নিজেদের ভবিষ্যদ্বাণী শেষ অবধি গিলতে হয় বিশেষজ্ঞদেরই। আগেও এই নজির ছিল। আরও এক বার সেই পুরনো ট্রেন্ডকে প্রমাণ করল সদ্য সমাপ্ত ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ।
সিরিজে ভারতের পরাজয় নিয়ে আগাম বলেছিলেন একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার। এ বার তাঁরা আটকে পড়েছেন নিজেদেরই কথার ফাঁদে।
“বিরাট কোহালিকে ছাড়া ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের অবস্থা পরের দুই টেস্টে কল্পনা করা যাচ্ছে?’’ বলেছিলেন মাইকেল ক্লার্ক। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক এই মন্তব্য করেছিলেন সদ্যসমাপ্ত সিরিজের প্রথম টেস্টের পরে।
অ্যাডিলেডের সেই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রান করে ভারত। ভরাডুবি এবং লজ্জার সেই পারফরম্যান্সের আগেই ক্লার্ক বলেছিলেন, ভারতীয় দল এ বার ঘোর বিপদের মুখে।
তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী আংশিক সফল হয়েছিল ঠিকই। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের স্কোর ছিল ৯ উইকেটে ৩৬ রান। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতের সর্বনিম্ন স্কোর। অস্ট্রেলিয়া সেই টেস্টে জয়ী হয় ৮ উইকেটে।
তবে পরের টেস্টেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল অজিঙ্ক রাহানের ভারত। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ৮ উইকেটেই।
‘‘এই সিরিজে ভারতের হোয়াইটওয়াশ হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে।’’ বলেছিলেন রিকি পন্টিং। বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বলেছিলেন, প্রথম টেস্টের পারফরম্যান্সের পরে কোহালিবিহীন ভারতের প্রায় কেউই নেই দলকে তুলে ধরার মতো।
আর এক প্রাক্তন অস্ট্রেলীয়র সুর ছিল আবার কয়েক গুণ বেশি চড়া। মার্ক ওয় বলেছিলেন, ভারত ইতিমধ্যেই প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়ে বসে আছে! প্রাক্তন ওপেনার নিশ্চিত ছিলেন এই সিরিজ ৪-০ ফলাফলে হারতে চলেছে ভারত।
ভারতের নাকি একবারই টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা ছিল। এবং সেটা অ্যাডিলেডে। মত ছিল ব্র্যাড হ্যাডিনের। কিন্তু সেখানেই প্রথম টেস্টে বিপর্যস্ত হয় ভারত।
পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার হ্যাডিনের ধারণা ছিল, অ্যাডিলেডেই যখন ভারতের এই অবস্থা হয়েছে, তখন বাকি টেস্টেও তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
প্রাক্তন অস্ট্রেলীয়দের সুরে সুর মিলিয়েছিলেন মাইকেল ভন-ও। অতীতের এই ব্রিটিশ অধিনায়কের বক্তব্য ছিল, অস্ট্রেলিয়ার হাতে টেস্ট সিরিজে চূর্ণবিচূর্ণ হতে চলেছে ভারত।
ব্রিসবেন টেস্টের পরে এ বার ভনের বক্তব্য, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটা অন্যতম সেরা সিরিজ জয়। ভারতীয় ক্রিকেটারদের কুর্নিশ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ভারতের এই পারফরম্যান্স তাঁকে মূর্খ এবং লজ্জিত প্রমাণ করে ছেড়েছে। তবে তাঁর আশা, ভারতের এই ফল দেখে অ্যাশেজ সিরিজের জন্য আশাবাদী হতে পারে ইংল্যান্ড।
সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ছিল সিডনিতে। রবিচন্দ্রণ অশ্বিন এবং হনুমা বিহারীর দৃঢ় ব্যাটিংয়ে এই টেস্ট ড্র করে ভারত। ‘ওয়াল’ রাহুল দ্রাবিড়ের জন্মদিনে ডিফেন্সের বীরগাথা রচনা করেন অশ্বিন এবং বিহারী।
মাটি কামড়ে লড়াই করেন অশ্বিন এবং হনুমা। অশ্বিন ১২৮ বলে ৩৯ এবং হনুমা ১৬১ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন। তাঁদের প্রতিরোধ টেস্ট ম্যাচের সাম্প্রতিক অতীতে ম্যাচ বাঁচানোর সেরা লড়াইয়ের মধ্যে অন্যতম হয়ে থাকে। তাঁদের যোগ্য সঙ্গত দেন পূজারা এবং পন্থ।
সিরিজের চতুর্থ তথা শেষ টেস্ট ছিল ব্রিসবেনের গাব্বায়। মঙ্গলবার গাব্বার মাঠে ইতিহাস তৈরি করলেন অজিঙ্ক রাহানেরা। প্রথম বার এই মাঠে জিতল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার ৩২৮ রানের লক্ষ্য পার করে ৩ উইকেটে এই জয় বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি রইল ভারতের দখলে।
বিরাট কোহালির নেতৃত্বে গত বার সিরিজ জেতা যদি ইতিহাস হয়ে থাকে, তবে তাঁকে ছাড়া চোট বিধ্বস্ত ভারতীয় দলের এই জয় হয়ে থাকল মহাকাব্যিক।
পূজারা, রাহানেরা শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে তফাৎ রয়ে গিয়েছিল তখনও। সেই দূরত্ব মুছে ফেললেন পন্থ। ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ভারতের জয় নিশ্চিত করেই ফেরেন তিনি।
রাহুল দ্রাবিড়ের হাতে তৈরি ভারতীয় দলের ইয়ং ব্রিগেডের হাতে গাব্বার ঘাসে মিলিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার অহঙ্কার। তথাকথিত ক্রিকেট পণ্ডিতদের ‘হোয়াইটওয়াশ ভবিষ্যদ্বাণী’ এখন সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হাস্যরসের খোরাক।