মুম্বইয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সদর দফতর। ফাইল চিত্র
গত মরসুমের রঞ্জি ট্রফিতে ডিআরএস ছিল না বলে সমালোচিত হয়েছিল বোর্ড। এর পর দেশের সবথেকে ধনী ক্রীড়া সংস্থা বিসিসিআই যখন বলে, ডিআরএস-এর ব্যবস্থা করা মানে প্রচুর খরচ, তখন সেই সমালোচনা হাসাহাসি-ঠাট্টার পর্যায়ে চলে যায়। এ বার আর সমালোচনা, হাসাহাসির অবকাশ রাখছে না বোর্ড। গোটা রঞ্জি ট্রফিতেই থাকছে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম। বৃহস্পতিবার বোর্ডের অ্যাপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইপিএলের টেলিভিশন স্বত্ব বিক্রি করে বোর্ড বিপুল আয় করেছে। সেই টাকা ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে, বোর্ডের একাধিক সিদ্ধান্তে তার ছাপ।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, অ্যাপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রঞ্জি-সহ ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রায় সব প্রতিযোগিতায় এ বার থেকে পুরস্কার মূল্য বাড়ানো হবে। গত বার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ পেয়েছিল ২ কোটি টাকা। রানার্স মুম্বই পেয়েছিল ১ কোটি টাকা। এ বার সেই পুরস্কারমূল্য বাড়ছে। ঘরোয়া এক দিনের প্রতিযোগিতা বিজয় হজারে ট্রফিতে গত বারের চ্যাম্পিয়ন দল ২০ লক্ষ টাকা ও রানার্স ১০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছিল ১০ লক্ষ টাকা, রানার্স ৫ লক্ষ টাকা। অনূর্ধ্ব ১৫ কর্নেল সিকে নায়ডু ট্রফিতে বিজয়ী দল পেয়েছিল ১০ লক্ষ টাকা, রানার্স ৫ লক্ষ টাকা এবং সেমিফাইনালে পরাজিত দু’টি দল পেয়েছিল ২ লক্ষ টাকা করে। সব ঘরোয়া প্রতিযোগিতারই পুরস্কারমূল্য বাড়ছে। টাকা বাড়ছে মহিলাদের বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায়। পুরস্কারমূল্য বেড়ে কত হবে, তা রাজ্য সংস্থাগুলিকে ঠিক করতে বলা হয়েছে। এ বার আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব ৪৮,৩৯০ কোটি টাকায় বিক্রি হওয়ায় বোর্ডের বিপুল লাভ হয়েছে। সেই কারণেই ঘরোয়া ক্রিকেটেও বেশি টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আগামী মরসুমের ক্রীড়াসূচি থেকে অবশ্য বাদ পড়তে চলেছে দেওধর ট্রফি। জানা গিয়েছে, এই ট্রফির জন্য সময় বার করা যায়নি। সেই কারণেই কোপ পড়েছে এই ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতার উপর।
রাজ্যস্তরে ক্রিকেটারদের চুক্তিবদ্ধ করার পদ্ধতিতেও বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বোর্ড সূত্রে খবর, ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য সংস্থাগুলিকে এ বার থেকে তিন বছরের চুক্তি করতে বলা হবে। এত দিন এই চুক্তি হত এক বা দু’বছরের জন্য। কিন্তু বিসিসিআই মনে করছে, অল্প সময়ের জন্য চুক্তি করায় অনেক ক্ষেত্রেই ক্রিকেটারদের প্রতি সুবিচার করা হচ্ছে না। এক-দু’মরসুমের মধ্যেই অনেককে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে, তাঁরা হারিয়ে যাচ্ছেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে বয়স ভাঁড়ানো রুখতে এ বার বাড়তি সতর্ক বোর্ড। জানা গিয়েছে, ক্রিকেটারদের সঠিক বয়স বুঝতে ‘বোনএক্সপার্ট’ নামে একটি বিশেষে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে। বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-১৬ বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এই বিশেষ পদ্ধতিতে ক্রিকেটারদের সঠিক বয়স বোঝা অনেক সহজ হবে। খরচও তুলনায় কম হবে।
ঠিক হয়েছে, মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটও শুরু হবে। এই খবর আনন্দবাজার অনলাইন আগেই জানিয়েছিল। অ্যাপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকেও সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বছর থেকেই মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৬ ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করার পিছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। সামনের বছর থেকে শুরু হয়ে যাবে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় এই বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। সেখানে ভারতকে ভাল কিছু করতে হলে তার আগের বয়সভিত্তিক স্তরেও ক্রিকেট শুরু করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, জয় শাহরা। সেই কারণেই মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৬ ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করা হচ্ছে। অনূর্ধ্ব-১৪ স্তরেও মেয়েদের ক্রিকেট শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বোর্ডের। এখন ভারতের মহিলা ক্রিকেটে বয়সভিত্তিক স্তরে দু’টি দল রয়েছে। একটি অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অন্যটি অনূর্ধ্ব-২৩।
বৃহস্পতিবারের অ্যাপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে বোর্ড কর্তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, আইপিএলের হাত ধরে যে বিপুল টাকা আসছে, তা ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিকাঠামোর উন্নতিতে নানা ভাবে কাজে লাগানো হবে।