প্রতীক্ষা: আবার মাঠে নামতে মুখিয়ে বালা দেবী। নিজস্ব চিত্র
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় রেঞ্জার্স এফসির দেওয়া বিশাল অ্যাপার্টমেন্টে একমাত্র বাসিন্দা এখন বালা দেবী। করোনা-আতঙ্কে স্তব্ধ ফুটবল। বন্ধ অনুশীলনও। সতীর্থেরা যে যাঁর বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের তারকার স্কটল্যান্ড ছাড়ার উপায় নেই।
মঙ্গলবার যখন ফোনে ধরা হল বালা দেবীকে, গ্লাসগোয় তখন দুপুর বারোটা বেজে গিয়েছে। ফিটনেস ট্রেনিং শেষ করে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বললেন, ‘‘ক্লাবের দেওয়া অ্যাপার্টমেন্টে এখন আমিই একমাত্র বাসিন্দা। বাকিরা সকলেই বাড়ি ফিরে গিয়েছে। তাই নিজেকেই রান্না করে খেতে হচ্ছে। তাতে অবশ্য একঘেয়েমি কিছুটা কাটছে।’’ রান্নার সামগ্রীও কিনে আনতে হচ্ছে বালা দেবীকে। কারণ, এই মুহূর্তে তিনি একাই রয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘ক্লাব থেকে আমাদের বলে দেওয়া হয়েছে, বাড়ির বাইরে না বেরোনোর জন্য। তাই দিন তিনেক আগে বেরিয়ে সব কিনে এনেছি। ৩১ মার্চ পর্যন্ত তো এখানেই থাকতে হবে। তার পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।’’
তিন দিন আগে বাইরে বেরোনোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? বালা দেবী বললেন, ‘‘রাস্তা ফাঁকা, শপিং মল, রেস্তরাঁ বন্ধ। গণ-পরিবহণ প্রায় নেই বললেই চলে। ভিড় শুধু ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোয়। সকলেই খাদ্য মজুদ করতে ব্যস্ত। চাহিদার হঠাৎ বৃদ্ধিতে দামও অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে পড়েছি।’’ একা একা মন খারাপ লাগছে না? ভারতীয় মহিলা দলের তারকার কথায়, ‘‘ক্লাবের লোকজন সব সময় খবর নিচ্ছেন। থাকতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আমার মন খারাপ শুধু মাঠে নামতে না পারার জন্য।’’ যোগ করলেন, ‘‘রান্না ও ফিটনেস ট্রেনিং করতে বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। তার পরে মণিপুরে ফোন করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করি। ওরা আমাকে নিয়ে ভীষণই উদ্বিগ্ন। ওদের বলেছি, এখানে আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না। বরং আমি নিরাপদেই আছি। তোমরা বরং সাবধানে থেকো। বাড়ির বাইরে বেরিয়ো না। এ ছাড়া আমার সতীর্থ ও বন্ধুদের খোঁজ-খবর নিই।’’
ভারতে যে ভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বালা দেবী জানতে চাইলেন, ‘‘কী অবস্থা এই মুহূর্তে ভারতের?’’ সোমবার কলকাতায় করোনা-আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে শুনে খানিক ক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তার পরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘যিনি মারা গিয়েছেন, তিনি কি বিদেশ থেকে ফিরেছিলেন? কলকাতায় এই মুহূর্তে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা কত? আশা করি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’ বালা দেবী জানালেন, রেঞ্জার্স কর্তৃপক্ষের তরফে সকলকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। বললেন, ‘‘কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে বেরোনো চলবে না। ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে।’’
করোনা-আতঙ্কের মধ্যেও বালা দেবী ভুলতে পারছেন না এখনও স্টিভন জেরারের সঙ্গে কথা বলতে না পারার আক্ষেপ। বললেন, ‘‘জেরারের কোচিংয়ে রেঞ্জার্স এফসির অনেক খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছি। কিন্তু এখনও ব্রিটিশ কিংবদন্তির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাইনি। সব কিছু স্বাভাবিক হলে জেরারের সঙ্গে আলাপ করতে চাই।’’