প্রতীকী ছবি
আইপিএল নিয়ে প্রত্যাশা মতোই ভারতীয় বোর্ড এসপার-ওসপার সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে গেল। আইপিএলের আট দলের ম্যানেজমেন্টকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতা আয়োজনের কোনও সম্ভাবনা নেই। অনির্দিষ্টকালের জন্য এখন টুর্নামেন্ট স্থগিত। করোনাভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে যে বোর্ড কর্তারা আইপিএল সংগঠন নিয়ে কিছু বলার মতো জায়গায় আসতে পারবেন না, তা-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ নিয়ে গোটা বিশ্বে লকডাউন চলছে। ভাইরাস প্রাণ কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক মানুষের। সব দেশে উড়ান চলাচল বন্ধ। ভারতীয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিব জয় শাহ-সহ শীর্ষ কর্তারা টেলি-বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন যে, এই মুহূর্তে আইপিএল নিয়ে ভাবারও জায়গা নেই। পরিস্থিতি আগে স্বাভাবিক হোক, তার পরে না হয় টুর্নামেন্ট করা নিয়ে ভাবা যাবে।
তবে জানা গিয়েছে, আইপিএল শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে গেলে বেশ বড় পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বোর্ড। এখন পর্যন্ত লকডাউনের প্রভাব বোর্ডের উপরে সে ভাবে পড়েনি। ক্রিকেটারেরা তাঁদের বকেয়া পেয়ে গিয়েছেন। বোর্ডে কর্মরত ব্যক্তিরা বেতন পেয়েছেন। কিন্তু আইপিএল বাতিল হওয়া মানে পরিস্থিতি এত সহজ থাকবে না।
আরও পড়ুন: সেরার সেরা বিশ্বকাপ জেতো, বলছেন শাস্ত্রী
আইপিএল থেকে সিংহভাগ আয়ই শুধু করে না বোর্ড, বিভিন্ন রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাকে অনুদানও দেয় এই লভ্যাংশ থেকে। সে সবই বন্ধ হয়ে যাবে এবং আশঙ্কা তৈরি হবে, বোর্ডের সঙ্গে রাজ্য সংস্থাগুলিও ক্ষতির মুখে পড়বে কি না। ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ বুধবার বলছিলেন, ‘‘আর্থিক মন্দার সময়েও ক্রিকেট বোর্ডে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। তার কারণ ভারতীয় ক্রিকেট বাজার খুবই শক্তিশালী। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য। গোটা পৃথিবীই স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। মন্দার সময় ক্রিকেট বন্ধ থাকেনি। এখন সবই বন্ধ।’’
আশঙ্কা শুধু বোর্ড বা রাজ্য সংস্থার চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছেছে এমন নয়। ক্রিকেটারদেরও ভয় থাকছে। আইপিএল না-হওয়া মানে তাঁদের মোটা বেতনও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। গত আইপিএল নিলামেই ৬৪ জন ক্রিকেটারকে কিনেছে আটটি দল। এর জন্য ১৪০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেছে দলগুলি। শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের কেনা অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স সব চেয়ে দামী ক্রিকেটার হয়েছিলেন। তাঁকে ১৫.৫ কোটি টাকায় কেনে কেকেআর। আইপিএল না-হওয়া মানে ক্রিকেটারদের কেউ কোনও টাকা পাবেন না। কামিন্সেরও সব চেয়ে দামি ক্রিকেটার তকমার কোনও মানে থাকবে না।
আইপিএলের প্রথা অনুযায়ী, দু’টি ভাগে ক্রিকেটারদের টাকা দেয় দলগুলি। টুর্নামেন্ট শুরুর কয়েক দিন আগে প্রথম কিস্তি দেওয়া হয়। বাকিটা ক্রিকেটারেরা পান টুর্নামেন্ট শেষে। করোনা নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ ভাবতেই পারছে না আইপিএল হচ্ছে। এমনকি, ফাঁকা মাঠে ম্যাচ করার ভাবনাও দূরতম কল্পনা মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আইপিএল স্থগিত রাখা ছাড়া উপায়ও নেই সৌরভদের সামনে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ নিজে আনন্দবাজারকে দেওয়া একাম্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেট থাকবে, খেলা থাকবে। এটা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়।’’ বোর্ডের আর একটা বড় চিন্তার কারণ, আইপিএল প্রত্যেক বছরেই হয়। অলিম্পিক্সের মতো চার বছর অন্তর নয়। তাই কত দিন পিছনো যেতে পারে? ২০২১ এসে যাওয়া মানে তো পরের বারের আইপিএলের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে।
আইপিএলের সব চেয়ে বড় অর্থ আসে টিভি স্বত্ব থেকে। ২০১৭ সালেই স্টার ইন্ডিয়া রেকর্ড অর্থে পাঁচ বছরের জন্য স্বত্ব কিনেছিল। তার পরেই আটটি দলকে ১৫০ কোটি টাকা করে গ্যারান্টি অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বোর্ড। সেই অর্থও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
আরও পড়ুন: গাওস্করকে পাল্টা বার্তা শোয়েবের