আকাশ দীপের সঙ্গে কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল। —ফাইল চিত্র।
রাহুল দ্রাবিড়ের হাত থেকে টেস্টের টুপি নিয়ে দিন শুরু করেছিলেন আকাশ দীপ। জল্পনা ছিলই যে, তাঁর অভিষেক হবে। রাঁচীতে সেটাই দেখা গেল শুক্রবার সকালে। যশপ্রীত বুমরার জায়গায় বাংলার আকাশকে দলে নিল ভারত। তাঁর সাফল্যে খুশি বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লও। জানালেন কী ভাবে ‘আমলকি মন্ত্রে’ আরও ধারালো হয়েছে আকাশের বোলিং।
বাংলার হয়ে পর পর দু’টি রঞ্জিতে ধারাবাহিক ভাবে ভাল বল করেছেন আকাশ। ভারতীয় দলে প্রথম দিনেই তাঁর তিন উইকেট নেওয়া দেখে উচ্ছ্বসিত লক্ষ্মী। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, “আকাশের গতি ওর জন্মগত। কিন্তু অনেক পেসার গতির দিকে নজর দিতে গিয়ে লাইন লেংথ ঘেঁটে ফেলে। কোচ হিসাবে আমার নজর ছিল আকাশের যেন সেই সমস্যা না হয়। সেই কারণে আমি স্পট ট্রেনিং করাতাম। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বল করার অনুশীলন। এই ধরনের অনুশীলন করলে লাইন, লেংথের সমস্যা হয় না। আকাশের এই অনুশীলন কাজে লেগেছে। সেই কারণেই গতির সঙ্গে বলের লাইন এবং লেংথের উপর এতটা দখল তার।”
আকাশ টানা বল করতে পারেন। শুক্রবার দেখা গেল প্রথম স্পেলে রোহিত শর্মা ৭ ওভার বল করালেন আকাশকে দিয়ে। লক্ষ্মী মনে করেন এটা আকাশের কাছে কোনও ব্যাপার নয়। এর পিছনে রয়েছে আমলকি। লক্ষ্মী বললেন, “বাংলার কোচ হওয়ার পর থেকেই আমি দলের পেসারদের আমলকি খাওয়ার পরামর্শ দিই। আমলকিতে ভিটামিন সি আছে। এর ফলে পেসারেরা গরমের মধ্যে খেললেও পেশিতে টান ধরে না।”
বিহারে জন্ম আকাশের। বাবা চাইতেন ছেলে খেলাধুলা ছেড়ে চাকরি করুক। মধ্যবিত্ত পরিবারে অর্থের চিন্তা ছিল। সেই কারণেই বাবা চাইতেন ছেলে চাকরি করুক। কাজের খোঁজে দুর্গাপুরে চলে যান আকাশ। কিন্তু খেলা থেকে দূরে থাকতে পারেননি। খেপ খেলতে শুরু করেন তিনি। সেই রোজগারের টাকা পাঠাতেন বাড়িতে। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে বাবা এবং দাদার মৃত্যু সব কিছু পাল্টে দেয় আকাশের জীবনে। প্রবল অর্থাভাবের মধ্যে পড়তে হয় পরিবারকে। তিন বছরের জন্য ক্রিকেট ছেড়ে রোজগারের দিকে মন দেন আকাশ। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাটা রয়েই যায়। তাই দুর্গাপুরের খেপ খেলা থেকে চলে আসেন কলকাতায়। সেখানে সৌরাশিস লাহিড়ীর নজরে পড়েন তিনি। আকাশের গতি নজর কেড়েছিল তাঁর। আকাশকে অনুশীলন করাতে শুরু করেন সৌরাশিস। তিনিও উচ্ছ্বসিত আকাশের সাফল্যে। সকাল থেকেই তাঁর নজর ছিল টিভির দিকে। আকাশের সাফল্যের পর উচ্ছ্বাস দেখা যায় সৌরাশিসেরও।
বাংলা থেকে এর আগে টেস্টে মুকেশ কুমার সুযোগ পেয়েছিলেন। শুক্রবার যদিও তাঁকে না নিয়ে আকাশকে দলে নেয় ভারত। মহম্মদ সিরাজের সঙ্গে নতুন বলে শুরু করেন আকাশ। ধারাভাষ্যকারেরা বলছিলেন, “মুকেশের থেকে আকাশের গতি অনেক বেশি। আকাশের উচ্চতাও বেশি। সেই কারণেই এই ম্যাচে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।” প্রথম স্পেলেই তিন উইকেট আকাশও সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।
দ্বিতীয় ওভারেই ক্রলির স্টাম্প উড়িয়ে দিয়েছিলেন আকাশ। কিন্তু সেই বলটি নো বল ছিল। তাই বেঁচে যান ইংরেজ ওপেনার। তবে আকাশের গতি এবং ইনসুইং দেখে বোঝা যাচ্ছিল প্রথম উইকেট পেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। সেটাই হল। নিজের পঞ্চম ওভারে আকাশ তুলে নেন বেন ডাকেটকে। বাঁহাতি ডাকেটকে আউট সুইং করেছিলেন তিনি। উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুরেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে দেন ডাকেট।
ওই ওভারেই দ্বিতীয় উইকেট পেয়ে যান আকাশ। অলি পোপকে এলবিডব্লিউ করেন তিনি। ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বল সামলাতে পারেননি পোপ। উইকেটের সামনে তাঁর পা পেয়ে যান আকাশ। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে উইকেট পেয়ে যায় ভারত। আকাশের তৃতীয় শিকার ক্রলি। যে ভাবে প্রথমে নো বলে বোল্ড হয়েছিলেন, সেই ভাবেই আউট হলেন তিনি। তবে এ বার আর নো বল করেননি। ৪২ বলে ৪২ রান করে আউট হয়ে যান ক্রলি। ভারতও তিন উইকেট পেয়ে যায় টেস্টের প্রথম দিনের সকালে।