হরমনপ্রীত কৌর। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচে নিন্দনীয় আচরণ করেছিলেন ভারতের মহিলা দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। আউট হওয়ার পর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বিরক্ত হয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভাঙা তো বটেই, ম্যাচের পরেও আম্পায়ারের নামে বিষোদ্গার করেন। সেই ঘটনা মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছে না ভারতীয় বোর্ড। হরমনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
বিসিসিআই সচিব জয় শাহ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, বোর্ড সভাপতি রজার বিনি এবং জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান ভিভিএস লক্ষ্মণের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে হরমনকে। কেন ওই আচরণ করেছেন তা জিজ্ঞাসা করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন আচরণ না করেন, সে ব্যাপারেও কড়া সুরে সতর্ক করে দেওয়া হতে পারে। কারণ, হরমনের আচরণের জন্যে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে খোদ বোর্ডকে। তাদের সুনাম নষ্ট হয়েছে। এ কারণে আরও বেশি সতর্ক করা হবে হরমনকে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গত শনিবারের ম্যাচে আউট হওয়ার পর ব্যাট দিয়ে উইকেট ভেঙে দিয়েছিলেন হরমনপ্রীত। সেটার জন্য তাঁকে তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয় এবং ম্যাচ ফি কেটে নেওয়া হয়। পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে আম্পায়ারদের সমালোচনা করেন হরমনপ্রীত। সেই কারণে তাঁর ম্যাচ ফি-র আরও ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ম্যাচ ফি-র মোট ৭৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়েছে হরমনপ্রীতের। সেই সঙ্গে দু’টি ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছেন তিনি। এর ফলে একটি টেস্ট অথবা দু’টি এক দিনের ম্যাচ বা টি-টোয়েন্টি থেকে নির্বাসিত হরমনপ্রীত।
ভারতের মহিলা দলের পরবর্তী খেলা এশিয়ান গেমসে। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে চিনের হ্যাংঝৌতে শুরু এশিয়ান গেমস। আইসিসি ক্রমতালিকা অনুযায়ী সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে ভারত। অর্থাৎ, তার আগে হরমনপ্রীতকে শাস্তি দেওয়ায় কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না তিনি। দল যদি ফাইনালে ওঠে তা হলে সরাসরি তিনি ফাইনালে খেলতে পারবেন।
গত শনিবার ম্যাচের মধ্যেই আম্পায়ারদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন হরমনপ্রীত। ভারতীয় দলের ইনিংসের ৩৪ ওভারের মাথায় ঘটনাটি ঘটে। বাংলাদেশের নাহিদা আখতারের বলে সুইপ করতে গিয়েছিলেন। বল তাঁর ব্যাটে বা প্যাডে লেগে স্লিপে ফাহিমা খাতুনের হাতে জমা পড়ে। বোলার এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। হরমনপ্রীত সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁর দাবি, বল ব্যাটে লেগেছে। কোনও ভাবেই তাঁর প্যাডে লাগেনি। আম্পায়ার আউট দেওয়ায় প্রথমে ব্যাটে একটি ঘুষি মারেন হরমনপ্রীত। তার পরে ব্যাট দিয়ে উইকেট ভেঙে দেন। সাজঘরে ফেরার পরে আম্পায়ারের উদ্দেশে কিছু বলতেও দেখা যায় তাঁকে। হরমন আউট হওয়ার পর দর্শকেরা ব্যাপক উল্লাস করছিলেন। তাঁদের দিকে তাকিয়েও আঙুল তুলে ব্যঙ্গ করেন ভারতের অধিনায়ক। যদিও হরমনপ্রীতকে ক্যাচ আউট-ই দেওয়া হয়েছে শনিবারের ম্যাচে। হরমনপ্রীতের আচরণের সমালোচনা করেছেন মদন লালের মতো বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার।
শুধু তাই নয়, ট্রফি জয়ের পর যখন দু’দলের ক্রিকেটারের ছবি তোলার জন্য তৈরি হচ্ছেন তখনই বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানাকে হরমনপ্রীত বলেন, ‘‘আম্পায়ারদেরও ডেকে নাও। কেন শুধু তোমরা এখানে? তোমরা তো ম্যাচ টাই করোনি। আম্পায়ারেরা তোমাদের হয়ে করে দিয়েছে। তাই ওদের সঙ্গেও আমরা ছবি তুলব।’’ ভারত অধিনায়কের এই কথা ভাল ভাবে নেননি বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক সুলতানা গোটা দলকে নিয়ে সাজঘরে চলে যান। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, হরমনের আচরণে যথেষ্ট বিরক্ত তাঁরা। পরে সাংবাদিক বৈঠকে ভারত অধিনায়কের আচরণের সমালোচনা করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।