(বাঁদিকে) তামিমের সঙ্গে শাকিব। ছবি: সংগৃহীত।
হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন তামিম ইকবাল। বৃহস্পতিবার তাঁর অবসরের সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন সতীর্থেরা। ২০ বছর ধরে যিনি বন্ধু, সেই শাকিব আল হাসানও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তামিমের এমন সিদ্ধান্তে। ফেসবুকে লম্বা পোস্ট করেছিলেন তিনি। যদিও শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মধ্যহ্নভোজের পর অবসর ভেঙে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম।
শাকিব যখন লেখেন, তখন তামিম সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানাননি। তখনও তামিম প্রাক্তন ক্রিকেটার। সে সময় বন্ধুকে নিয়ে শাকিব ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘২০০৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের হয়ে আমাদের এক সঙ্গে পথ চলা শুরু। গত ২০ বছর ধরে আমরা নিজেদের স্বপ্ন এবং লক্ষ্যগুলোকে ভাগ করে নিয়েছি। একটা দৃঢ় বন্ধন এবং বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি। আমরা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। তোমার (তামিমকে উদ্দেশ্য করে) আবেগ এবং আগ্রাসন আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করেছে।’’
শাকিব জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে জেতানোর জন্য তাঁরা পরস্পরের দক্ষতার প্রতি বিশ্বাস রাখেন। একে অন্যের উপর নির্ভর করেন। তামিমের রান এবং রেকর্ডগুলিই তাঁর দক্ষতার পরিচয় বলেও লেখেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। শাকিব লিখেছিলেন, ‘‘এক জন খেলোয়াড় হিসাবে তুমি যা কিছু অর্জন করেছ, তার জন্য আমরা সতীর্থেরা গর্বিত। তোমার সঙ্গে আর মাঠে থাকতে পারব না। এটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি। আমরা এরপর যখন মাঠে নামব, তোমার আগুন আমাদের সকলের ভিতরে জ্বলবে।’’ দীর্ঘ দিনের সতীর্থকে তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি শাকিব। লিখেছিলেন, ‘‘তোমার নতুন জীবনেও তুমি ছক্কা হাঁকাও। প্রিয় জনদের সঙ্গে নতুন মুহূর্তগুলি উপভোগ কর।’’
এক দিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তামিম। অন্য দিকে টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়ক শাকিব। বাংলাদেশের অন্যতম সিনিয়র দুই ক্রিকেটারের সম্পর্ক নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। তাঁদের ব্যক্তিত্বের সংঘাত বার বার শিরোনামে এসেছে। যদিও তামিম বা শাকিব কখনও প্রকাশ্যে সমস্যার কথা মানেননি। মাঠের পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলতে দেননি। গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার তামিম। শাকিব অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। অনূর্ধ্ব ১৫ পর্যায় থেকে দু’জনে এক সঙ্গে ক্রিকেট খেলছেন। বয়স ভিত্তিক জাতীয় দল থেকে সিনিয়র জাতীয় দল— এক সঙ্গে বাংলাদেশকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন তামিম এবং শাকিব।
তামিমের অবসর নিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ খোলেননি শাকিব। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর নিজের আবেগ আর গোপন করতে পারেননি। তাঁদের দু’জনের সম্পর্কে ঘিরে যে জল্পনাই চলুক, শাকিব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সে সবের অনেকটাই রটনা। যা তাঁদের ২০ বছরের বন্ধুত্বে ছাপ ফেলতে পারেনি।
শাকিবের মতো বাংলাদেশের আরও অনেক ক্রিকেটার তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। তা হলে কি হঠাৎ অবসর নেওয়া তামিমের উপর চাপ ছিল সতীর্থদেরও? তাঁরাও মানতে পারেননি এক দিনের ক্রিকেটের অধিনায়কের অপ্রত্যাশিত অবসর? সেই মানতে না পারার ইঙ্গিত শাকিবের লেখায় স্পষ্ট।