পরিবার: স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে অবসর সময় কাটাচ্ছেন মেরি।
করোনাভাইরাস অতিমারির জেরে টোকিয়ো অলিম্পিক্স প্রায় এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন মেরি কম। একই সঙ্গে জানিয়ে দিতে ভুলছেন না তাঁর সংকল্পের কথাও যে, হাতে পাওয়া এই সময়কে কাজে লাগিয়ে তিনি আরও দারুণ ভাবে নিজেকে তৈরি করবেন। জানিয়ে দিতে ভুলছেন না তাঁর স্বপ্নের কথা, ‘‘অলিম্পিক্সে সোনা জেতাই আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত।’’
করোনা নিয়ে প্রতিনিয়ত যে রকম কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মেরি বলে দিচ্ছেন, ‘‘যা হয়েছে, সকলের জন্য ভালই হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নানা দেশে কত মানুষ মারা যাচ্ছেন। কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন!’’ যোগ করছেন, ‘‘এমন একটা পরিস্থিতিতে আমরা সকলেই উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছি। অলিম্পিক্স পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাই খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্রীড়াপ্রেমী, সকলের জন্য ভাল খবর।’’ ভারতীয় খেলাধুলোর সর্বকালের ইতিহাসে অন্যতম সেরা তারকা মনে করেন, অলিম্পিক কমিটির শীর্ষ কর্তারা এবং জাপানের মন্ত্রী, কর্তারা সব দিক ভেবে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। ‘‘নিশ্চয়ই ওঁরা সকলের কথা ভেবেছেন।’’ দ্রুত যোগ করছেন, ‘‘আমি সব সময় মনে করি, খেলাটা মানুষের জন্য। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই তো খেলা। তাই এমন একটা সময়ে অলিম্পিক্স হোক, যখন সবাই আবার আনন্দ করতে পারবে আর আমরাও খেলার মাধ্যমে সকলকে আনন্দ দিতে পারব।’’ মহাতারকা বক্সারের অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। সব বিতর্কের জবাব দিয়ে তিনি রিংয়েই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে টোকিয়োর জন্য যোগ্যতামান অর্জন করেছিলেন। বলে দিচ্ছেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরেই অলিম্পিক্স নিয়ে নানা কথা শুনছিলাম। কিন্তু আমি নিজেকে তৈরি রাখছিলাম।’’ দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কী, আমি আজ সন্ধে পর্যন্তও তৈরি ছিলাম যত ক্ষণ না অলিম্পিক্স পিছিয়ে যাওয়ার ঘোষণাটা হল।’’
প্রায় এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হল অলিম্পিক্স। এই সময়ে কী করবেন? জানতে চাওয়ায় মেরির জবাব, ‘‘এখন কয়েকটা দিন আমি বিশ্রাম নেব। কারণ, এক্ষুনি তো আর রিংয়ে নামতে হচ্ছে না। বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব। সারা বছর বক্সিং নিয়ে ব্যস্ত থাকায় যেটা পারি না।’’ পরিবারের সঙ্গে অবসর কাটানোর বিশেষ পরিকল্পনাও সেরে ফেলেছেন মাদার মেরি। রাঁধুনি হিসেবে হাত পাকাচ্ছেন তিনি। স্বামী ও সন্তানদের এ দিনই মনিপুরী নিরামিশ তরকারি রেঁধে খাইয়েছেন। আরও নানা সব পদ রান্না করে খাইয়ে তৃপ্তি দিতে চান পরিবারকে। ‘‘নতুন এই ভূমিকা আমি খুব উপভোগ করছি,’’ বলছেন তিনি।
তা বলে মেরি কম শুধু গিন্নি হয়ে বসে থাকেন কী ভাবে? ট্রেনিং বন্ধ রাখার কোনও পরিকল্পনাই নেই। ইনডোরেই ট্রেডমিল করবেন, সাইক্লিং আর স্কিপিং করে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করে যাবেন। যত দিন না করোনা-আতঙ্ক কেটে আবার আগের মতো ফুরফুরে হাওয়া ফিরে আসছে। ‘‘নিজেকে তো তৈরি রাখতেই হবে। আমার স্বপ্ন সফল করতে হবে। অলিম্পিক্সে সোনা জেতার স্বপ্ন।’’ ছ’টি বিশ্ব খেতাব রয়েছে তাঁর। অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতলেও কখনও সোনা পাননি। রিং থেকে বিদায়ের আগে এটাই হয়তো শেষ সুযোগ। টোকিয়ো অলিম্পিক্স যখনই হোক, এটাই তাঁর শেষ অলিম্পিক্স। ৩৭ বছর বয়সে তিন সন্তানের জননী হয়েও এখনও রিংয়ে ঝড় চোলেন। কিন্তু চার বছর পরে অলিম্পিক্সের রিংয়ে আর ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
হয়তো সেই কারণেই বলে উঠলেন, ‘‘পরিশ্রম আমার অস্ত্র, মনের জোর আমার শক্তি।’’ অলিম্পিক্স পিছিয়েছে, মেরি কমের স্বপ্ন, সংকল্প নয়!