প্রস্তুতি: বাড়ির ছাদে এ ভাবেই নিয়মিত ফিটনেস ট্রেনিং করছেন সন্দেশ। নিজস্ব চিত্র
ক্রিকেটের শহর চণ্ডীগড়ে জন্মে ফুটবলকে বেছে নেওয়ার মতোই আকর্ষণীয় সন্দেশ ঝিঙ্গানের উত্থানের কাহিনি। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বৈরথের আগে এক প্রস্তুতি ম্যাচে অন্ধকার নেমে আসে তাঁর জীবনে।
হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পরে সুস্থ হয়ে উঠে যখন জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সন্দেশ, তখনই ফের ধাক্কা। করোনা অতিমারির জেরে স্তব্ধ ফুটবল। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। ভারতীয় দলের রক্ষণের অন্যতম স্তম্ভ অবশ্য হতাশা ভুলে নীরবে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতিতে মগ্ন। চণ্ডীগড় থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে সন্দেশ বললেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে রিহ্যাব শুরু করার সময়ই আমি লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলাম। মার্চ মাসে কাতারের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচের আগেই দলে ফিরতে মরিয়া ছিলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু করোনা অতিমারির ধাক্কায় সব ভেস্তে গেল। জানি না কবে আবার মাঠে নামতে পারব।’’
লকডাউনের কারণে মাঠে নামা বন্ধ। তাই বাড়িতেই দু’বেলা অনুশীলন করছেন সন্দেশ। বলছিলেন, ‘‘রোজ তিন থেকে চার ঘণ্টা অনুশীলন করছি। সকালে মূলত কার্ডিয়ো (ফুসফুসের শক্তি বাড়ানোর অনুশীলন) ট্রেনিং করছি। বিকেলে বাড়ির জিমেই পেশির শক্তি বাড়ানোর অনুশীলন করছি। শুধু মাঠে নেমে বল নিয়ে খেলাটাই হচ্ছে না।’’
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের জন্য মুখিয়ে আছি, বলছেন রোহিত
ক্রিকেট ছেড়ে ফুটবলকে বেছে নেওয়ার কারণটা কী? হাসতে হাসতে সন্দেশ বললেন, ‘‘আমার বাবা সরকারি কর্মচারী। আমাদের পরিবারে খেলাধুলোর খুব একটা চল ছিল না। আমাদের চার ভাইয়ের মধ্যে সব চেয়ে যে বড়, সে ক্রিকেটই খেলত। মেজ ও সেজ দাদার সঙ্গে আমি পাড়ার গলিতে ফুটবল খেলতাম।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘চণ্ডীগড়ে গলি ফুটবল বেশ জনপ্রিয়। আমার মেজ দাদা সৌরভের অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন পাড়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতাম। কখনও ম্যাচ প্রতি পাঁচ টাকা পেয়েছি, কখনও আবার দশ টাকা। তবে ফুটবলার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই ভারতীয় দলের খেলা দেখার পরে।’’ কবে? সন্দেশ বললেন, ‘‘আমার বয়স তখন পনেরো। ভারতীয় দলের খেলা দেখে আমার অদ্ভুত অনুভুতি হয়েছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, আমাকেও এক দিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে হবে।’’
সন্দেশের উত্থান ভাইচুং ভুটিয়ার ক্লাব ইউনাইটেড সিকিম থেকে। এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মনে করেন ভাইচুংয়ের জন্যই এই জায়গায় পৌছতে পেরেছেন। বলছিলেন, ‘‘ইউনাইটেড সিকিমের ট্রায়ালে যখন নেমেছিলাম, তখন আমি পুরো সুস্থ ছিলাম না। চোট ছিল। তাই প্রথমবার নির্বাচিত হইনি। ভাইচুং ভাই শেষ পর্যন্ত রাজি হন, আমাকে আরও সুযোগ দেওয়ার জন্য। দীর্ঘ দিন ট্রায়াল চলার পরে আমাকে নির্বাচিত করা হয়। ভাইচুং ভাইয়ের জন্যই ফুটবলার হিসেবে আমি প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি।’’ পাওলো মালদিনির ভক্ত আরও বললেন, ‘‘রেনেডি সিংহ, গৌরমাঙ্গি সিংহ-সহ সব সিনিয়রেরা আমাকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। উদ্বুদ্ধ করেছেন। ওঁদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’
আরও পড়ুন: ধোনি-সৌরভ নয়, গম্ভীরের মতে দেশের সেরা ক্যাপ্টেন...