ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে কড়া বিসিসিআই। —ফাইল ছবি
কোনও কোনও ক্রিকেটার কি ফিটনেস সমস্যা লুকোচ্ছেন? ঠিক মতো মানছেন না ফিজিয়ো, ট্রেনারদের নির্দেশ? ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্ন আরও বড় হয়ে উঠল।
হার্দিক পাণ্ড্য আইপিএলের জন্য অনুশীলন শুরু করলেও তাঁর সুস্থতা নিয়ে অন্ধকারে জাতীয় নির্বাচকরা। কয়েক দিন আগেই নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা কড়া বার্তা দিয়েছেন এই অলরাউন্ডারকে। হার্দিকের সুস্থতা সম্পর্কে ধোঁয়াশা চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। সূত্রের খবর এমন ঘটনায় বিরক্ত বোর্ড কর্তারা। অধিনায়ক রোহিত শর্মা-সহ কয়েক জন ক্রিকেটারের মধ্যে নাকি ফিটনেস নিয়ে শিথিলতা এসেছে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও একাধিক ক্রিকেটারের ফিটনেস নিয়ে খুশি নন। তাই কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলাতে চাইছেন বোর্ড কর্তারা।
আইপিএলের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সহ ঠাসা সূচি রয়েছে ভারতীয় দলের। আগামী বছর রয়েছে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। দেশের সেরা ক্রিকেটাররা যাতে সেই সূচির ধকল নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চায় বিসিসিআই। সেরা ক্রিকেটারদের চোট আঘাত থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখাই লক্ষ্য।
জানানো হয়েছে, এখন থেকে বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ সব ক্রিকেটারকে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ফিটনেস সংক্রান্ত নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। এনসিএ-র ট্রেনার, ফিজিওরা এবং জাতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের সঙ্গে। আইপিএল চলার সময়ও চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের মেনে চলতে হবে নির্দেশিকা। তাঁরা যে ফ্র্যাঞ্চাইজিতেই খেলুন, যে রকম ট্রেনিংই করুন, এনসিএ-র নির্দেশিকা মেনেই করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকেও এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠিয়েছে বোর্ড।
ফ্রাঞ্চাইজির ট্রেনার বা ফিজিওর নির্দেশ না মানলে সমস্যা হতে পারে বলে ভারতীয় দলের একাধিক ক্রিকেটার জানিয়েছেন। কিন্তু দ্রাবিড়ের স্পষ্ট বার্তা, আইপিএল খেলতে হয় দু’মাস। বাকি ১০ মাস দেশের হয়ে খেলতে হয়। সেই মতোই পরিকল্পনা করা উচিত। এনসিএ-র ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের উপর আস্থা রাখতে হবে। তিনি ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিয়েছেন, আইপিএলের সময় এনসিএ-র নির্দেশিকা মেনে চলতে সমস্যা হলে বোর্ডকে জানাতে। কিন্তু নির্দেশ কোনও ভাবেই অমান্য করা যাবে না।
এনসিএ-র বিশেষজ্ঞরা এবং কোচ দ্রাবিড় ক্রিকেটারদের ফিটনেস সংক্রান্ত রিপোর্ট দেবেন বোর্ড কর্তা এবং জাতীয় নির্বাচকদের। দল নির্বাচনের সময় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে সেই রিপোর্টকে। যত বড় তারকাই হোন, ফিটনেসে ঘাটতি থাকলে আর দলে ঠাঁই হবে না। ক্রিকেটারদের ফিটনেস সংক্রান্ত ধোঁয়াশায় বিরক্ত বিসিসিআই।
চুক্তি বদ্ধ ক্রিকেটারদের শারীরিক সক্ষমতার উপর নজর রাখতে একটা কেন্দ্রীয় পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে। যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে এনসিএ-র প্রধান ভিভিএস লক্ষ্মণেরও। মূলত চলতি মরসুমের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং আগামী বছরের বিশ্বকাপে দেশের সেরা ক্রিকেটারদের সেরা অবস্থায় পেতে চায় বোর্ড। চোট আঘাত বা ফিটনেস সংক্রান্ত সমস্যা যাতে সেরা দল গঠনে বাধা না হয়, সেটাই লক্ষ্য বোর্ডের।
বোর্ড সচিব জয় শাহ জানিয়েছেন, দল নির্বাচনের সময় চুক্তিবদ্ধ সব ক্রিকেটারকে বিবেচনা করতে চান তাঁরা। চুক্তিবদ্ধ যে সব ক্রিকেটার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দলে নেই, তাঁদের নিয়ে দু’সপ্তাহের ফিটনেস শিবির চলছে এনসিএ-তে। এ নিয়ে জয় বলেছেন, ‘‘ফিটনেসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চাইছি আমরা। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হোক বা কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ, আমরা চাই ক্রিকেটাররা মাঠে নামুক চূড়ান্ত শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে। এনসিএ-তে ফিটনেস শিবির চলছে। আগামিদিনে এমন শিবির আরও হবে। চুক্তিবদ্ধ সব ক্রিকেটারকে একই রকম ট্রেনিং সূচির মধ্যে থাকতে হবে।’’
বছর দুয়েক আগে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের জন্য রোহিত শর্মাকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি এবং এক দিনের সিরিজের দলে রাখা হয়নি। তাঁকে বিশ্রামে রাখতে চেয়ে ছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। কিন্তু দল ঘোষণার এক দিন পরেই আইপিএল ফাইনাল খেলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক। এখন থেকে আর চুক্তিবদ্ধ কোনও ক্রিকেটারের চোট থাকলে, তাঁকে জোর করে খেলাতে পারবে না আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিও।