উচ্ছ্বসিত: বিশ্বকাপ জয়ের পরে ল্যাঙ্গারের সঙ্গে শ্রীরাম। ছবি টুইটার।
অ্যাশেজ শুরু হতে আর সপ্তাহ দু’য়েক বাকি। তার আগে অধিনায়ক বিতর্কে জড়িয়ে নাজেহাল অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট। কিন্তু এই বিতর্ক ইংল্যান্ডের সঙ্গে দ্বৈরথে কোনও ছায়া ফেলবে না বলেই মনে করেন অস্ট্রেলীয় কোচিং স্টাফের এক সদস্য। তিনি জাস্টিন ল্যাঙ্গারের সহকারী, ভারতের প্রাক্তন স্পিনার-অলরাউন্ডার শ্রীধরন শ্রীরাম।
ছ’বছর আগে স্পিন পরামর্শদাতা হিসেবে অস্ট্রেলীয় দলে যোগ দিয়েছিলেন শ্রীরাম। সেখান থেকে উঠে এসে এখন তিনি সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর এখন ছুটি কাটাতে ফিরে এসেছেন চেন্নাইয়ে। তার মধ্যেই অবশ্য চলছে অ্যাশেজ জয়ের ছক তৈরির কাজ।
শ্রীরামের সেই ছকে বড় জায়গা থাকছে অফস্পিনার নেথান লায়নের। সোমবার ফোনে আনন্দবাজারকে শ্রীরাম বলছিলেন, ‘‘আসন্ন অ্যাশেজে লায়ন কিন্তু বড় ভূমিকা নেবে। সত্যি কথা বলতে কী, লায়ন আছে বলেই অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণকে এত ভয়ঙ্কর দেখায়। সেটা ভালই জানে দলের পেসাররা। মিচেল স্টার্ক-জস হেজ়্লউডরা জানে ওদের সফল হতে গেলে, লায়নকে উইকেট পেতে হবে।’’
দীর্ঘ সময় ধরে লায়নকে দেখেছেন তিনি। প্রধান অস্ত্র কী এই অফস্পিনারের? শ্রীরামের ব্যাখ্যা, ‘‘লায়ন একেবারে বোলিং মেশিনের মতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটা জায়গায় বলটা ফেলে যেতে পারে। বাউন্স পায়। আর ৯০ কিলোমিটারের বেশি গতির সঙ্গে বলের রেভেলিউশনটা খুব ভাল থাকে।’’ রেভেলিউশন— অর্থাৎ আঙুলের মোচড়ে বলটা ছাড়ার পরে সেটা যত বার ঘুরবে পিচে পড়ার আগে। কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের দৌলতে যে ‘রেভ’-এর সংখ্যাও এখন জেনে যান কোচেরা। শ্রীরাম যেমন বলছিলেন, ‘‘লায়ন বলটা ছাড়ার পরে সেটা মিনিটে ২৩০০ বার ঘোরে। এ রকমটা কেউ করতে পারে না। যার ফলে ও স্পিনটাও ভাল পায়।’’
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ের জন্য কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন এই অফস্পিনার? অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচের কথায় ধরা পড়ছে লায়নের প্রস্তুতির ছবিটা। শ্রীরাম বলছিলেন, ‘‘লায়নের একটা নিজস্ব রুটিন আছে। ও নেটে এসে একটা স্পট ঠিক করে নিয়ে ক্রমাগত বল ফেলতে থাকে। তার পরে দেখে বলে কতটা ‘রেভ’ হচ্ছে। এর সঙ্গে চলতে থাকে ‘টার্গেট বোলিং’ও।’’
‘টার্গেট বোলিং’ প্রস্তুতিটা কী রকম? জানা যাচ্ছে, লায়ন প্রথমে ভেবে নেন, তার বিরুদ্ধে নেটে ইংল্যান্ডের কোন ব্যাটার খেলছেন। তার পরে ঠিক করেন, এ বার অফস্পিন করব, সোজা বল করব না অন্য কিছু। তার পরে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বলটা ডেলিভারি করেন। চেষ্টা করে যান, মনে মনে যে বলটা করবেন বলে ‘টার্গেট’ করেছেন, সেটাই যেন তিনি করতে পারেন। এই ভাবেই নেটে চলে লায়নের প্রস্তুতি। যাতে মাঠে নেমে বিশেষ ব্যাটারের বিরুদ্ধে সমস্যায় না পড়তে হয়।
কিন্তু ৮ ডিসেম্বর থেকে অ্যাশেজ শুরুর ঠিক আগে টিম পেনের বিতর্ক কতটা ধাক্কা দিল দলকে? অস্ট্রেলীয় দল পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য শ্রীরাম বলছিলেন, ‘‘পেনের ব্যাপারটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে অস্ট্রেলিয়া দলের একাত্মতা খুবই ভাল। টিম স্পিরিট দুর্দান্ত। এই ঘটনার প্রভাব খেলায় পড়বে না, এটা বলাই যায়।’’
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে উঠে এসেছে প্যাট কামিন্সের নাম। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি উইকেটকিপার-ব্যাটার অ্যাডাম গিলক্রিস্টও এ দিন জানিয়েছেন, কামিন্সই তাঁর পছন্দ। শ্রীরামের কথা যদি কোনও ইঙ্গিত হয়, তা হলে বলতে হবে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন এই সুদর্শন ফাস্ট বোলারই।
কেন কামিন্সের গ্রহণযোগ্যতা এত বেশি? শ্রীরামের কথায় উঠে আসছে তিনটে কারণ। এক, সতীর্থদের সঙ্গে সম্পর্ক। দলের সবাই কামিন্সকে অত্যন্ত পছন্দ করেন। দুই, সব সময় শেখার আগ্রহ এবং নতুন সব কিছুকে সাদরে গ্রহণ করার মানসিকতা। তিন, ম্যান ম্যানেজমেন্টেও দক্ষ। যা শ্রীরামের কথায়— পিপল'স স্কিল। ‘‘দলের সবার সঙ্গে কামিন্সের সম্পর্কটা খুবই ভাল। ও যদি দায়িত্ব পায়, তা হলে খুব ভাল অধিনায়ক হবে,’’
বলছিলেন শ্রীরাম।
বিতর্কের মধ্যেও তিনি অস্ট্রেলিয়াক এগিয়ে রাখতে চান এই দ্বৈরথে। ভিসা এসে গেলেই পাড়ি দেবেন অস্ট্রেলিয়ায়, অ্যাশেজ-দ্বৈরথে যোগ দিতে। তার আগে আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া শ্রীরামের গলায়, ‘‘আমাদের টেস্ট দল খুব ভাল জায়গায় আছে। পাশাপাশি ঘরের মাঠে খেলার সুবিধেটাও পাব আমরা। আশা করি ভাল ফল হবে।’’