বাংলার হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেললেন সৌরভ পাল। ছবি: সিএবি।
গত মরসুমে বাংলা দল বার বার ভুগছিল ওপেনার নিয়ে। অভিমন্যু ঈশ্বরন ছাড়া কেউ রান পাচ্ছিলেন না। এ বার শুরু থেকে নেই অভিমন্যু। সেই জায়গায় দলে দুই নতুন ওপেনার নিয়ে শুরু করেছে বাংলা। সৌরভ পাল এবং শ্রেয়ংশ ঘোষকে দলে নিয়েছে তারা। প্রথম ম্যাচে সৌরভ করলেন ৯৬ রান। মাত্র চার রানের জন্য শতরান হাতছাড়া হল সৌরভের। কিন্তু তাঁর ইনিংস বাংলা শিবিরকে ভরসা দিচ্ছে। রঞ্জির প্রথম দিনে ২৮৯ রান তুলল বাংলা। আর সেই রানে বড় ভূমিকা নিলেন সৌরভ।
হাওড়ার সীতানাথ বসু লেনের বাসিন্দা সৌরভ। চার বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলা শুরু। বাবা তাপস পালের ইচ্ছা ছিল ছেলেকে খেলোয়াড় তৈরি করবেন। চার বছরের ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন কুমোরটুলির মাঠে। সেখানে গোবিন্দ স্যরের কাছে শুরু হয়েছিল ক্রিকেটের পাঠ। সেখান থেকে হাওড়া সম্মিলনী ক্লাবে যাওয়া। সেই ক্লাবই সৌরভকে সুযোগ এনে দিয়েছিল বাংলার হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার।
তাপস চেয়েছিলেন ফুটবলার হতে। কিন্তু আর্থিক কারণে সে ভাবে খেলার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেননি। তাই নিজের খেলোয়াড় হওয়ার অপূর্ণ স্বাদ পূরণ করতে ছেলেকে খেলতে পাঠিয়েছিলেন। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের কাছেই সৌরভের বাবা জানলেন ছেলে বাংলার হয়ে প্রথম ইনিংসে কত রান করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তাপস বললেন, “ছোটবেলায় আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম খেলার মাঠে। সেখান থেকে ওর ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়। এখন ক্রিকেটই ওর সব কিছু। আর কিছু জানে না সৌরভ। ওকে এক বেলা খেতে না দিলেও কিছু বলবে না। কিন্তু খেলতে দিতেই হবে।”
বাবা তাপস এবং মা অমিতার মাঝে সৌরভ পাল। ছবি: সিএবি।
২৪ বছরের সৌরভ এই মরসুমে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগ দিয়েছেন। এর আগে টাউন ক্লাব এবং কাস্টমসের হয়েও খেলেছেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলের ক্রিকেট দলের মেন্টর সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “সৌরভ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। এই বছরই ইস্টবেঙ্গলে এসেছে। সুপার লিগে খুব ভাল খেলেছে। দারুণ প্রতিভা। অভিমন্যু থাকলে হয়তো সুযোগ পেত না এই ম্যাচে খেলার। কিন্তু এই হঠাৎ পাওয়া সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। আমি চাইব ও আরও বড় রান করুক।”
শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছে বাংলা। সৌরভ ২৩২ বলে ৯৬ রান করেন। ১০টি চার মেরেছেন তিনি। সম্বরণ বললেন, “সৌরভ বল ছাড়তে জানে। ঠান্ডা মাথায় ইনিংস গড়তে পারে ও। ধারাবাহিক ভাবে রান করছে। সামনের পায়ে খেলতে ভালবাসে। মনঃসংযোগ খুব ভাল।” সৌরভের শান্ত স্বভাবের কথা বলছিলেন তাঁর বাবা। তাপস বললেন, “সৌরভ খুব পরিশ্রমী। প্রচণ্ড শান্ত ও। কোনও ঝামেলার মধ্যে থাকতে পছন্দ করে না। আমি অনেক সময় রাগ করেছি এই খেলা নিয়ে। বকেছি খেলা নিয়েই মেতে থাকার জন্য। কখনও কখনও মারও খেয়েছে আমার কাছে। কিন্তু কোনও দিন রাগ করেনি। ভাল লাগছে আজকে বাংলার হয়ে খেলতে নেমেছে। রান করেছে। আশা করছি আরও বড় জায়গায় খেলার সুযোগ পাবে।”
বাংলাকে বড় রানে পৌঁছে দিয়ে রঞ্জির প্রথম ম্যাচেই আলোচনায় সৌরভ। তাঁকে ঘিরে শুরু হয়েছে প্রত্যাশা। মা অমিতা এবং দিদি শ্রাবন্তীও সৌরভের সাফল্যে আনন্দিত। তাঁরা চাইছেন সৌরভ বাংলার হয়ে আরও অনেক ম্যাচ খেলুক।