তাঁর সঙ্গে আমি সত্যি ছবি তুলতে পারলাম? এই ঘটনা ভোলার নয়।’’
রবিরা আমস্টারডামে পৌঁছে গেলেও অভিষেকরা এখনও বার্বেডোজে রয়েছেন। ভারতীয় সময় মধ্যরাতে তাঁদের বিমান। অভিষেকদের সঙ্গেই ফিরছেন জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান ভিভিএস লক্ষ্মণ। বাকিরা কোচ হৃষীকেশ কানিতকরের সঙ্গে আমস্টারডামে পৌঁছে গিয়েছেন। সেখান থেকে উড়ে যাবেন দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে আমদাবাদের বিমানে উঠে পড়বেন তাঁরা। সঙ্গে থাকবে বিশ্বকাপ ও একাধিক নতুন অভিজ্ঞতা। আমদাবাদে রোহিত, বিরাটদের উপস্থিতিতে সংবর্ধনা হতে পারে তাঁদের।