কাদির পরম্পরার মশাল এখন উসমানদের হাতে, বলছেন দাদা
Usman Qadir

Naseem-Usman: স্লোয়ার-ইয়র্কারে নতুন নাসিম, মত কোচের

বছর পাঁচেক আগে তরুণ নাসিম আন্তর্জাতিক মঞ্চে আবির্ভাবেই ঝড় তোলেন তাঁর গতিতে।

Advertisement

কৌশিক দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২২ ০৬:৫৩
Share:

অপেক্ষা: ভারতের বিরুদ্ধে বল হাতে দেখা যেতে পারে নাসিম শাহ এবং উসমান কাদিরকে। ফাইল চিত্র

চার বছর আগে শেষ বার এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ তিনি নিজের চোখে দেখে যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার এক বছর পরেই মৃত্যু হয় আব্দুল কাদিরের। এ বারের এশিয়া কাপে এই কিংবদন্তি লেগস্পিনার থাকবেন না। কিন্তু মরুশহরে তাঁর নামের পরম্পরা বহন করবেন দুই তরুণ ক্রিকেটার।

Advertisement

নাসিম শাহ এবং উসমান কাদির।

প্রথম জন আব্দুল কাদির অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা আগুনে গতির ফাস্ট বোলার। দ্বিতীয় জন স্বয়ং কাদিরের পুত্র— উদীয়মান লেগস্পিনার। আর এই দু’জনের উত্থান খুব কাছ থেকে দেখেছেন যিনি, তাঁর নামের পরেও কাদির রয়েছে! তিনি সুলেমান— উসমানের দাদা এবং নাসিমের কোচ।

Advertisement

বছর পাঁচেক আগে তরুণ নাসিম আন্তর্জাতিক মঞ্চে আবির্ভাবেই ঝড় তোলেন তাঁর গতিতে। যে গতি দেখে প্রথম দর্শনে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং আব্দুল কাদিরও। লাহোর থেকে ফোনে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুলেমান বলছিলেন, ‘‘ওকে দেখে বাবা আমাকে বলেছিলেন, এই ছেলেটা অনেক দূর যাবে। মাথায় রাখবে, গতি যেন না কমায়।’’ লাল বলের ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দেওয়া নাসিম অনেক দিন সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে দূরেই ছিলেন। এ বার এশিয়া কাপে পাক আক্রমণের অন্যতম ভরসা তিনি।

টেস্ট থেকে একেবারে টি-টোয়েন্টিতে! কী ভাবে ছাত্রকে বদলে দিয়েছেন কোচ? সুলেমান বলছিলেন, ‘‘সীমিত ওভারের ক্রিকেটে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে সফল হতে হলে যে বৈচিত্র দরকার, তা সবাই জানে। সে জন্য নাসিমকে নিয়ে অনুশীলনে জোর দিয়েছিলাম ইয়র্কার করানোর উপরে আর গতি পরিবর্তনে। দু’টোই দারুণ আয়ত্ত করেছে ও।’’

সুযোগ পেলেই ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতারদের বোলিংয়ের ভিডিয়ো দেখতে বসে যান নাসিম। এর থেকে কি শিক্ষা পেয়েছেন এই ফাস্ট বোলার? বল ছাড়ার সময় কব্জির ব্যবহারে জোর দেওয়া। পাশাপাশি কোচের মন্তব্য, ‘‘নাসিমের স্বাভাবিক অ্যাকশনে কোনও বদল করিনি। এই অ্যাকশনেই কিন্তু ও বোলিংয়ে বৈচিত্র এনে ফেলেছে। একই অ্যাকশনে স্লোয়ার বল করছে। ইয়র্কারটাও খুব ভাল দিচ্ছে। এই দু’টো অস্ত্র কিন্তু ওকে টি-টোয়েন্টিতে ত্রাস করে তুলবে। তার সঙ্গে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল তো আছেই। সব মিলিয়ে এক নতুন নাসিম।’’ কোচ সুলেমানের চোখে বছর কুড়ির নাসিমের সবচেয়েশক্তিশালী দিক হল ক্রিকেটীয় বুদ্ধি। সুলেমান বলছিলেন, ‘‘ও কিন্তু দারুণ বুদ্ধিমান। মানসিক ভাবেও খুব শক্তিশালীও। যার ফলে কোন সময় কী বল করতে হবে, বুঝে নিতে পারে চটজলদি। যে কারণে নতুন বলের পাশাপাশি ডেথ ওভারেও ওর উপরে ভরসা রাখতে পারবে বাবর আজ়ম। তার উপরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির পিচে খেলার অভিজ্ঞতাও বড় অস্ত্র হতে চলেছে নাসিমের কাছে।’’

