প্রতিপক্ষ: কেপ টাউনে মরিয়া লড়াই বিরাটের। মঙ্গলবার।
সামনে এবং পিছনের পায়ে এসে বল ছাড়ার ব্যাপারে ভারতীয় ক্রিকেটে আমার কাছে এক জনই সেরা। যার এ দিন জন্মদিন ছিল। যার টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজারের উপরে রান আছে। যে এখন ভারতীয় ড্রেসিংরুমে রয়েছে। সচিন তেন্ডুলকর সম্পর্কে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, তার নাম রাহুল দ্রাবিড়।
জানি না, ভারতীয় কোচের সঙ্গে নিজের ব্যাটিং নিয়ে বিরাট কোহলি কোনও কথা বলেছে কি না। কারণ দেখলাম, নিজের ব্যাটিংয়ের ধাঁচ অনেকটাই এ দিন বদলে ফেলেছে বিরাট। ভারত অধিনায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল, বিদেশে একের পর এক ইনিংসে অফস্টাম্পের বাইরে খোঁচা দিয়ে আউট হচ্ছে। কেপ টাউনে, সিরিজ়ের তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনে যেন ও প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিল অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট দেবেই না। অসম্ভব ভাল বল ছাড়ল গোটা ইনিংস জুড়ে। এত সংযমী বিরাটকে আগে দেখিনি। দ্রাবিড়ের পরে কোনও ভারতীয় ব্যাটারকে এত ভাল বল ছাড়তে এই প্রথম দেখলাম।
টস জিতে ভারত ব্যাটিং নিলেও পিচ এবং পরিবেশ ব্যাটারদের পক্ষে খুব একটা ছিল না। মেঘলা আকাশের নীচে আগুনে বোলিং শুরু করে কাগিসো রাবাডা। বিরাট যখন ব্যাট করতে নামল, ভারতের দুই ওপেনার ফিরে গিয়েছে। স্কোর ৩৩। এর পরে ২০১ বল খেলে ৭৯ রান করল বিরাট। আউটটা উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়েই হল, কিন্তু তখন আট উইকেট পড়ে গিয়েছে। বিরাটও একটু রান বাড়াতে গিয়ে মনঃসংযোগে চিড় ধরিয়েছিল। কিন্তু তার আগের দু’শোটা বলে সংযম, ধৈর্য, শৃঙ্খলা, হার-না-মানা মানসিকতার প্রতীক হয়ে লড়ে গেল। যে কারণে ওর এই ৭৯ রানটা আমার কাছে সেঞ্চুরিরও বেশি।
ব্যাটিংয়ে একটু টেকনিক্যাল বদল করেছিল বিরাট। আগে ওর সামনের পায়ের পাতাটা একটু পয়েন্টের দিকে থাকত। এ দিন দেখলাম একটু কভারের দিকে রাখছে। এতে করে বলের লাইনটা যেমন ধরতে পারছে, সে রকমই নিখুঁত ‘ব্যাক অ্যান্ড অ্যাক্রস মুভমেন্ট’-এর জন্য ঠিক অফস্টাম্প লাইনে চলে আসছে। বলটা ডেলিভারি হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে পিছনের পা চলে আসছিল অফস্টাম্পের লাইনে। সামনের পা বলের কাছে। যে কারণে স্টাম্পের খুব কাছ ঘেঁষে থাকা বলও ছাড়তে পারল। স্ট্রোকগুলো ‘ভি’-এর মধ্যে খেলছিল। একটা হুক শট বাদে বেশির ভাগ রান এসেছে কভার, এক্সট্রা কভার, স্ট্রেট ড্রাইভ থেকে। যে সব শট দেখার জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটা যায়।
এ দিন এক জন ৯৯তম টেস্ট খেলছিল, অন্য জন ৫০তম। বিরাট বনাম রাবাডার লড়াইটা দারুণ জমে উঠেছিল। সুইং, সিম আর বাউন্সে আগ্রাসনের শেষ কথা ছিল রাবাডা। চার উইকেট নিল। ফেরাল বিরাটকেও। কিন্তু তাও বলব, একটা ওভার ছাড়া ভারত অধিনায়ককে সে ভাবে চাপে ফেলতে পারেনি রাবাডাও। চেতেশ্বর পুজারা আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলে ৭৭ বলে ৪৩ করল। ঋষভ পন্থ আবার সংযম দেখিয়ে ৫০ বলে ২৭!
ভারতের ২২৩ রানটা খুব বেশি না হলেও শেষবেলায় আগের টেস্টের নায়ক ডিন এলগারকে দিনের সেরা বলে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে বড় ধাক্কা দিয়েছে যশপ্রীত বুমরা।