‘আইপিএল নিয়ে ভাবারই পরিস্থিতি নেই’
Coronavirus in India

খেলা থাকবে, এখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়: সৌরভ

এখনকার পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সত্যিই বোঝার উপায় নেই, আগামী কয়েক মাসে কী হতে যাচ্ছে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৩৬
Share:

মানবিক: করোনা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে মানুষের পাশে সৌরভ। ফাইল চিত্র

হার-না-মানা সেই বাঁ-হাতি আর তেজি অধিনায়কের কণ্ঠস্বর যেন। যিনি বিশ্বাস করেন, করোনার এই অন্ধকার কেটে গিয়ে ফের আলো ফুটবে পৃথিবীর আকাশে। নিজে করোনা-প্রভাবিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সে সব নিয়ে ঢাক পেটাতে চান না মানবিক প্রাক্তন অধিনায়ক। আইপিএল নিয়ে রোজই কিছু না কিছু জল্পনা চলছে। স্পিনারকে স্টেপ আউট করে গ্যালারিতে ফেলার মতোই সে-সব উড়িয়ে দিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। ক্রিকেট, খেলা যে এখন প্রাধান্য পাচ্ছে না, একমাত্র চিন্তা পৃথিবীর সুস্থতা ফেরানো, জানিয়ে দিতে ভুলছেন না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার ফোনে করোনা, ক্রিকেট, আইপিএল নিয়ে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি।

Advertisement

প্রশ্ন: করোনাভাইরাস অতিমারির মধ্যে দাঁড়িয়ে আপনার কী মনে হচ্ছে? কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে?

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: জানি না, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কোনও কিছু নিশ্চিত করে বোঝা যাচ্ছে না। সবাই তো দেখছি বলছে, লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারে। তবে আমি একটাই কথা বলব, এই কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে। আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি, অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে শেষে গিয়ে ঠিকই আলোর দেখা পাওয়া যায়। একটা কথা আছে না, লাইট অ্যাট দ্য এন্ড অফ দ্য টানেল, সেটা তো ঠিকই। পৃথিবী ঠিক আলোর খোঁজ পাবে। গুড উইল হ্যাপেন এগেন। আবার সুদিন ফিরবেই।

Advertisement

প্র: আপনি দেশের সফল ক্যাপ্টেনদের এক জন। কঠিনতম সব মুহূর্ত দেখেছেন ক্রিকেটার হিসেবে। দুর্ধর্ষ সব প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। এই মুহূর্তটাকে কী ভাবে সামলানো যায়?

সৌরভ: আমি বলব, ধৈর্য ধরুন আর বিশ্বাস রাখুন যে, খুব শীঘ্রই সব ঠিক হয়ে যাবে। সুদিন ফিরবেই। ওই যে বললাম, অন্ধকার যতই থাকুক, আলো ঠিক ফুটবেই। হয়তো জীবনের কঠিনতম সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এ রকম আমরা কেউ কখনও দেখিনি। কিন্তু মেঘ কেটে গিয়ে রোদ্দুর নিশ্চয়ই উঠবে। ইংল্যান্ড থেকে বন্ধু ফোন করে বলছে, দিনে এক হাজার জন মারা গিয়েছে। আমেরিকায় আরও বেশি। ইটালি, স্পেন, ফ্রান্স। কী অবস্থা ইউরোপ জুড়ে! বিশ্ব জুড়ে সকলে প্রার্থনা করছে। নিশ্চয়ই আমরা এর থেকে বেরিয়ে আসব।

প্র: ইতিহাসের লর্ডস। আপনার রাজকীয় টেস্ট অভিষেকের মাঠ। ঐতিহাসিক ন্যাটওয়েস্ট জয়। সেই সব সুখস্মৃতি ছাপিয়ে এখন উদ্বেগের ছবি?

