মহেন্দ্র প্রতাপ সিংহ সিঙাড়া তৈরি করছেন। ছবি: সংগৃহীত
গত বছর মার্চ মাসে লকডাউন হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনুশীলন। খেলোয়াড়দের জীবন যেমন অনিশ্চিত হয়ে যায়, তাঁদের যাঁরা গড়ে তুলেছেন, সেই প্রশিক্ষকদের আয়ও বন্ধ হয়ে যায়। বহু জায়গায় বিভিন্ন প্রশিক্ষকরা অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
লখনউয়ের সঞ্জীব কুমার গুপ্ত একজন অভিজ্ঞ ফেন্সার। তবে এখন তিনি কাঠমিস্ত্রি। দিনে ৩০০ টাকা আয় করেন সঞ্জীব। একাধিক পদকজয়ী এই ফেন্সার দীর্ঘদিন ভারতীয় সামরিক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। সঞ্জীবের ১২ বছরের মেয়ে খ্যাতি গুপ্ত জাতীয় স্তরে সোনাজয়ী। কিন্তু তাঁকে পোল্যান্ডে পাঠাতে পারেননি সঞ্জীব। সাহায্য চাইতে হয়েছে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নায়েকের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর থেকে কোনও সাহায্য পাননি বলে জানিয়েছেন সঞ্জীব। স্কুল যাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে খ্যাতির। টাকা জমা দিতে না পারায় পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার ফল পায়নি সে। সঞ্জীবের একটি ১৪ বছরের ছেলেও রয়েছে। সেও ফেন্সিংয়ে পারদর্শী। কিন্তু বাবার অবস্থা দেখে সেই দিকে এগোতে রাজি নয় ছোট দিব্যাংশু।
তিরন্দাজ প্রশিক্ষক মহেন্দ্র প্রতাপ সিংহ এখন সিঙাড়া বিক্রি করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে মহেন্দ্রর। ৮ বছর উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলেছেন তিনি। পেটের দায়ে এখন সিঙাড়া বিক্রি করেন ৪৪ বছরের এই প্রশিক্ষক। মহেন্দ্র বলেন, “মাঝে মাঝে মনে হয় খেলাকে কেরিয়ার বানানোর সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল।” তাঁর ২ ছেলেরও স্কুল বন্ধ। বাবাকে সিঙাড়া বানাতে সাহায্য করে তারা।
একই ছবি মুষ্টিযোদ্ধা প্রশিক্ষক মহম্মদ নাসিম কুরেশির পরিবারেও। ৫৬ বছর বয়সের নাসিম চা বিক্রি করে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেন। ৩২ বছর ধরে ছোটদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন তিনি। লকডাউনের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে নাসিমের ছাত্ররা তাঁকে চা বিক্রি করতে দিতে নারাজ। আর্থিক ভাবে সাহায্য করার প্রস্তাব দেয় তারা। সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন নাসিম। সকলকেই সরকারের তরফে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ক্রীড়া পরিচালক আর পি সিংহ।