ফাইল চিত্র।
পিটার শিল্টনকে মনে আছে? ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গোলকিপার যিনি ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে দিয়েগো মারাদোনার ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের শিকার হয়েছিলেন।
শিল্টনের কথাটা তুললাম ওঁর বয়সটাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। ওই বিশ্বকাপে শিল্টনের বয়স ছিল ৩৭। শিল্টনের আন্তর্জাতিক ফুটবল জীবন ওখানেই কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। চার বছর বাদে ইটালি বিশ্বকাপেও দাপটের সঙ্গে খেলেছিলেন তিনি।
শিল্টনের প্রসঙ্গটা তুলে একটা কথাই মনে করিয়ে দিতে চাই। বয়সের হিসাব কষে কিন্তু পারফরম্যান্স বা ফিটনেসকে মাপা উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় মাঠে কী করছে, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিত।
নিজের শেষ সিরিজ়ে ঋদ্ধিমান সাহা যে ক্রিকেটটা খেলেছে, তাতে ওকে টেস্টের দল থেকে ছেঁটে ফেলার কোনও রাস্তাই নেই। ঋদ্ধির বয়স ৩৭ হয়ে গিয়েছে, এটা কোনও যুক্তি
হতে পারে না।
বুধবার সকালে খবরটা জেনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট নাকি ঋদ্ধিকে ডেকে বলে দিয়েছে, ওকে আর প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতের টেস্ট-নকশায় ঋদ্ধির জায়গা হচ্ছে না। যদিও এই নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। আমি দীর্ঘদিন জাতীয় নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব সামলেছি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কী ভাবে চলে, সে ব্যাপারে ভাল ধারণা আছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দল পরিচালন সমিতির কোনও এক্তিয়ারই নেই, এই ভাবে ডেকে কোনও ক্রিকেটারকে বিদায়-বার্তা শুনিয়ে দেওয়ার। যা কিছু করার করবে নির্বাচকদের কমিটি।
নির্বাচক থাকার সময় আমাদের কাজ করার পদ্ধতিটা একটু বলি। কোনও ক্রিকেটারের ফিটনেস সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে আমরা ফিজ়িয়োর সঙ্গে কথা বলতাম। পারফরম্যান্সের ব্যাপারে কোনও প্রশ্ন থাকলে কোচ-অধিনায়কের মতামত নিতাম। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই নেওয়া হত। তার পরে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে নিতাম। তবে যা করত, নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানই করত বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে।
ঋদ্ধির ক্ষেত্রেও সেটা হওয়াই উচিত। নির্বাচকরা কেন কিছু বলবে না? এ তো গেল একটা দিক। অন্য দিকে আসছি। ভারতীয় দলে টিম ম্যানেজমেন্ট বলে এখন কাদের বোঝানো হচ্ছে? লাল বলের ক্রিকেটে তো এখন কোনও অধিনায়কই নেই ভারতের। বিরাট কোহলি সরে যাওয়ার পরে তা হলে কোচ রাহুল দ্রাবিড় কার সঙ্গে আলোচনা করছে? কে এল রাহুল, রোহিত শর্মা না অন্য কেউ? নাকি দ্রাবিড় একাই
সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?
এ বার আসি ঋদ্ধির ফিটনেস আর ফর্ম প্রসঙ্গে। টেস্ট ক্রিকেটের নিরিখে যদি ভারতীয় ক্রিকেটারদের ফিটনেসের মান বিচার করতে বসি, তা হলে প্রথম তিন ক্রিকেটার হবে— বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাডেজা এবং ঋদ্ধিমান। ওর কিপিং করা দেখলেই বোঝা যায়, কতটা ফিট ঋদ্ধি। স্রেফ বয়সের দোহাই দিয়ে ওর ফিটনেস মাপতে যাওয়া ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, পঁয়ত্রিশ বছরের অশ্বিনও কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেট খেলছে।
এ বার আসি ফর্মের কথায়। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে শেষ সিরিজ় খেলেছে ঋদ্ধি। সেখানে কানপুর টেস্টে ও রকম ঘাড়ে-কাঁধে চোট নিয়ে যা ব্যাটিং করেছে শিলিগুড়ির পাপালি, তা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যাননি। ও রকম চোটে ঘাড় ঘোরানোই যায় না। সেই অবস্থায় স্টান্স বদলে অপরাজিত ৬১ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে কোণঠাসা ভারতকে জয়ের কাছে নিয়ে এসেছিল ঋদ্ধি। বোলাররা নিউজ়িল্যান্ডের শেষ উইকেট তুলতে পারেনি বলে টেস্টটা ড্র হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে একটা টেস্টেও সুযোগ পায়নি। তা হলে কী যুক্তিতে ঋদ্ধিকে ছেঁটে ফেলার ভাবনা শুরু হয়ে গেল?
আমি জানি না, নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান চেতন শর্মা কী করছে। ভারতীয় বোর্ডই বা চুপ কেন। তবে সব কিছু এখনও হাতের বাইরে চলে যায়নি। আশা করব, বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কর্তারা এগিয়ে এসে ঘটনাটা সামলাবেন এবং ক্রিকেটারকে তার যোগ্য সম্মান দেবেন।
পরের মাসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়। আমি জানি না, শেষ পর্যন্ত নির্বাচকেরা কী দল বেছে নেবে। ঋদ্ধিকে শেষ পর্যন্ত রাখা হবে কি না। যদি না রাখা হয়, তা হলেও আশা করব, ঋদ্ধি লড়াইটা চালিয়ে যাবে।