India vs England 2024

ইডেনের ডর্মিটরি থেকে ভারতীয় দলের সাজঘরে! বাংলার পেসারকে হারিয়েই জাতীয় দলে বাংলার আকাশ

রাঁচীতে শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক হল আকাশ দীপের। বলা যায় মুকেশ কুমারের বদলে জায়গা করে নিলেন আকাশ। বাংলার পেসারকে হারিয়েই ভারতীয় দলে বাংলার অন্য এক পেসার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৯
Share:

বাংলার পেসার আকাশ দীপ। —ফাইল চিত্র।

জন্ম বিহারে, কর্ম বাংলায়। ইডেনের ডর্মিটরিতে থেকে ভারতীয় দলের সাজঘরে জায়গা করে নিলেন আকাশ দীপ। রাঁচীতে শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক হল তাঁর। বলা যায় মুকেশ কুমারের বদলে জায়গা করে নিলেন আকাশ। বাংলার পেসারকে হারিয়েই ভারতীয় দলে বাংলার অন্য এক পেসার।

Advertisement

বিহারের দেহরিতে জন্ম আকাশের। বিহারের গোপালগঞ্জ থেকে উত্থান। তার পর কলকাতার ময়দান ঘুরে মুকেশ জায়গা করে নিয়েছিলেন ভারতীয় দলে। সেই মুকেশের জায়গায় এ বার আকাশ। বিহারেরই প্রত্যন্ত একটি গ্রাম থেকে উঠে আসা এই পেসার গতিতেই মাত করলেন মুকেশকে। বাংলার হয়ে একসঙ্গে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন তাঁরা। সেই জুটি ভারতীয় দলে জায়গা করে নিলেও জুটি বাঁধা হল না। মহম্মদ সিরাজের সঙ্গে রাঁচীতে শুরু করতে চলেছেন আকাশ। মুকেশের থেকে আকাশের গতি বেশি। সেই কারণেই তিনি ভারতীয় দলে জায়গা করে নিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। মুকেশ যদিও সিরিজ়ে সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। সেই কারণেও আকাশকে সুযোগ দেওয়া হল।

কলকাতা ময়দানে আকাশকে তৈরি করার ব্যাপারে কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন সৌরাশিস লাহিড়ী। এক সময় বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ ছিলেন তিনি। এখন বাংলার সহকারী কোচ। তাঁর হাত ধরেই তৈরি হয়েছেন আকাশ। বাংলার পেসার নিজেও সে কথা স্বীকার করেন। আকাশ বলেন, “আমি ট্রেনের মতো ছিলাম, সৌরাশিস স্যর আমাকে ট্র্যাকে চলতে শিখিয়েছিলেন।” সেই সৌরাশিস নিজে বলেন, “টানা ৮-১০ ওভার একই গতিতে বল করে যাওয়ার ক্ষমতা আছে আকাশের। খুব ভাল ইনসুইং করাতে পারে ও। সোজা বল করার সময় কব্জি যেখানে থাকে, ইনসুইং করার সময়ও সেখানেই থাকে। সেই কারণে ওকে খেলা কঠিন হয়।”

Advertisement

ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার হয়ে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছেন আকাশ। আইপিএলে তিনি খেলেন বিরাট কোহলির দল আরসিবি-র হয়ে। সেখানেও প্রমাণ দিয়েছেন দক্ষতার। তবে জাতীয় দলে ডাক আসে ভারত এ দলের হয়ে ভাল খেলার পর। ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে প্রচুর উইকেট নেন আকাশ। তার পরেই চলতি সিরিজ়ের মাঝে জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। পিছনে ফেলে দেন আবেশ খানকে।

বিহারের সাসারাম গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন আকাশ। ২৭ বছরের আকাশের জীবনও লড়াইয়ের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। একে তো পরিবারে কোনও দিন খেলাধুলোর সে রকম চল ছিল না। তার উপরে বাবা এবং দাদার মৃত্যু পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছিল। কিন্তু ক্রিকেট খেলা থেকে নজর সরেনি আকাশের। আসানসোলে এক সময় চুটিয়ে খেলেছেন টেনিস বলের ‘খেপ’ ক্রিকেট। এমনকি ঘুরে এসেছেন দুবাই থেকেও।

আকাশকে প্রথম বার দেখার স্মৃতি এখনও ভোলেননি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। বাংলা দলের প্রাক্তন ডিরেক্টর বলেন, “রেঞ্জার্স মাঠে এক দিন সিএবি-র দ্বিতীয় ডিভিশনের একটা ম্যাচ দেখছিলাম। অন্য সব বোলার বল করার সময় কিপার উইকেটের থেকে ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে অনায়াসে বল ধরছিল। কিন্তু এক জন পেসার বল করার সময় দেখছিলাম সেই উইকেটরক্ষকই অনেকটা পিছিয়ে প্রায় ৩৫ গজ দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটা খুব জোরে বল করছিল। ময়দানে বা দ্বিতীয় ডিভিশনের কোনও ম্যাচে এমন বোলার দেখাই যায় না।”

আইপিএলে বিরাট কোহলির দলে আকাশ দীপ। —ফাইল চিত্র।

জয়দীপের সংযোজন, “সঙ্গে সঙ্গে তখনকার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ সৌরাশিসকে ফোন করি। ও-ও আমাকে জানায় যে ছেলেটাকে দেখেছে। তখন সিএবি সভাপতি সৌরভকেও (গঙ্গোপাধ্যায়) বিষয়টা জানাই। আকাশকে ভিশন ২০২০ প্রকল্পের মধ্যে নেওয়া হয় এবং ইডেন গার্ডেন্সে সিএবি-র ডর্মিটরিতে ওর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তখন আকাশের কাছে থাকার কোনও জায়গা ছিল না।”

ভিশন ২০২০-তে বাংলার প্রাক্তন পেসার রণদেব বসু কাজ করেন আকাশের সঙ্গে। টেনিস থেকে চামড়ার বলে আকাশের উন্নতি খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। খুচরো বাধাও ছিল কয়েকটা। এক বার বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পরে আকাশের কোমরে ব্যথা শুরু হয়। তখনও আকাশ জানতেন না কেন এই ব্যথা হচ্ছে। সেই সময় আকাশের রিহ্যাবের জন্য তাঁকে অনূর্ধ্ব-২৩ ট্রায়ালে ডাকেন সৌরাশিস। হঠাৎই এক জুনিয়র নির্বাচক আকাশকে দিয়ে জোর করে বল করান। তাতে ব্যথা আরও বাড়ে। সেই নির্বাচকের সঙ্গে ঝামেলাও হয় সৌরাশিসের।

সেই প্রসঙ্গ মনে করে সৌরাশিস বলেছেন, “উনি আমাকে বলেছিলেন, কোনও ক্রিকেটারকে না দেখে কী ভাবে নির্বাচিত করা যায়। আমি জোর দিয়ে বলেছিলাম, আকাশকে আমি নিজে বল করতে দেখেছি। এখন ওর রিহ্যাব দরকার। আপনারা ওকে দলে নিন বা না নিন, অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ওর অভিষেক হবেই।” প্রাক্তন ছাত্রের হয়ে সেই ‘লড়াইয়ের’ কথা মনে পড়লে এখনও হাসি পায় সৌরাশিসের।

রাঁচীতে অনুশীলনে (বাঁদিক থেকে) মুকেশ কুমার, মহম্মদ সিরাজ এবং আকাশ দীপ। ছবি: পিটিআই।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০টি ম্যাচে ১০৪টি উইকেট আছে আকাশের। ব্যাট হাতে একটি শতরানও আছে। তাঁর গতি এবং উইকেটের ভিতরে বল ঢোকানোর ক্ষমতাই আসল শক্তি। সৌরাশিস বলেছেন, “গত বার রঞ্জি ট্রফি সেমিফাইনালে বাংলা বনাম মধ্যপ্রদেশ ম্যাচের কথা মনে করুন। যে বলটায় রজত পাটীদারকে আউট করেছিল, সেটা কী ভাবে অফ স্টাম্পে পড়ে ভেতরে ঢুকে এসে বেল উড়িয়ে দিয়েছিল সেটা ভাবুন। যে কোনও ব্যাটার ওই বলে আউট হবে। ৮-১০ ওভার একই গতিতে বল করতে পারে আকাশ। কব্জির ব্যবহার এবং নিখুঁত লেংথে বোলিং অন্যতম অস্ত্র ওর।”

কৃতিত্ব দিতে হবে বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লকেও। মুকেশ এবং আকাশ বাংলার হয়ে আগেও খেলেছেন, কিন্তু লক্ষ্মী কোচ হওয়ার পর আরও ধারালো হয়েছে তাঁদের বোলিং। আকাশের নাম ভারতীয় দলে যে দিন ঘোষণা হয়, তখন বাংলার রঞ্জি ম্যাচ চলছিল। সুযোগ পেয়ে আকাশ ধন্যবাদ জানান লক্ষ্মীকে। আকাশ বলেন, “টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার খবরটা আমাকে দিয়েছিলেন লক্ষ্মী স্যর। সকলে হাততালি দিচ্ছিল। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি কী হয়েছে। পরে বুঝতে পারি টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছি।”

মুকেশ এবং আকাশ বাংলার হয়ে অনেক দিন খেলেছেন। মুকেশকে দাদার মতো শ্রদ্ধা করেন আকাশ। বিহার থেকে এসে ‘ভিশন২০২০’ থেকে বাংলা দল, সেখান থেকে ভারতীয় দলের সাজঘর। সব কিছুই যে প্রায় একসঙ্গে দু’জনের। বাংলার দুই পেসারকে একসঙ্গে টেস্ট দলে দেখার স্বপ্ন দেখতেই পারেন সমর্থকেরা। আর তাঁদের পথ দেখানোর জন্য যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামির মতো পেসারেরা তো রইলেনই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement