সচিন তেন্ডুলকর। —ফাইল ছবি
প্রায় আড়াই দশক খেলার পর ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান সচিন তেন্ডুলকর। তাঁর নিজের শহর মুম্বইয়ে সে বছর ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট ছিল সচিনের ২০০ তম টেস্ট। এর পর আর কখনও বাইশ গজে দেখা যায়নি বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটারকে। একটি ইউটিউব চ্যানেলে ক্রিকেট জীবনের শেষের সে দিনের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন সচিন। পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতিচারণাও করেছেন সচিন।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সারদাশ্রম স্কুল, শিবাজি পার্ক, করাচির প্রথম টেস্ট, প্রয়াত বাবা রমেশ তেন্ডুলকর -এমন নানা স্মৃতি ভিড় করছিল তাঁর মনে। মাথায় তোয়ালে দিয়ে সাজঘরের এক কোনে একা বসেছিলেন। মাঝে মাঝেই বাধ না মানা চোখের জল মুছছিলেন তিনি। সে সময় তাঁর কাছে আসেন বিরাট কোহলী। সচিনকে উপহার স্বরূপ একটি তাগা (সুতো) দেন বিরাট। যেটি বিরাটকে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা প্রেম কোহলী। সে সম্পর্কে সচিন বলেছেন, ‘‘কিছুক্ষণ আমার কাছে রাখার পর বিরাটকে সুতোটা ফেরত দিয়ে দিই। ওকে বলেছিলাম, এটা অমূল্য। শুধু তোমার কাছেই থাকতে পারে। এটা তোমার সম্পদ। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এটা তোমার কাছেই থাকা উচিত।’’ ক্রিকেট জীবনের বিশেষ এই স্মৃতি তাঁর পক্ষে ভোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সচিন।
কিন্তু কেন সেই তাগাটি সচিনকে দিয়েছিলেন কোহলী? মাস্টার ব্লাস্টারকে সে কথাও বলেন কোহলী। কোহলী বলেছিলেন, ‘‘ভারতের বহু মানুষই হাতের কব্জিতে তাগা বাঁধেন। আমার বাবাও তাই বাঁধতেন। যখন এটা আমাকে দেন, তখন থেকেই এটা আমার ব্যাগে থাকে। সব সময় কাছে রাখি। মনে হয়েছিল এটাই আমার কাছে সব থেকে মূল্যবান জিনিস। সেটাই আমি তোমাকে দিতে চাইছি। কারণ, তুমি আমাদের কী ভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন, তুমি আমাদের সকলের কাছে ঠিক কী, তা সকলকে বোঝাতেই এই ক্ষুদ্র উপহারটি তোমার জন্য। তোমাকে এর থেকে মূল্যবান আর কিছুই দেওয়া সম্ভব নয়।’’
ক্রিকেট জীবনের স্মৃতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতিও উঠে এসেছে সচিনের কথায়। এসেছে বিয়ের প্রসঙ্গ। পাঁচ বছরের প্রেমের পর অঞ্জলিকে বিয়ে করেন সচিন। এ নিয়ে সচিন জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে স্বচ্ছন্দবোধ করতেন না। তাই অঞ্জলিকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন দু’পরিবারের সঙ্গে কথা বলার। ১৯৯০ সালের শুরু দিকে একটি আন্তর্জাতিক সফর শেষে দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে প্রথম দেখেন অঞ্জলিকে। প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায় সচিনের। অঞ্জলি তখন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।
সচিন বলেছেন, ‘‘১৯৯৪ সালে ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে ভাল ছন্দে ছিলাম। আমার মেজাজও ছিল ফুরফুরে। সে সময়ই জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করার কথা বলে অঞ্জলি। বলেছিল, আমাদের এবার বিয়ে করা উচিত। উত্তরে আমি সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ বলে দিই।’’ তবে দু’পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি বাইশ গজে ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আক্রমদের সামলানো সচিন। বলেছেন, ‘‘অঞ্জলিকে বলি দু’পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ওর বাবা-মাকে আমাদের বিষয়টা বলতে। আমার পক্ষে বা়ড়িতে বলা সম্ভব ছিল না। একটু খারাপ লাগলেও ওকেই দায়িত্ব দিয়েছিলাম।’’