বিতর্ক: আমির সোহেলের মন্তব্য নিয়ে ঝড় উঠেছে ক্রিকেটবিশ্বে।
রবিবার ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালের প্রথম বল পড়তে দু’দিন বাকি থাকলেও মাঠের বাইরের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল এজবাস্টনে সেমিফাইনালের শেষ বল হওয়ার পর থেকেই। যুদ্ধটা শুরু করে দিলেন দু’দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। যার মধ্যে আবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও সামিল।
যুদ্ধটাও বেশ ব্যতিক্রমী।
এক দিকে প্রাক্তন পাকিস্তান অধিনায়ক আমির সোহেল যেখানে নিজের দেশের ক্রিকেটারদেরই হেয় করার চেষ্টা করেন। সেখানে ভারতের প্রাক্তনরা সরব হলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের অপমানের প্রতিবাদে!
সীমান্তে দু’দেশের সম্পর্ক যেখানে গোলা-বারুদে ঠাসা, সেখানে দুই দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যে এই অভিনব বিতর্ক ব্যতিক্রম ছাড়া আর কী?
পাকিস্তান রবিবার ফাইনালের টিকিট পাওয়ার পর আমির সোহেল সে দেশের এক টিভি চ্যানেলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, ‘‘সরফরাজকে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। নিজেদের কৃতিত্বে ফাইনালে ওঠোনি। তোমাদের ফাইনালে ওঠানো হয়েছে। বাইরের শক্তির জন্য তোমরা ফাইনালে উঠতে পেরেছ।’’
সোহেলের এই শেষ লাইনটিতেই দাবানলের মতো বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট বিশ্বে। প্রশ্ন ওঠে, তাঁর মন্তব্যে কি গড়াপেটার ইঙ্গিত রয়েছে?
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এক ভারতীয় টিভি চ্যানেলে এর পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, ‘‘এতেই ওর (সোহেল) সংস্কৃতি ও রুচির পরিচয় পাওয়া গেল। এ রকম এক জন প্রাক্তন ক্রিকেটার আর অধিনায়কের তো সে দেশের ছেলেরা যে ভাবে ফাইনালে উঠেছে তার প্রশংসা করা উচিত।’’
পাকিস্তানের কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার এত দ্রুত সোহেলের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া না জানালেও সৌরভের এই পাল্টা বিস্ফোরণে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। এমন পোস্টও দেখা যায়, ‘‘ভারত-পাক ম্যাচের আগে মাঠের বাইরে প্রাক্তনদের মধ্যে সৌহার্দ্য! এটাই বোধহয় গড়াপেটা।’’
সৌরভের সঙ্গে গলা মেলান হরভজন সিংহও। তিনিও সোহেলের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ওদের প্রাক্তনরা আসলে খুব হিংশুটে। ওরা আসলে ভাবতেই পারেনি যে ওদের দল ফাইনালে উঠবে। সত্যি বলতে আমিও তা ভাবতে পারিনি। কিন্তু প্রচুর পরিশ্রম করে ওরা যখন সেটা পেরেছে, তখন ওদের দেশেরই প্রাক্তনরা ওদের নিয়ে আজে-বাজে কথা বলছে, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক।’’
প্রসঙ্গত, টিভির যে অনুষ্ঠানে সোহেল এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন, সেই একই অনুষ্ঠানে প্রাক্তন অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদও ছিলেন। এবং তাঁকে দেখেও মনে হয়, সোহেলের কথায় তাঁর সায় রয়েছে। আসলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অসাধারণ জয়ের দিনটা ছিল মিয়াঁদাদের জন্মদিন।
পাক মিডিয়ার খবর, সেই ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকে এক পাকিস্তানি সাংবাদিক অধিনায়ক সরফরাজ আমেদকে প্রশ্ন করেন, এমন দিনে পাওয়া জয় তিনি মিয়াঁদাদকে উৎসর্গ করবেন কি না। যার উত্তরে সরফরাজ সাফ জানিয়ে দেন, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সমালোচনা ছাড়া আর কিছুই করেন না মিয়াঁদাদ। তাই তাঁকে জয় উৎসর্গ করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সরফরাজের এই মন্তব্যের পর থেকেই খেপে গিয়েছেন মিয়াঁদাদ-ঘনিষ্ঠ সোহেল বলে পাক মিডিয়ার ধারণা।
যদিও শুক্রবার তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে দিনভর নাটকের পর সোহেল বিষয়টাকে হালকা করার চেষ্টা শুরু করে দেন দিনের শেষে। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ভুল বোঝা হচ্ছে। যা বলা হচ্ছে সেটা নয়, আমি কিন্তু বলতে চেয়েছিলাম, ওরা ফাইনালে উঠেছে সমর্থকদের প্রার্থনা ও ঈশ্বরের আশীর্বাদে। বাইরের শক্তি বলতে এটাই বলতে চেয়েছি।’’
সোহেল অবশ্য যতক্ষণে এ ভাবে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের চেষ্টা শুরু করেন, ততক্ষণে এই বিতর্কের আগুনে মণ-মণ ঘি ঢালা হয়ে গিয়েছে এবং যা নিভতে হয়তো সময় লাগবে।