আড্ডায় মগ্ন বিরাট-রোহিত। ছবি: টুইটার থেকে
অপেক্ষার অবসান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭১তম শতরান করে ফেললেন বিরাট কোহলী। ভারত এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে। কিন্তু বিরাটের শতরান এসেছে। স্বস্তি পেয়েছেন বিরাট-ভক্তরা। বিরাট নিজেও তৃপ্ত। মাঠে তাঁর হাসি বলে দিচ্ছিল নিজেও কতটা অপেক্ষায় ছিলেন এই দিনটার। ম্যাচ শেষে তিনি সাক্ষাৎকার দিলেন রোহিত শর্মাকে। ভারত অধিনায়কও অবাক করে দিলেন প্রাক্তন অধিনায়ককে।
বোর্ডের ওয়েবসাইটে শুক্রবার সকালে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে দুবাইয়ের মাঠে পাশাপাশি বসে কথা বলছেন ভারতকে বহু ম্যাচ জেতানো দুই যোদ্ধা বিরাট এবং রোহিত। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা একসঙ্গে খেলছেন। একে অপরকে ভাল মতো চেনেন। তাই রোহিত যখন প্রথম প্রশ্নের সময় ইংরেজি শব্দের ব্যবহার প্রায় না করে হিন্দিতে কথা বলে গেলেন, তাতে অবাক হয়ে যান বিরাট। রোহিত বলেন, “আমার সঙ্গে রয়েছেন বিরাট কোহলী। পুরো দেশ অপেক্ষা করেছিল আপনার ৭১তম শতরানের। আমার মনে হয় তাদের থেকেও বেশি অপেক্ষায় ছিলেন আপনি। আমাদের জিতে শেষ করতে হত। সেই দিক থেকে আপনার ইনিংস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ইনিংস থেকে অনেক কিছু দেখতে পেলাম। খুব ভাল শট দেখলাম। সঠিক বোলারকে খেললেন। এই ইনিংস নিয়ে আপনি কিছু বলুন। কেমন ভাবে শুরু করলেন, কী ভাবে খেললেন?” রোহিতের মুখে ‘আপনি’ সম্বোধন এবং এত কথা হিন্দিতে শুনে হেসে ফেলেন বিরাট। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে প্রথম বার শুদ্ধ হিন্দিতে কথা বলছে।” রোহিতও হেসে ফেলেন। তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম হিন্দি এবং ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলব। কিন্তু হিন্দিতে কথা বলতে শুরু করে ছন্দ পেয়ে গেলাম, তাই ভাবলাম হিন্দিতেই কথা বলি।”
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৬১ বলে ১২২ রান করে অপরাজিত থাকেন বিরাট। সেই ইনিংস প্রসঙ্গে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “আমরা কথা বলছিলাম কী ভাবে এই ম্যাচটা খেলব। এশিয়া কাপ থেকে আমরা ছিটকে গিয়েছি। তার পরেও মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা দিতে হত। আমাদের সকলের লক্ষ্য অবশ্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এশিয়া কাপ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা। এখানে আমরা নকআউটে খেলার অভিজ্ঞতা পেলাম। এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”
এশিয়া কাপের আগে প্রায় দেড় মাস ছুটি পেয়েছিলেন বিরাট। সেই সময় তিনি এক মাস ব্যাট ধরেননি বলে জানিয়েছিলেন আগেই। সেই সময়ের কথা ফের উঠে এল রোহিতের সঙ্গে আলোচনায়। বিরাট বলেন, “অনেক দিন ব্যাট ছুঁইনি। এশিয়া কাপে ফিরে আসার পর আমার মাথা ঘুরছিল যে ব্যাট করতে হবে। তুমি (রোহিত) এবং দল যে ভাবে আমার কঠিন সময়ে পাশে ছিলে, আমার মাথার উপর থেকে চাপ সরিয়ে দিয়েছিলে। শুধু ব্যাট করার দিকে নজর দিতে বলেছিলে, তার জন্য ধন্যবাদ। এটা আমার জন্য খুব জরুরি ছিল। দলে ফিরে আমার মাথায় শুধু একটাই জিনিস ছিল। রান করতে হবে। সামনে বিশ্বকাপ। আমি যদি ভাল খেলি সেটায় দলের জন্য লাভ হবে।”
রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গেও কথা হয় বিরাটের। ৭১টি শতরানের মালিক বলেন, “তিন-চার দিন আগে কথা হচ্ছিল রাহুল ভাইয়ের সঙ্গে। কী ভাবে ইনিংস সাজাতে হবে তা নিয়ে কথা বলি আমরা। দলের জন্য যা যা প্রয়োজন তা এশিয়া কাপে করার কথা মাথায় ছিল আমার। আমি ভাবিইনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শতরান করব। এত দিন শতরান আসছিল না এবং সেটা যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আসবে ভাবতেই পারিনি।”
২০০৮ সাল থেকে ভারতীয় দলে খেলছেন বিরাট। সেই সময় থেকে দলে রয়েছেন রোহিতও। ১৪ বছর ধরে ভারতীয় দলে খেলছেন তাঁরা। রোহিত বলেন, “তোমার সব থেকে বড় শক্তি হচ্ছে কাজের প্রতি নিষ্ঠা। যে কোনও পরিস্থিতিতে হাল না ছাড়া মনোভাব কাজ করে তোমার মধ্যে। এ বারের এশিয়া কাপের ইনিংসগুলোতে সেটা দেখা গিয়েছে। তোমার ইনিংস উদাহরণ হয়ে থাকবে যে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই শুধু ছক্কা মারা নয়। আমি তোমাকে বহু বছর ধরে খেলতে দেখছি। বড় শট না খেলেও যে ইনিংস গড়া যায় সেটা প্রমাণ করে দিয়েছ তুমি।” বিরাট বলেন, “আমি তিন ধরনের ক্রিকেটেই খেলতে চাই। সব সময় ক্রিকেটীয় শট খেলার দিকেই নজর দিই আমি। যে কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে নেমেই মাথায় রেখেছি যে ছক্কা মারাটাই শেষ কথা নয়। আমি যে ছক্কা মারতে পারি না তা নয়, প্রয়োজন হলে সেটা মারি। কিন্তু ফিল্ডারদের মাঝে ফাঁক খুঁজে নেওয়াটাই আমার আসল শক্তি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর জন্য শুধুই যে ছক্কা মারতে হবে, সেটা নয়। রানে ফেরার জন্য এটা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। উপভোগ করছি খেলাটা। মনে হচ্ছে নিজের ছন্দে ফিরে এসেছি।”