লক্ষ্য: টেস্ট খেলে বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে চান বেঙ্কটেশ। ছবি টুইটার।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে মাত্র দশটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন শেষ মরসুমে। ৩৭০ রানের পাশাপাশি তিনটি উইকেট নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিয়েছেন বেঙ্কটেশ আয়ার। আইপিএলের দ্বিতীয় দফায় সপ্তম স্থান থেকে দলকে প্লে-অফে ওঠার স্বপ্ন দেখান তিনিই। তাঁর লড়াইয়ের মর্যাদা দিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আট কোটি টাকা দিয়ে নাইট কর্তারা রেখে দেন আয়ারকে। দ্বিতীয় বার নাইট শিবিরে থাকার সুযোগ পেয়ে তাঁর অনুভূতি কী? আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কতটা উপভোগ করলেন? আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে তাঁর কী অভিমত? একান্ত সাক্ষাৎকারে বেঙ্কটেশ উত্তর দিলেন আনন্দবাজারকে।
নাইট পরিবারকে ধন্যবাদ: মাত্র দশ ম্যাচ খেলার পরেই যে আমাকে রেখে দেওয়া হবে, সত্যি ভাবিনি। তবে আগে থেকেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, আমার দিকে নজর রয়েছে। অন্য একটি দলও আমাকে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজ়িতে চেয়েছিল। কিন্তু কেকেআরের এই প্রস্তাব আমি ফেলতে পারিনি। নাইট জার্সিতেই পরিচিতি পেয়েছি ক্রিকেটবিশ্বে। আরও একটি মরসুম এই দলের হয়ে খেলতে চাই। এ বার আইপিএল হবে ভারতে। আশা করব, ইডেনে দর্শকঠাসা গ্যালারির সামনে খেলার সুযোগ পাব। ভারতীয় দলের হয়ে ইডেনে খেলার পরে আন্দাজ করতে পেরেছি, আইপিএলে কী রকম হতে পারে মাঠের পরিবেশ।
দেশের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা: ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতাম বলেই চাকরি ছেড়ে ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছিলাম। দেশের হয়ে অভিষেক ম্যাচের দিনই নায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল। শেষ ওভারে ম্যাচ জেতানোর পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ডারিল মিচেলের বলে আমার রিভার্স সুইপ হাতে চলে যায় রাচিন রবীন্দ্রের। সত্যি বলতে, মন ভেঙে গিয়েছিল। তবে রাহুল স্যর, রোহিত ভাইয়ের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম ব্যবহার করার সুযোগ পাওয়াই বিরাট প্রাপ্তি। দু’জনেই খুব শান্ত। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এক-দু’টো ম্যাচ খারাপ গেলেই মন ভেঙে যেত। রাহুল স্যর বুঝিয়েছেন, প্রত্যেকের জীবনে এ ধরনের সময় আসে। সেখান থেকে যারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাদেরই মনে রাখেন সমর্থকেরা।
ফিনিশারের ভূমিকা: ছোটবেলা থেকেই আমি অলরাউন্ডার। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ম্যাচ জেতানোর মুহূর্তগুলো মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে। এখনও মাহি ভাইয়ের পুরনো ভিডিয়ো দেখি। ভারতীয় দলে আসার পরে আমাকে যখন বলা হয়েছিল ফিনিশারের ভূমিকা পালন করতে হবে, খুবই খুশি হয়েছিলাম। মধ্যপ্রদেশের হয়ে যে কোনও জায়গায় ব্যাট করি। দেশের হয়েও একই ভূমিকা পালন করতে চাই। বল হাতেও আরও বৈচিত্র বাড়াচ্ছি। আশা করি, বিজয় হজারে ট্রফিতে তার ঝলক কিছুটা দেখতে পাবেন।
টেস্ট খেলার স্বপ্ন: প্রত্যেক ক্রিকেটার একটি স্বপ্ন নিয়েই ব্যাট-বল ধরে। দেশের হয়ে টেস্ট খেলবে বলে। আমার বাবা টেস্ট ক্রিকেটের ভক্ত। টিভিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট চালিয়ে দিলেও উনি টেস্টই দেখবেন। বাবা বরাবর বলেন, দেশের হয়ে তোকে টেস্ট খেলতে দেখতে চাই।
টেস্ট খেলার সম্ভাবনা: টি-টোয়েন্টিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন যে ভাবে পূরণ হয়েছে, আশা করি টেস্টের দরজাও সে ভাবে খুলবে। শ্রেয়স আয়ারের অভিষেক ম্যাচের দাপট আমাকে আরও উদ্বুদ্ধ করেছে। প্রথম ব্যাটার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি করার নজির গড়েছে ও। শ্রেয়সের মতো বন্ধুই আমাকে অনুপ্রাণিত করে টেস্ট খেলার জন্য। আসন্ন রঞ্জি ট্রফিতে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই। তার পরে দেখব, সুযোগ আসে কি না।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর: বিরাট ভাই আগের দিন বলেছেন, তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করছেন। তাড়াহুড়ো করে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, যা সমস্যা বাড়াবে। এ বিষয়ে আমার কোনও মতামত নেই। বোর্ড ও সিনিয়র ক্রিকেটারেরা যা ঠিক করবেন, সেটাই মেনে নেব।
গর্বিত প্রতিবেশীরা: ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করে বাড়ি ফেরার পরে প্রতিবেশীরা আমাকে বিশেষ ভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন। প্রত্যেকে মিষ্টিমুখ করেন। দেখে মনে হচ্ছিল বড় কোনও প্রতিযোগিতা জিতে ফিরছি। এত আনন্দ আগে কখনও পাইনি। ভারতীয় দলে খেলার সম্মান হয়তো এ রকমই। যত দিন যাবে, এই দেশের মানুষ আমাকে হয়তো আরও কাছে টেনে নেবেন।