রিকি পন্টিং। —ফাইল চিত্র।
এক দিনের বিশ্বকাপের জন্য প্রাথমিক দল বেছে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেই দলে রয়েছেন তনবীর সাঙ্গা। এখনও পর্যন্ত একটিও আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলা এই লেগস্পিনার কি মূল দলেও সুযোগ পাবেন? ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে আন্দ্রে রাসেলকে আউট করেছিলেন তনবীর। এই স্পিনারের বোলিং দেখে মুগ্ধ রিকি পন্টিং। ২১ বছরের এই ‘ভারতীয়’ বোলার কি বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নিতে পারবেন?
তনবীরের বাবা জোগা সাঙ্গার জন্ম ভারতে। ১৯৯৭ সালে পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন জোগা। তার পর থেকে সে দেশেই রয়ে যান। নিজেও খেলাধুলা পছন্দ করেন জোগা। তবে ক্রিকেট নয়, তাঁর পছন্দ ছিল ভলিবল। চেয়েছিলেন ছেলেও ভলিবল খেলুক। জোগা বলেন, “আমি চেয়েছিলাম তনবীর ভলিবল খেলুক। সেটাও ভাল খেলত ও। তবে তনবীর যে কোনও খেলাধুলাতেই খুব ভাল। ফুটবল, রাগবি, ক্রিকেট, কবাডি এবং ভলিবল খেলতে পারে তনবীর। আমি নিজে ভলিবলের ভক্ত। জলন্ধরে থাকার সময় সেখানে খেলতাম। অস্ট্রেলিয়াতে এসেও খেলেছি। কিন্তু তনবীর ক্রিকেটকেই বেছে নেয়।”
অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে জোগাকে অনেক ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। তনবীরের বাবা বলেন, “সিডনিতে চেম্বার্স স্কুল অফ বিজ়নেসে ভর্তি হয়েছিলাম। এক বছর পরেই কলেজ ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি। অনেক কারণ ছিল। আমি কলেজে পড়াশোনার জন্য টাকা দিতে পারছিলাম না। থাকার খরচ দিতে পারছিলাম। ছুটির দিনে ট্যাক্সি চালাতাম। প্রতি দিন জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠছিল। ট্রাকও চালিয়েছি। তবে এই কাজগুলোর কোনওটাই তো ছোট নয়। জানি না কেন গাড়ি চালিয়েছিলাম শুনলে লোকে অবাক হয়ে দেখে। এটাও তো একটা কাজ। তনবীর ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। আমার সেই সময় এমন একটা কাজ দরকার ছিল, যাতে আমি ওকে সময় দিতে পারি। স্কুল থেকে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিতাম, অনুশীলনে নিয়ে যেতাম। ট্যাক্সি চালানোর জন্য আমি সেই সুযোগগুলো পেতাম। আমার নিজের কাজ নিয়ে কোনও লজ্জা ছিল না।”
তনবীর সাঙ্গা। —ফাইল চিত্র।
অস্ট্রেলিয়ায় বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জোগা। তিনি বলেন, “এখানে বর্ণবিদ্বেষ আছে। আমি কখনওই বলতে পারব না যে, কোনও বর্ণবিদ্বেষের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এখানে স্বচ্ছতাও আছে। কারও প্রতিভা থাকলে সে সুযোগ পাবেই। বর্ণবিদ্বেষের কারণে জায়গা দেওয়া হয়নি, সেটা বলা যাবে না।”
তনবীর গত এক বছরে কোনও প্রতিযোগিতায় খেলেননি। তার পরেও জাতীয় দলে তাঁর ডাক পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জোগা বলেন, “অনেকে অনেক কথা বলবে। নির্বাচকেরা তনবীরকে দলে নিয়েছেন মানে নিশ্চয়ই ওর মধ্যে কোনও সম্ভাবনা দেখেছেন। আমি কাউকে বলতে যাইনি ওকে দলে নেওয়ার জন্য। আমি এক জন মধ্যবিত্ত। আমার পক্ষে প্রভাবশালী কারও কাছে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। নির্বাচকেরা গত দু’বছর ধরে তনবীরের খেলা দেখেছেন। ও সকলের নজরে ছিল। বিগ ব্যাশ লিগে ভাল খেলার পর রিকি পন্টিং ওর প্রশংসা করেছিলেন।”