মগ্ন: আইপিএল মঞ্চে নতুন অধ্যায়ের প্রস্তুতি স্টার্কের। —ফাইল চিত্র।
কলকাতায় এসে এখনও স্থানীয় খাবার চেখে দেখা হয়নি। শুনেছেন বিরিয়ানি, মিষ্টি দই, রসগোল্লার জন্য এই শহর জনপ্রিয়। নতুন খাবার স্বাদ পাওয়ার সুযোগ নষ্ট করতে চান না। দীর্ঘ নয় বছর পরে আইপিএল খেলতে এসেছেন। নিলামে ২৪.৭৫ কোটি টাকা দর ওঠার পরে বিস্মিত হয়েছিলেন। মেনেও নিয়েছেন, দক্ষতার জন্যই এত অর্থ দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি জোরে বোলার, মিচেল স্টার্ক। বুধবার কেকেআরের টিম হোটেলে আনন্দবাজারের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানালেন তাঁর লক্ষ্য ও পরিকল্পনা।
প্রশ্ন: দীর্ঘ নয় বছর পরে আইপিএল খেলতে এসেছেন। এত বছর এই প্রতিযোগিতায় না খেলার কারণ কী?
মিচেল স্টার্ক: বিশেষ কোনও কারণ নেই। জোরে বোলাররা যে কোনও প্রতিযোগিতা খেলতে পারে না। বিশ্রাম নিতে হয়। মার্চ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টানা সূচি থাকত। তার পরে আর ইচ্ছে করত না। এ বার আইপিএলের পরে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিজেকে তৈরি করে তোলার আদর্শ মঞ্চ আইপিএল। নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিগ। এখানে তৈরি হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার সুযোগ পাব। তাই ভেবে দেখলাম, এ বার আইপিএলে আমার খেলা উচিত।
প্র: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বৈচিত্র জরুরি। আপনার হাত থেকে কি নতুন কোনও ডেলিভারির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে?
স্টার্ক: আমি বৈচিত্রে খুব একটা বিশ্বাস করি না। ১৫-১৬ রকমের ডেলিভারি আমার হাতে নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হয়েছি ধারাবাহিকতা ও সুইংয়ের সাহায্যে। আমার হাতে যা অস্ত্র আছে, তা প্রয়োগ করলেই
সাফল্য আসবে।
প্র: প্রথম ম্যাচ সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক আপনার বন্ধু প্যাট কামিন্স। তাঁর বিরুদ্ধে খেলা কতটা কঠিন বলে মনে হয়?
স্টার্ক: প্যাট আর আমি এখনও পর্যন্ত একে-অন্যের বিরুদ্ধে খেলিনি। দু’জনের কাছেই এটা প্রথম বার হতে চলেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও প্যাটের নেতৃত্বে খেলা হয়নি। টেস্ট এবং এক দিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে ও অসাধারণ। খুব ঠান্ডা মাথার ছেলে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে দল হিসেবে আমরা খুব ভাল খেলতে শুরু করেছি। এ বার দেখার, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ও কী রকম নেতৃত্ব দেয়।
প্র: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি বরাবরই সফল। ২০১৯ ও ২০২৩ এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতার সঙ্গে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালেও ভারতকে হারিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতটা সফল হওয়ার পরেও কি ২৪.৭৫ কোটি টাকার মূল্য আপনার উপরে চাপ সৃষ্টি করছে?
স্টার্ক: আমার ৩৪ বছর বয়স। ১৫ বছর ধরে পেশাদার ক্রিকেট খেলছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গেলে অনেক বেশি চাপ সামলাতে হয়। তবে যে মূল্য দেওয়া হচ্ছে, তা শুনতে বড় মনে হলেও আমার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আইপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের পারফর্ম করার চাপ থাকেই। কম মূল্যেও যদি কোনও দল নিত, ভাল খেলতে
হত। আমার কাজ ম্যাচ জেতানো। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত সফল বলেই হয়তো এত বড় মূল্য দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং ‘প্রাইস ট্যাগ’ আমাকে ভাবায় না। তবে হ্যাঁ, এতটা অর্থ পাব ভাবিনি। নিলামের দিন সকলের মতো আমিও বিস্মিত হই।
প্র: আইপিএলের পরেই বিশ্বকাপ। অতিরিক্ত ক্রিকেটে ধকলের বিষয়ে কি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? সব ম্যাচে খেলার অনুমতি কি পেয়েছেন?
স্টার্ক: আমি পুরো মরসুমই দলের সঙ্গে থাকছি।
প্র: ইডেনে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার উপরের সারির ব্যাটিংকে আপনি ধ্বংস করেছিলেন। ইডেন কেকেআরের ঘরের মাঠ। এখানেই বেশির ভাগ ম্যাচ খেলবেন। পিচ দেখে কী মনে হল?
স্টার্ক: ইডেনে আমার ভাল স্মৃতি আছে। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও শেষমেশ আমরা জিতি। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে বল করে খুব ভাল লেগেছে। সুইং পাচ্ছি, উইকেটে বাউন্স আছে। মরসুম জুড়ে এ রকম পিচ পেলে আর চিন্তা নেই।
প্র: কেকেআরে শাকিব হোসেন, হর্ষিত রানার মতো পেসার রয়েছেন। তরুণ পেসারদের কী পরামর্শ দেবেন?
স্টার্ক: আলাদা করে আমার পরামর্শ দেওয়ার কিছু নেই। প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। তবে আমার কাছে ওরা যদি কিছু জানতে চায়, অবশ্যই সাহায্য করব। এখন তো আমরা সতীর্থ। ট্রফি জিততে গেলে ঐক্যবদ্ধ হয়েই এগোতে হবে।