(বাঁদিকে) দুনিথ ওয়েল্লালাগে এবং চরিত আশালঙ্কা। ছবি: টুইটার।
একটি টেস্ট এবং ১১টি এক দিনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মঙ্গলবার মাঠে নেমেছিলেন। শ্রীলঙ্কার সেই ২০ বছরের বাঁহাতি স্পিনারের সামনেই কার্যত আত্মসমর্পণ করলেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। দুনিথ ওয়েল্লালাগে ৪০ রান দিয়ে তুলে নিলেন পাঁচ উইকেট। শ্রীলঙ্কার পার্ট টাইম স্পিনার চরিত আশালঙ্কাও সমানে সমানে পাল্লা দিলেন। তিনি ১৮ রান খরচ করে নিলেন চার উইকেট।
রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শুভমন গিল, লোকেশ রাহুল এবং হার্দিক পাণ্ড্য। মঙ্গলবার এটা ভারতের ব্যাটিং অর্ডার নয়! ওয়েল্লালাগের শিকারদের নাম। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড একাই ভেঙে দিলেন কলম্বোর সেন্ট জোসেফ কলেজের ছাত্র। কয়েক ঘণ্টা আগে শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, শাদাব খানদের প্রায় ক্লাব স্তরে নামিয়ে আনা ভারতীয় ব্যাটিংকে ওয়েল্লালাগের স্পিনের সামনে অসহায় দেখাল।
শুধু ওয়েল্লালাগের কথা বললে ভুল হবে। মঙ্গলবারের আগে পর্যন্ত ৩৮টি এক দিনের ম্যাচ খেলে একটি উইকেট পাওয়া আশালঙ্কা মঙ্গলবার নিলেন চার উইকেট। তাঁর শিকার তালিকায় রয়েছে ঈশান কিশন, রবীন্দ্র জাডেজা, যশপ্রীত বুমরা এবং কুলদীপ যাদব। ডানহাতি এবং বাঁহাতি ব্যাটারদের উইকেট যেন ভাগাভাগি করে তুলে নিলেন দু’জনে।
ক্রিকেট বিশ্বে স্পিনার হিসাবে কুলীন নন ওয়েল্লালাগে বা আশালঙ্কা। তবু তাঁদের বল সামলাতে পারলেন না স্পিন খেলতে দক্ষ বলে খ্যাত ভারতীয়েরা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন ওয়েল্লালাগে। শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের হয়ে। গত বছর অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন। সেই প্রতিযোগিতার প্রথম দু’ম্যাচে পর পর পাঁচ উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। প্রতিযোগিতায় মোট ১৭টি উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। গত বছর জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক ওয়েল্লালাগের। জুলাই খেলেছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক মাত্র টেস্ট। জাতীয় দলের হয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করে উঠতে পারেননি। টেস্টে উইকেট নেই। ১২টি এক দিনের ম্যাচে ১৩টি উইকেট। ২০ বছরের সেই তরুণকে সামলাতে ভারতীয় দলের প্রথম সারির ব্যাটারেরা নাজেহাল হলেন। প্রথম বার এক দিনের ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় স্পিনার হিসাবে এশিয়া কাপে ভারতের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিলেন। প্রথম এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন অজন্তা মেন্ডিস। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ভাল বোলিং এবং ব্যাটিং করেছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে সেই পারফরম্যান্সকেও ছাপিয়ে গেলেন।
ওয়েল্লালাগের মতো সাফল্যও ছিল না আশালঙ্কার। মঙ্গলবারের আগে তিনটি টেস্ট খেলে কোনও উইকেট পাননি। তাঁকেও সামলাতে পারলেন না ভারতীয়েরা। ২৬ বছরের অফ স্পিনারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন বছর দুয়েকের। স্কুল দলের ওপেনার ছিলেন। অনূর্ধ্ব ১৯ শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়ক ছিলেন। পর পর দু’বছর শ্রীলঙ্কার সেরা স্কুল ক্রিকেটার হওয়া আশালঙ্কা বোলিং শুরু করে একটু বড় হওয়ার পর। স্কুলে পড়তে পড়তেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক। জাতীয় দলে তিনি খেলেন মূলত ব্যাটার হিসাবে। প্রয়োজনে বল করেন। আশালঙ্কাকে বোলিং আক্রমণের অংশ হিসাবে সে ভাবে ধরা হয় না। শ্রীলঙ্কা দলই ধরে না। প্রতিপক্ষেরাও হয়তো তেমন গুরুত্ব দেন না তাঁর অফ স্পিনকে। অথচ ওয়েল্লালাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা বিশ্বকাপের আগে দেখিয়ে দিলেন।
ওয়েল্লালাগে বা আশালঙ্কা নিশ্চিত ভাবেই প্রেমদাসা স্টেডিয়ামের ২২ গজের সাহায্য পেয়েছেন। সেই সাহায্যকে কাজে লাগানোর কৃতিত্ব অবশ্য তাঁদের। যা চাপে ফেলে দিয়েছে রোহিতের দলকে। তাঁরাই শ্রীলঙ্কার দুই ক্রিকেটারকে বিশ্ব মঞ্চে নতুন জায়গা করে দিল।