উসমানকে আরও ছোট বয়স থেকে দেখছেন সুলেমান। প্রায় ন’বছরের ছোট ভাই যে দিন থেকে লেগস্পিন করানোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন, সে দিন থেকেই উসমানের প্রতি নজর ছিল দাদা সুলেমানের। ‘‘স্বাভাবিক ভাবেই বাবার নাম যদি আব্দুল কাদির হয়, তা হলে ছেলেরা স্পিন বোলিংয়ে ঝুঁকবে, এটা তো স্বাভাবিক,’’ বলছিলেন তিনি। ছেলেবেলায় টেনিস বলে স্পিন করানো শুরু। তার পরে ধীরে ধীরে নিজেকে ধারালো করে তুলেছেন উসমান।

সুলেমান বলছিলেন, ‘‘উসমানের হাতে তিন ধরনের ডেলিভারি আছে। লেগস্পিন, গুগলি এবং স্ট্রেটার। এশিয়া কাপে পাকিস্তান দলে দু’জন লেগস্পিনার আছে ঠিকই, কিন্তু শাদাব খান হল অলরাউন্ডার। উসমান হল পরিপূর্ণ লেগস্পিনার। ভারতের যেমন যুজ়বেন্দ্র চহাল।’’

দাদা মনে করেন, উসমানকে সফল হতে গেলে অধিনায়ককেও দায়িত্ব নিতে হবে। সেটা কী রকম? প্রাক্তন অফস্পিনার সুলেমানের জবাব, ‘‘এক জন লেগস্পিনারকে তৈরি হতে হলে পরপর ম্যাচ খেলতে হয়। উসমানকে যদি পাকিস্তান টানা কয়েকটা সিরিজ় খেলায়, তা হলে কিন্তু ও তৈরি হয়ে যাবে। আবার যদি মার খেয়ে যাবে ভেবে ঠিক মতো ব্যবহার না করে, তা হলে নিজেকে প্রমাণ করা একটু কঠিন হবে উসমানের পক্ষে।’’

লেগস্পিনার মানেই যে প্রয়াত বাবার সঙ্গে উসমানের তুলনা হবে, তা জানেন সুলেমান। বলছিলেন, ‘‘আমার বাবা কত বড় বোলার ছিলেন, তা সবাই জানে। সেই নাম, সেই পরম্পরা বহন করে খেলতে নামছে উসমান। স্বাভাবিক ভাবেই ওর উপরে বাড়তি নজর থাকবে।’’ একটু হেসে যোগ করেন, ‘‘আব্দুল কাদিরের তিরিশ শতাংশ বল করতে পারলেই উসমান বিশ্বের অন্যতম সেরাবোলার হয়ে উঠবে।’’

পাকিস্তান দল এখন দুবাইয়ে। ছাত্র, ভাইকে কী পরামর্শ দিচ্ছেন? সুলেমানের জবাব, ‘‘আমি বলেছি, এশিয়া কাপ তোমাদের জীবন বদলে দিতে পারে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ তোমাদের ভাল ক্রিকেটার থেকে দারুণ ক্রিকেটারে বদলে দিতে পারে। যে সুযোগটা পাবে, সেটা কাজেলাগাতে ঝাঁপিয়ো।’’

কথোকপথন শেষ হওয়ার আগে কাদিরের বড় ছেলে বলে গেলেন, ‘‘দু’জনের নামের সঙ্গেই আব্দুল কাদির জুড়ে আছেন। নাসিম আব্দুল কাদির অ্যাকাডেমির ছাত্র। আর উসমান তো কিংবদন্তির ছেলে। তাই যে-ই সফল হোক, আব্দুল কাদিরের নামটাই আরও এক বার উজ্জ্বল হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement