hockey

Hockey in Kolkata: ছেলেগুলো গেল কোথায়, হা-হুতাশ বো ব্যারাক জুড়ে

ভারতীয় হকিতে ব্রোঞ্জ পদকের সঙ্গে জড়িয়ে কলকাতার ভেস পেজের নাম।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২১ ০৮:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

লাল ইটের সাবেক বাড়ি ঘেরা উঠোন। তাতে আঁকা ‘সেন্টার সার্কল’ বা ‘ডি’। এখনও পুরোটা মোছেনি সাদা রেখার দাগ। এই সে-দিনও শক্ত পিচের সেই উঠোন হয়ে উঠত হকির রুদ্ধশ্বাস টক্করের মাঠ। লাল বাড়িগুলোর জানলা, বারান্দা, ছাদে ‘গ্যালারি’। বো স্ট্রিটের বো ব্যারাক তল্লাট মানে যেন আস্ত একটা হকি স্টেডিয়াম। বচ্ছরকার সেই হকি-উৎসবে লেসলি ক্লডিয়াসও খেলেছেন!

Advertisement

অলিম্পিক্স হকিতে ছেলেমেয়েদের শৌর্যে সেই পুরনো দিনেই ফিরছেন ব্রায়ান ন্যাথানিয়েল, ড্যারিল রাইল, রেজিনাল্ড দাস বা ভ্যালেরি আলিরা। অফিসফেরতা গ্লেন্ডা রিজকুককে দেখিয়ে উচ্ছ্বাস, ‘‘ওর বাবা ফ্রেডারিক রোজ়ারিও যে কী দারুণ খেলত! আমাদের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ঘরের ছেলেমেয়েরা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, লন্ডনে পাড়ি দিল। হকিও বাংলা থেকে মুছে গেল!’’

ভারতীয় হকিতে ব্রোঞ্জ পদকের সঙ্গে জড়িয়ে কলকাতার ভেস পেজের নাম। ১৯৭২ মিউনিখ অলিম্পিক্স দলের মিডফিল্ডার শুক্রবার বিকেলে মুম্বই থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘১৯৩০ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত ভারতীয় হকিতে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের দাপট ছিল দেখার মতো। কলকাতা এবং অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের হকি— দু’টোই এক সঙ্গে ফুরিয়েছে।’’ বো ব্যারাকের বাসিন্দাদের আফসোস, ‘‘আমাদের কত ছেলে যে বাংলার হয়ে খেলেছে। এখন ভারতীয় হকি টিমে বাংলার কেউ নেই।’’ ১৯৪৮ থেকে ’৬০ অলিম্পিকের কিংবদন্তি লেসলি ক্লডিয়াস এখন এ শহরের মাটির নীচেই চিরঘুমে। ছোট ছেলে ম্যাকলয়েড স্ট্রিটের বাসিন্দা ব্র্যান্ডন ম্লান হাসেন, ‘‘হকি খেলে চাকরি কই! বাংলায় একটাই অ্যাস্ট্রোটার্ফ! ছেলেরা হকি খেলবে কেন।’’ মল্লিকবাজারের সমাধিক্ষেত্রের বাইরে লেসলি ক্লডিয়াসের হকিস্টিকধারী মূর্তির সঙ্গে থাকা ধাতব বলটা চুরি হয়েছিল! ব্র্যান্ডন ঠাট্টা করেন, ‘‘ওই বলটা লোপাট হল বলেই বোধহয় এতদিন বাদে অলিম্পিক্স হকিতে ছেলেমেয়েরা পুরনো গর্ব একটু উদ্ধার করেছে।’’

Advertisement

এই কলকাতাতেই ব্র্যান্ডনের সেজদা (লেসলির তৃতীয় পুত্র) ববি ‘জুনিয়র ইন্ডিয়া’র হয়ে আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ খেলেন। দুর্ঘটনায় ১৯ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু ভারতীয় হকির এক ট্র্যাজেডি। ভেস পেজের মতে, ‘‘কলকাতা হকিতে এক ধরনের বিশ্বজনীন সুগন্ধ ছিল। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, গোয়ান, পঞ্জাবি— সারা দেশের সেরারা এখানে খেলত। কর্পোরেটগুলোর হকি টিম ছিল।’’

১৯৬০-৭০এর দশকে হকির বড় ম্যাচে ৩০ হাজার লোকও দেখা গিয়েছে। শেষ বেটন কাপ ফাইনালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৫০। পার্ক স্ট্রিটের একটি পরিচিত বাদ্যযন্ত্র বিপণীর কর্তা পিটার রিবেইরো আশির দশকে হাওড়া ইউনিয়নে খেলেছেন। তাঁর মতে, “ওই পর্বেই হকি অস্তাচলে ঝুঁকছিল।" রেঞ্জার্স, সিইএসসিতে এক সময়ে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান খেলোয়াড়দের ঝাঁক দেখা যেত। রেঞ্জার্স ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি নর্ম্যান নাইট বলেন, ‘‘এখন দলে একজনও অ্যাংলো ইন্ডিয়ান নেই। বারুইপুরের গরিব ছেলে সব। টিমটা দ্বিতীয় ডিভিশনে। বাংলার হকির দশাও ঘোর তিমিরে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement