(বাঁ দিকে) অ্যালেক্স ক্যারে এবং অ্যালিস্টার কুক। ছবি: সংগৃহীত।
অ্যাশেজ সিরিজ়ের ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় না বুঝে অ্যালেক্স ক্যারেকে কটাক্ষ করেছিলেন অ্যালিস্টার কুক। নিজের ভুল বুঝতে পেরে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক।
অ্যাশেজ মানেই ইংরেজদের সঙ্গে অস্ট্রেলীয়দের ঠোকাঠুকি। ২২ গজের লড়াইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলতে থাকে বাগ্যুদ্ধ। সুযোগ পেলে কোনও পক্ষই ছাড়ে না দু’কথা শুনিয়ে দিতে। অনেকটা তেমনই ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় ক্যারেকে ঠুকেছিলেন কুক। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেছিলেন, হেডিংলেতে অ্যাশেজ সিরিজ়ের তৃতীয় টেস্ট শুরুর আগে চুল কাটাতে গিয়েছিলেন ক্যারে। কিন্তু নাপিতকে টাকা দেননি তিনি।
ধারাভাষ্যকার কুকের মুখে এই মন্তব্য চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। কারণ আগেই আসল বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল। ক্যারে মুখ না খুললেও কুককে পাল্টা জবাব দেন অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। তাঁর অভিযোগ, কুক মনগড়া কথা বলছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘নিশ্চিত করে বলতে পারি ইংল্যান্ডে আসার পর ক্যারে এক বারও চুল কাটায়নি।’’ সমাজমাধ্যমে স্মিথের জবাবের পর ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন কুক। তাঁর বক্তব্য, তাঁর ভুল হয়েছিল। কুক লেখেন, ‘‘চেনার ভুল। অ্যালেক্স ক্যারেকে আমি ঠিক মতো চিনতে পারিনি। তাই ক্ষমা চাইছি।’’
তৃতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার আগের দিন লিডসের ডক বার্নেটস বার্বার শপে চুল কাটতে গিয়েছিলেন ক্যারে। সঙ্গে ছিলেন সতীর্থ মার্নাস লাবুশেন, ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খোয়াজা। অ্যাডাম মাহমুদ নামে এক নাপিত তিন জনেরই চুল কাটেন। লাবুশেন এবং ওয়ার্নার সেই নাপিতের সঙ্গে ছবি তুললেও ক্যারে ছবি তুলতে চাননি। বাকিরা টাকা দিলেও তিনি টাকাও দেননি বলে অভিযোগ ওঠে।
এক সংবাদপত্রে অ্যাডাম বলেছিলেন, “দোকান বন্ধ করার ঠিক আগে ওরা চার জন আসে। আমরা চুল কেটে দিই। কিন্তু বিল মেটানোর সময় ক্যারে জানায় ওর কাছে নগদ টাকা নেই। আমরা ক্রেডিট কার্ড নিই না। আমাদের দোকানের সামনেই টাকা তোলার যন্ত্র ছিল। তা ছাড়া পাঁচ মিনিট দূরেই ওর হোটেল। সেখান থেকেও টাকা নিয়ে আসতে পারত। কিন্তু ও জানায়, পরে টাকা ট্রান্সফার করে দেবে। হয়তো ভুলে গিয়েছে। সোমবারের মধ্যে ও টাকা না দিলে আমি দুঃখ পাব।”
সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ উড়িয়ে দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তাদের দাবি, টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার পর থেকে চুলই কাটাননি ক্যারে। তিন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে যিনি চুল কাটতে গিয়েছিলেন, তিনি দলের অন্য একজন সদস্য। চুল কাটার পরেই আন্তর্জাতিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা দিয়ে দেন। সেই প্রমাণও তাঁদের কাছে রয়েছে।
অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সঙ্গে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েক জন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।