সৌরভ: সারা পৃথিবী লকডাউনে চলে গিয়েছে, ভাবা যায়! ক্রিকেট বা খেলা নিয়ে এখন ভাবার অবস্থায় কেউ নেই। এটা খেলা নিয়ে ভাবার সময়ও নয়। এখন সবার আগে হচ্ছে, কী ভাবে গোটা পৃথিবী করোনার গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে। লন্ডনে আমার কাকা থাকেন। ফোনে কথা হচ্ছিল। কাকা বলছিলেন, ঘর ছেড়ে গ্যারাজ পর্যন্ত যাননি কত দিন হয়ে গেল! সিনিয়র সিটিজেন বলে ওঁদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু জানলার পর্দা সরিয়ে দেখেন বাইরেটা। লন্ডনের যে সব রাস্তায় আমরা খেলতে গিয়েও হেঁটে বেড়িয়েছি, সে সবই এখন ফাঁকা। আমেরিকা, ইটালি, স্পেন সর্বত্র একই দৃশ্য। কত দিন ধরে ফ্লাইট ওড়েনি, ভেবে দেখুন। এ রকম পরিস্থিতি কেউ কখনও দেখেছে? কিছু করারও নেই। করোনা থেকে বাঁচতে এটাই পথ।

উদ্যোগ: ইসকনে দৈনিক দশ হাজার মানুষের খাবারের দায়িত্ব নেন সৌরভ।

প্র: মানে লকডাউন?

সৌরভ: তাই তো মনে হচ্ছে। যত দিন না ডাক্তার, গবেষকেরা কোনও প্রতিষেধকের সন্ধান দিতে পারছেন। আমাদের দেশেও আক্রান্ত, মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। তাই এখনও অনেক লড়াই বাকি। আমি একটাই কথা বলব সকলকে। বাড়িতে বসে লকডাউন মেনে চলুন। খুব দরকার না-হলে বাইরে যাবেন না। করোনার সঙ্গে লড়াই করার এটাই উপায়। বার বার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূরত্ব তৈরি করো, শৃঙ্খলটা ভাঙো যাতে করোনার মারাত্মক সংক্রমণ ছড়াতে না পারে।

প্র: আপনি নিজে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন করোনায় প্রভাবিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে। আর্থিক অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ লক্ষ টাকার চাল দিয়েছেন। প্রত্যেক দিন দশ হাজার অভাবী মানুষকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। শুনলাম বলেছেন, আরও যা যা দরকার, আপনাকে জানাতে। ঠিক?

সৌরভ: এ রকম কঠিন একটা সময়ে আমি কী কী করছি, সেটা বড় কথা নয়। সে সব নিয়ে আমি বলতেও চাই না। একটাই কথা বলব। সমাজের কাজে আসার জন্য, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এটাই তো সময়। প্রত্যেক নাগরিকের উচিত নিজের মতো করে সেই দায়িত্ব পালন করা।

প্র: ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ৫১ কোটি টাকা দিয়েছে করোনার ত্রাণ তহবিলে। আপনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রয়োজনে কি চ্যারিটি ম্যাচও করাতে পারেন অর্থ সংগ্রহের জন্য?

সৌরভ: বোর্ড যতটা পেরেছে, আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছে। প্রয়োজনে আবার করবে। ম্যাচ কী ভাবে, কখন করা যাবে জানি না। কারণ চারদিকেই তো সব বন্ধ হয়ে রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হলে ম্যাচ নিয়ে ভাবা যাবে না। তবে এটুকু বলতে পারি, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যা যা করণীয়, বোর্ড করবে।

প্র: কৌতূহল রয়েছে আইপিএল নিয়ে। বিদেশি ক্রিকেটারেরা পর্যন্ত বলছেন, ফাঁকা মাঠে আইপিএল হোক। আপনার কী মনে হচ্ছে?

সৌরভ: সত্যি কথা বলতে কী, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আইপিএল নিয়ে ভাবাও সম্ভব হচ্ছে না। কী করে ভাবব? কোনও দেশে ফ্লাইট উড়ছে না, কোথাও কেউ বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না, কত মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে, ভবিষ্যতে কার কী হবে কেউ জানে না। প্রত্যেকটা দেশের সীমান্ত বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে যে আইপিএল নিয়ে মিটিং করব, আলোচনাটা কী করব? কিছুই তো ঠিক নেই। আগে তো প্রাণ বাঁচুক, তার পরে না হয় দেখা যাবে আইপিএল হবে কি হবে না।

প্র: জানি, এটা খেলা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবতে বসার সময় নয়। তবু জিজ্ঞেস করছি, ধরুন যে-হেতু সব খেলাই বন্ধ, ক্যালেন্ডারে সব ম্যাচই পিছিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে গিয়ে আইপিএল হতে পারে, এমন কথাও কেউ কেউ বলছে।

সৌরভ: এখনকার পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সত্যিই বোঝার উপায় নেই, আগামী কয়েক মাসে কী হতে যাচ্ছে। যদি সব টুর্নামেন্ট বা সিরিজ পিছিয়ে আইপিএলের জন্য জায়গা করা যায়, তা হলে তো খুব ভাল কথা। নিশ্চয়ই তা করা হবে। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সেই উইন্ডোর কথা কী করে ভাবব? খেলোয়াড় পাব কোথায়? অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত বন্ধ। ইংল্যান্ডে দিনে এক হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। ওদের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনায় আক্রান্ত। আরও দু’সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে দিয়েছে। আমেরিকা বলছে, তাদের ইতিহাসের সব চেয়ে কঠিন পনেরো দিনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও প্রত্যেকটা শহরে চূড়ান্ত সতর্কতা। ভারতে করোনায় সব চেয়ে আক্রান্ত মুম্বই। কর্নাটকেও প্রায় একই অবস্থা। চেন্নাইয়ে সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। মোহালিতেও পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক।

প্র: তার মানে এই যে মাঝেমধ্যে খবর আসছে, আইপিএল নিয়ে এই হতে পারে, সেই হতে পারে, এ সবের কোনও ভিত্তি নেই?

সৌরভ: একেবারেই ভিত্তি নেই। শুনুন, আমি আপনার কাছে পরিষ্কার করে দিচ্ছি, ঠিক কোথায় আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি। পৃথিবী আগে সুস্থ হোক, স্বাভাবিক হোক। তার পর না হয় খেলায় ফেরার কথা ভাবা যাবে। ক্রিকেটের জন্য অনেক সময় পড়ে আছে, আগে করোনার এই আক্রমণ থেকে আমাদের উদ্ধার পেতে হবে।

প্র: আপনার কি অন্যান্য দেশের বোর্ড বা আইসিসি কর্তাদের সঙ্গে কোনও কথা হচ্ছে? যেমন ধরুন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে কি না? বা বছরের শেষে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর হবে নাকি পিছিয়ে যাবে? এ সব নিয়েও তো নানা রকম খবর বেরোচ্ছে...

সৌরভ: না, একদমই কোনও কথা হচ্ছে না কারও সঙ্গে। কী-ই বা কথা হবে? কার সঙ্গে কথা বলব? প্রত্যেকটা দেশে করোনা নিয়ে যুদ্ধকালীন পরিবেশ রয়েছে। ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর বছরের শেষের দিকে। এখনও অনেক দেরি আছে। কোন টুর্নামেন্ট পিছবে, কোনটা বাতিল হবে, সে সব পরে দেখা যাবে। আগে তো পৃথিবীর শ্বাস-প্রশ্বাস ফের স্বাভাবিক হোক!

প্র: বাড়িতে আটকে থেকে কি রোজ ফিটনেস চর্চাও করছেন?

সৌরভ: অবশ্যই করছি। আমি রোজ এক ঘণ্টা ট্রেনিং করি। বাড়িতেই যে জিম আছে, সেখানেই করি। মাঝে ওজন বেড়ে গিয়েছিল। ট্রেনিং করে কমিয়েছি। ওটা ধরে রাখতে হবে।

প্র: এই পরিস্থিতিতে মানুষের প্রতি তাঁদের প্রিয় ‘দাদা’র বার্তা কী?

সৌরভ: ধৈর্য ধরে লড়াই করতে হবে সকলকে। বাড়িতে থাকুন, ফিটনেস চর্চা করুন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, নানা রকম নতুন জিনিস চেষ্টা করুন। আর বিশ্বাস রাখুন, ভাল সময় আসবেই। অন্ধকার চলে যাবে। আলোয় ফিরবে আমাদের পৃথিবী।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement