উচ্ছ্বাস: সেঞ্চুরি করে পরিচিত অসি-উৎসব জাডেজার। রয়টার্স
গত এক মাসে ইংল্যান্ডের এই টেস্ট দলকে নিয়ে কম নাচানাচি হয়নি। বেন স্টোকসের নেতৃত্বে এবং ব্রেন্ডন ম্যাকালামের কোচিংয়ে দারুণ আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে এজবাস্টন টেস্টের বৃষ্টি বিঘ্নিত প্রথম দু’দিনের খেলা দেখে কারও নিশ্চয়ই বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, দু’টো দলের মধ্যে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলছে কারা।
প্রথম দিনে ঋষভ পন্থের আক্রমণাত্মক সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় দিনে রবীন্দ্র জাডেজার শৃঙ্খলাপরায়ণ শতরান আর ব্যাট-বলে যশপ্রীত বুমরার বিধ্বংসী হয়ে ওঠা। ব্যাটে বিশ্বরেকর্ড করার পরে বুমরার আগুনে বোলিং। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ইংল্যান্ড। মনে রাখতে হবে, অসমাপ্ত সিরিজ়ে ২-১ এগিয়ে থাকা ভারতের এই টেস্ট ড্র করলেই চলবে। ইংল্যান্ডের জেতা ছাড়া রাস্তা নেই। বৃষ্টিতে এই টেস্টের সময় এমনিতে কমতে শুরু করেছে। তার পরে ভারত প্রথম ইনিংসে তুলে দিয়েছে ৪১৬।
জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান পাঁচ উইকেটে ৮৪। প্রথম তিন উইকেট বুমরার। এর পরে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান জো রুটকে ফিরিয়ে দেয় মহম্মদ সিরাজ। পঞ্চম উইকেট মহম্মদ শামির। শিকার নৈশপ্রহরী জ্যাক লিচ। এই অবস্থায় আর তিন দিন পরে অভিষেকেই অধিনায়ক বুমরার হাতে সিরিজ় জয়ের ট্রফি উঠতে দেখলে অবাক হব না।
এই টেস্টের আগে অনেক ইংরেজ বিশেষজ্ঞ ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রেখেছিলেন। প্রথম কারণ, ইংল্যান্ডের নতুন আগ্রাসী, ইতিবাচক মানসিকতা। দুই, ভারত তিন মাসের উপরে লাল বলের ক্রিকেট থেকে দূরে। তিন, কে এল রাহুল-রোহিত শর্মাকে হারিয়েছে দল। কিন্তু তা সত্ত্বেও চাপে ইংল্যান্ডই।
টেস্টের প্রথম দিন ৯৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল ভারত। সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ঋষভ পন্থ। কিন্তু পাশাপাশি জাডেজার অবদানের কথা ভুললেও চলবে না। ও নিজেও আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। কিন্তু ১০৪ রানের ইনিংসটা অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে খেলল। মেঘলা আবহাওয়ায় ব্যাটিং খুব সহজ কাজ ছিল না। প্রচুর বল ছেড়েছে। অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ ব্যাটিং করেছে। হিসেব করে একেবারে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মতো খেলল। ঋষভ যখন মারছিল, তখন জাডেজাও আগ্রাসী হতে পারত। তা হলে উইকেট পড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকত। ওই সময় ছ’নম্বর উইকেট পড়ে গেলে ভারত এই রানটা নাও করতে পারত। জাডেজা সেটা হতে দেয়নি।
বল হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগে বুমরা কিন্তু ব্যাট হাতে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিল। এক ওভারে নিজে ২৯ রান করে ভেঙে গিল ব্রায়ান লারার রেকর্ড। বেচারা স্টুয়ার্ট ব্রড। সেই ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুবরাজ সিংহ ওকে এক ওভারে ছ’টা ছয় মেরেছিল। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের ওভার হয়ে আছে ওটা। এ দিন বুমরার সামনে দিল ৩৫ রান (ওয়াইড, নো ধরে)। যেটা আবার টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের ওভার হয়ে থাকল।
তবে বুমরা ব্যাট হাতে যতই বিশ্বরেকর্ড করুক, ওর বোলিংই ভারতের অস্ত্র। অধিনায়ক হয়ে বাড়তি তেতে ছিল কি না, জানি না। তবে প্রথম সাত ওভারে অসাধারণ একটা স্পেল করল এ দিন। ৯০ শতাংশ বল ব্যাটের কাছাকাছি রেখেছিল। কোনও বল ভিতরে এনেছে, কোনওটা বাইরে বার করেছে। ইংল্যান্ডের ওপেনার অ্যালেক্স লিস বুঝতেই পারেনি, বল অত দ্রুত ভিতরে চলে আসবে। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে ঢুকে স্টাম্প ভেঙে দিল। জ়াক ক্রলির বলটা অফস্টাম্পের উপরে ফুল লেংথ ছিল। ও ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিল। বুমরার তৃতীয় শিকার অলি পোপ। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনও ভারতেরই।