রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র
নিয়মরক্ষার ম্যাচ হওয়ায় রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি দেখে নিতে চেয়েছিল ভারত। দলে পাঁচটি বদল করেছিলেন রোহিত শর্মারা। হতাশ করলেন পরিবর্ত ক্রিকেটারেরা। প্রথমে ব্যাট করে ২৬৫ রান করে বাংলাদেশ। ৮০ রান করেন শাকিব আল হাসান। রান তাড়া করতে নেমে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে একটা সময় চাপে পড়ে যায় ভারত। একাই লড়ছিলেন শুভমন গিল। কিন্তু কারও সাহায্য পেলেন না তিনি। শতরান করেও দলকে জেতাতে পারলেন না শুভমন। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারতে হল রোহিতদের। রবিবার এশিয়া কাপের ফাইনালে নামার আগে এই পারফরম্যান্স চিন্তায় রাখবে রোহিতকে।
এ বারের এশিয়া কাপে কোনও ম্যাচে প্রথমে বল করেনি ভারত। তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। শুরুটা ভাল করেন মহম্মদ শামি ও শার্দূল ঠাকুর। বাংলাদেশের টপ অর্ডার রান পায়নি। মাত্র ৫৯ রানে ৪ উইকেট পড়ে যায়। দেখে মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচেও বেশি রান করতে পারবে না বাংলাদেশ। কিন্তু শাকিব ও তৌহিদ হৃদয় দলের ইনিংস সামলান।
বাংলাদেশের ব্যাটারদের সুবিধা করে দিল ভারতের ফিল্ডিং। বেশ কয়েকটি ক্যাচ পড়ল। তার সুবিধা নিলেন শাকিবেরা। দুই ব্যাটারের মধ্যে শতরানের জুটি হয়। শাকিব প্রথমে অর্ধশতরান করেন। এক বার হাত জমে যাওয়ার পরে বড় শট খেলেন তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল, শতরান করবেন শাকিব। কিন্তু শার্দূল নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ৮০ রানের মাথায় শাকিবকে বোল্ড করেন।
শাকিব আউট হওয়ার পরে অর্ধশতরান করেন হৃদয়। এ বারের প্রতিযোগিতায় নিজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন তিনি। ৫৪ রান করে শামির বলে আউট হন হৃদয়। শেষ দিকে নাসুম আহমেদের ৪৪ ও মেহেদি হাসানের ২৯ রান বাংলাদেশকে ২৫০ পার করায়। ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রান করে তারা। ভারতের হয়ে শার্দূল ৩টি, শামি ২টি এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, রবীন্দ্র জাডেজা ও অক্ষর পটেল ১টি করে উইকেট নেন।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই আউট হন রোহিত। তাঁকে আউট করে ভারতকে বড় ধাক্কা দেন অভিষেক হওয়া তানজিম হাসান শাকিব। ভাল বল করছিলেন তিনি। তাঁর লাইন ও লেংথ সমস্যায় ফেলছিল ভারতীয় ব্যাটারদের। তানজিমের বল বুঝতে না পেরে আউট হন এই ম্যাচে ভারতের হয়ে অভিষেক হওয়া তিলক বর্মার।
দুই উইকেট পড়ার পরে শুভমনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লোকেশ রাহুল। বিরাট কোহলি না থাকায় এই জুটির উপর বড় দায়িত্ব ছিল। ভাল খেলছিলেন তাঁরা। ধীরে ধীরে রান এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। জুটি ভাঙেন মেহেদি। রাহুলকে ফেরান তিনি। রান পাননি ঈশান কিশনও। বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে সমস্যায় পড়ছিলেন তাঁরা। উইকেটে ঘূর্ণি থাকায় স্পিনারদেরই আক্রমণে লাগিয়ে রাখেন শাকিব।
এই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। মঞ্চও তৈরি ছিল। কিন্তু ২৬ রান করে শাকিবের বলে বোল্ড হন তিনি। অতিরিক্ত সুইপ শট খেলার খেসারত দিতে হয় তাঁকে। শুভমন ভাল খেলছিলেন। রানের গতি কিছুটা কমে যাওয়ায় কয়েকটি বড় শট খেলেন তিনি। ধীরে ধীরে শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন ভারতীয় ওপেনার।
১১৭ বলে নিজের শতরান পূর্ণ করেন শুভমন। কিন্তু অন্য দিক থেকে সাহায্য পাচ্ছিলেন না তিনি। জাডেজাও রান পাননি। সব দায়িত্ব এসে পড়ে শুভমনের কাঁধে। শতরান করার পরে হাত খোলা শুরু করেন তিনি। কিন্তু জরুরি রান রেট ক্রমাগত বাড়ছিল। ফলে বড় শট খেলা ছাড়া উপায় ছিল না ভারতের।
শেষ ১০ ওভারে ভারতের জিততে দরকার ছিল ৭৮ রান। অর্থাৎ, প্রতি ওভারে ৮ রান করে করতে হত ভারতকে। ক্রিজে ছিলেন শুভমন ও অক্ষর। বড় শট মেরে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করছিলেন শুভমন। ১২১ রান করে বড় শট মারতে গিয়েই ফিরলেন তিনি। শুভমন আউট হওয়ার সঙ্গে ভারতের জেতার আশা আরও কমে যায়।
ভারতের শেষ জুটি ক্রিজে ছিল। অক্ষর ও শার্দূল দু’জনেই ব্যাট চালাতে পারেন। সেটাই দেখতে চাইছিলেন সমর্থকেরা। কলম্বোর উইকেটে স্পিনারদের বিরুদ্ধে বড় শট খেলা কঠিন হচ্ছিল। তার মধ্যেই চেষ্টা করছিলেন অক্ষর। ৪৮তম ওভারের শেষ দুই বলে ১০ রান নেন অক্ষর। শেষ ১২ বলে জিততে দরকার ছিল ১৭ রান। অনেক চেষ্টা করেও সেই রান তুলতে পারলেন না অক্ষর। এক ওভারে শার্দূল ও অক্ষরকে আউট করে ভারতের জেতার আশা শেষ করে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। এ বার আর জয়ের কাছে এসে ছন্দপতন হল না শাকিবদের। ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ।