রোহিত শর্মা এবং বাবর আজ়ম। — ফাইল চিত্র।
আরও এক বার বিশ্ব ক্রিকেটের ‘এল ক্লাসিকো’ দেখার জন্য তৈরি মরুশহর। এক সপ্তাহ আগে যে দ্বৈরথ নিয়ে উত্তাল ছিল ক্রিকেট দুনিয়া, তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে রবিবার, দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
যে দ্বৈরথ শুধু বাইশ গজেই সীমাবদ্ধ থাকে না। যে দ্বৈরথের আবেগ ওয়াঘা সীমান্তের এ পার-ও পার ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও। যে ম্যাচের আগে রবি শাস্ত্রীর মতো প্রাক্তনেরা ক্রিকেটারদের পরামর্শ দেন, গণমাধ্যম এবং মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকতে। ওয়াসিম আক্রম বা সেলিম মালিকরা বলে থাকেন, যারা চাপ সামলাতে পারবে, তারাই শেষ হাসি হাসবে।
দিন সাতেক আগে পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করেছিল ভারত। সেটি ছিল গ্রুপের ম্যাচ। এ বার সুপার ফোরের লড়াইয়ে টস করতে নামবেন রোহিত শর্মা এবং বাবর আজ়ম। এখানে যে দল জিতবে, ফাইনালের দিকে এক পা এগিয়ে যাবে তারা। তবে প্রথম ম্যাচের সঙ্গে এই ম্যাচে একটা পার্থক্য থাকতে চলেছে। সেটা হল, দু’দলই তাদের সেরা একাদশ মাঠে নামাতে পারছে না। চোট-আঘাতের শিকার দু’দলই। ভারত পাচ্ছে না অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাডেজাকে। হার্দিক পাণ্ড্যের সঙ্গে জুটি বেঁধে যিনি প্রথম ম্যাচে ভারতকে জয় এনে দিতে সাহায্য করেছিলেন। প্রশ্ন আছে, পেসার আবেশ খানের সুস্থতা নিয়েও। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে এসে ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলে যান, আবেশ পুরো সুস্থ নন। পাকিস্তান আগেই হারিয়েছিল শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। এ বার ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে চোট পেয়ে গেলেন তরুণ পেসার শাহনাওয়াজ় দাহানিও।
ভারত-পাক ম্যাচের উত্তাপ কিছুটা টের পাওয়া গেল দ্রাবিড়ের সাংবাদিক বৈঠকেও। শনিবার এক পাকিস্তানি সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘‘একটা সময় মহম্মদ আমির, তার পরে শাহিন আফ্রিদি আর এখন নাসিম শাহ সমস্যায় ফেলছে ভারতের প্রথম দিকের ব্যাটসম্যানদের।’’ জবাবে ঠান্ডা মাথার ভারতীয় কোচ বলে ওঠেন, ‘‘গত এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপে রোহিত শর্মা সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিল। শেষ দু’টো ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রান করেছে বিরাট কোহলি। তা হলে আপনি কী বলতে চাইছেন?’’
প্রথম দিকের ব্যাটসম্যানদের ফর্ম নয়, ভারতীয় দল অন্য একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। জাডেজার জায়গায় কে? হংকং ম্যাচে হার্দিক পাণ্ড্যকে বিশ্রাম দিয়ে ঋষভ পন্থকে খেলানো হয়। হার্দিক দলে ফিরবেন। কিন্তু তা হলে স্পিনার কমে যাবে ভারতের। সে ক্ষেত্রে আর অশ্বিন, অক্ষর পটেল বা রবি বিষ্ণোইয়ের মধ্যে এক জনকে খেলাতে পারে ভারত। তা হলে বাদ যেতে হয় সেই ঋষভ পন্থকে। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের শুরুর দিকে কোনও বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান থাকবেন না। আগের ম্যাচে পাকিস্তানের দুই স্পিনারকে সামলানোর জন্য জাডেজাকে চার নম্বরে তুলে এনেছিল ভারত। যে চাল খেটে যায়। ঋষভ না খেললে সেই বিকল্প থাকবে না ভারতের হাতে। জাডেজার বিকল্প কে, দ্রাবিড়-রোহিতকে সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে বার করতে হবে। সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য অশ্বিনের প্রশংসা করে গিয়েছেন দ্রাবিড়।
অশ্বিন প্রসঙ্গে ভারতীয় কোচ এ দিন বলেন, ‘‘অফস্পিনার সব সময় বড় অস্ত্র। অশ্বিন ব্যাটটাও করতে পারে পরের দিকে। প্রয়োজন হলে আমরাও ওকে কাজে লাগাব।’’ ঋষভ পন্থ যে এই মুহূর্তে এক নম্বর উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নয়, তাও জানিয়েছেন দ্রাবিড়। বলেছেন, ‘‘দলে কেউ এক নম্বর উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নয়। আমরা পরিবেশ, পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষ দেখে সেরা একাদশ বাছি।’’ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ঋষভকে বাইরে রাখা কঠিন। বিরাট কোহলি প্রসঙ্গে কোচের মন্তব্য, ‘‘বিরাটের পরিসংখ্যান নিয়ে মাতামাতি বেশি হয়। কত রান নয়, কোন পরিস্থিতিতে বিরাট রান করল, সেটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই যে চাপের খেলা, তা স্বীকার করে নিয়েছেন পাকিস্তানের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মহম্মদ রিজ়ওয়ান। গত বিশ্বকাপে রিজ়ওয়ানের ব্যাটে জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। সপ্তাহ খানেক আগে ভারতের কাছে হারলেও রিজ়ওয়ান সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন পাকিস্তানের। এ বারের দ্বৈরথের আগে তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের বিরুদ্ধে খেলা মানে সব সময়ই চাপের ব্যাপার। এশিয়ার বাইরের মানুষও এই ম্যাচটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। আমাদের কাছে এই ম্যাচ সব সময়ই একটা ফাইনাল। এত আবেগ জড়িয়ে থাকে ম্যাচটার সঙ্গে।’’
ভারত-পাক দ্বৈরথ নিয়ে রিজ়ওয়ান আরও বলছিলেন, ‘‘ক্রিকেটপ্রেমীরা তো সামনের রবিবারেও আর একটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আশা করে আছেন। আমরা ড্রেসিংরুমে নিজেদের মধ্যে মজা করে বলছিলাম, এখানে তিন ম্যাচের ভারত-পাকিস্তান সিরিজ় হচ্ছে।’’ দু’দল ফাইনালে উঠতে পারলেই পরের রবিবারও আবার দেখা যাবে এক ভারত-পাক দ্বৈরথ।
রিজ়ওয়ান মনে করেন, দু’দলের মধ্যে যারা চাপটা ভাল সামলাবে, তারাই শেষ হাসি হাসবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাবর আজ়মের ওপেনিং সঙ্গী বলেছেন, ‘‘আমাদের উপরে যেমন, সে রকম ভারতের উপরেও চাপ থাকবে। যারা চাপের মুখে শান্ত থাকতে পারবে আর সাহসী ক্রিকেট খেলতে পারবে, তারাই জিতবে।’’