হার্দিক পাণ্ড্য। —ফাইল চিত্র।
হার্দিক পাণ্ড্যের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। দেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারকে ফিট করে মাঠে ফেরাতে ১৮ সপ্তাহের বিশেষ নকশা তৈরি করেছেন বোর্ডের চিকিৎসকেরা। আগামী মার্চ পর্যন্ত চলবে হার্দিকের রিহ্যাব। ফলে আগামী আইপিএলেও অনিশ্চিত ৩০ বছরের অলরাউন্ডার।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হার্দিককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এ বার আইপিএলের দল বদলেও তাঁকে নিয়ে হয়েছে চূড়ান্ত নাটক। আগে থেকে শোনা যাচ্ছিল, গুজরাত টাইটান্স ছেড়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে ফিরে যাবেন হার্দিক। কিন্তু ক্রিকেটমহলকে বিস্মিত করে তাঁকে প্রথমে ধরে রাখেন গুজরাত কর্তৃপক্ষ। আবার পরের দিনেই বরোদার ক্রিকেটারকে কিনে নেন মুম্বই কর্তৃপক্ষ। এত কিছু করেও হার্দিক কি মুম্বইয়ের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে পারবেন? তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সবুজ সঙ্কেত না পেলে আইপিএল খেলা হবে না তাঁর।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিজের বলে ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন হার্দিক। ১৯ অক্টোবর সেই ম্যাচের পর তাঁকে আর ভারতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়নি। আগেও বড় চোট পেয়েছিলেন। এখনও পাঁচ দিনের ক্রিকেট খেলার ধকল নিতে পারেন না। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গোড়ালির নতুন চোট। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব করছেন হার্দিক। তবে খেলার মতো ফিট নন এখনও। স্বাভাবিক ছন্দে বল করতে পারছেন না। প্রশ্ন উঠছে, কতটা গুরুতর তাঁর চোট? কবে মাঠে ফিরতে পারবেন তিনি?
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দলে হার্দিককে রাখেননি জাতীয় নির্বাচকেরা। তার পর রয়েছে দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়। জানুয়ারির মাঝামাঝি সেই সিরিজ়েও খেলা হবে না হার্দিকের। কারণ ৩০ বছরের অলরাউন্ডারকে নিয়ে কোনও তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কর্তারা। মেডিক্যাল টিমের পরামর্শ মতো এগোতে চাইছেন তাঁরা। কবে ফিরবেন, তা ঠিক করে দেবেন মেডিক্যাল টিমের সদস্যেরাই।
বলা যায়, বোর্ড কর্তারাই এখন মাঠে ফেরাতে চাইছেন না হার্দিককে। বোর্ডের চিকিৎসকদের মতে, তাঁর আগের পিঠের চোট এবং এখনকার গোড়ালির চোট— দু’টিই বিপজ্জনক হতে পারে ক্রিকেটজীবনের পক্ষে। তাঁকে সম্পূর্ণ ফিট করে তোলার জন্য ১৮ সপ্তাহের বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এই সময় মূলত জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে থাকতে হবে হার্দিককে। চলতে হবে মোডিক্যাল টিমের পরামর্শ মতো। প্রয়োজনে রিহ্যাবের সময় আরও বৃদ্ধি করা হতে পারে। মাঝে অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করা হলেও পরে বাতিল করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাময়িক লাভের কথা ভাবলে বড় ক্ষতি হতে পারে অলরাউন্ডারের ক্রিকেটজীবনে। কারণ হার্দিক এমনিতেই চোট প্রবণ। তাই সাবধানে চলাই ভাল।
শ্রেয়স আয়ার এবং লোকেশ রাহুলকে ফিট করে তুলতে এশিয়া কাপের আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়েছিল। পিঠের চোট সারিয়ে ফিট হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল যশপ্রীত বুমরাকেও। তেমন হার্দিকের জন্যও অপেক্ষা করতে চাইছে বোর্ড। বিসিসিআইয়ের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘হার্দিক পিঠের চোট সারিয়ে সফল ভাবে মাঠে ফিরেছিল। শারীরিক ভাবে বেশ ভাল জায়গায় ছিল। কিন্তু গোড়ালির চোট নতুন সমস্যা তৈরি করছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে খেলিয়ে ওর উপর চাপ বৃদ্ধি করতে চাইছি না আমরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হার্দিককে বেশি দরকার হবে। শুধু ২০২৪ সালের নয়, আমরা ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের কথাও ভাবছি। ওই দু’বছর আমরা ওকে সম্পূর্ণ ফিট অবস্থায় পেতে চাই।’’
বিশ্বজয়ের পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই হার্দিককে আগলে রাখতে চাইছে বিসিসিআই। আইপিএল বা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ের থেকেও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে আগামী আইপিএলে হার্দিকের খেলা নির্ভর করবে বোর্ডের সিদ্ধান্তের উপর। কয়েক কোটি টাকা খরচ করলেও রোহিত শর্মাদের হয়তো লাভ হবে না।